× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজেট প্রতিক্রিয়া

কঠিন সময়ে বড় প্রত্যাশা

আবু আহমেদ

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ০০:১৪ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ভালো দিকে যাচ্ছেÑ কথা বলা যাবে না আগামীতে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবিত হয়েছে টাকার হিসাবে এবারের বাজেট অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির দশমিক শতাংশ বিগত কয়েক বছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কিংবা অনুপাত ঘাঁটলে দেখা যাবে, এই ঘাটতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে অর্থাৎ প্রতিবছরই সরকারি ঋণ বাড়ছে সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে লাখ ৬০ হাজার সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে উন্নয়নের বরাদ্দ বাদ দেওয়া হলে যে পরিমাণ অর্থ বাকি থাকে তা রেভিনিউ বাজেট অর্থাৎ শুল্ক সরকারের বিভিন্ন খাতে এবং সামাজিক নিরাপত্তাসহ নানা কল্যাণমুখী কাজে ব্যয় হবে

আমরা দেখছি, রাজস্ব বাজেট সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে অপরদিকে উন্নয়ন বাজেট এই রাজস্ব বাজেটের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না উন্নয়ন বরাদ্দও বড় হচ্ছে কিন্তু উন্নয়ন বাজেটে পরিবর্তনের হার অনেক কম সহজ ভাষায়, উন্নয়ন বরাদ্দের প্রবৃদ্ধি অনেক কম অথচ রাজস্ব বাজেটের আকার প্রতিবছরই বাড়ছে বিষয়টি আমাদের অর্থনীতির জন্য সুখপ্রদ কিছু নয় কারণ রাজস্ব বাজেটে ঘাটতি পূরণ করার জন্য সরকার ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিচ্ছে বিগত কয়েক বছর সরকার এভাবেই বাজেটের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে এমনটা যদি চলতেই থাকে, তাহলে সরকারের ঋণ বাড়বে বছর এই ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে সরকার এভাবে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে বাড়তি চাপ তৈরি হয় ফলে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যায় আর ট্যাক্সবর্ধক নীতি বেসরকারি খাতের জন্য অস্বস্তিদায়ক হয়ে ওঠে প্রস্তাবিত বাজেটে . শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে প্রত্যাশা করা হয়েছে যা উচ্চাভিলাষী বাজারের অবস্থা বিবেচনা করলে এটি একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট তো বটেই যদি প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়, তাহলে বিশাল বড় অর্জন অবশ্যই কঠিন সময়ে বড় প্রত্যাশার বাজেট

অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে মনে হয় না করোনার প্রাক্কালে হয়তো রকম প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সহজ ছিল কিন্তু বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকটের কথা বিবেচনা করলে এই সময়ে তা সম্ভব বলে মনে হয় না কারণ বিগত কয়েক বছরে সরকারের ঋণ বেড়েছে বিশেষত, বৈদেশিক ঋণ তার সুদের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে আগামী বছর এর পরিমাণ আরও বাড়বে তার পরের বছর ঋণ সুদের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বাড়বে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি দশমিক শতাংশ হারে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আমি মনে করি, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করাও বেশ কঠিন কারণ জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছুরই দাম ক্রমেই বাড়ছে এসব জরুরি দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি অন্য অনেক পণ্যের মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত বা উৎসাহিত করে তা ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিনিময়মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি টাকা ডলারের বিনিময়মূল্যের পরিবর্তনের হার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ৮৫ টাকা থেকে ডলারের মূল্যমান ৯০ টাকা, তারপর আরেক দফা বেড়ে ৯৬ টাকা এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া বিনিময় হার অনুসারে এর দাম ১০৭ টাকা ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানের নিম্নমুখীতে মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে ডলার টাকার বিনিময়মূল্যে অসামঞ্জস্য থাকলে মূল্যস্ফীতি দশমিক শতাংশে আনা কোনোদিন সম্ভব নয়

মূল্যস্ফীতি যদি কমেও যায়, তারপরও খুব একটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে না বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে তৈরি হচ্ছে নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থাৎ তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে মানুষের যদি ক্ষয়ক্ষমতা না থাকে, তাহলে মূল্যস্ফীতি হ্রাস করে কোনো লাভ হবে না গত এক বছরে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমায় চলে এসেছে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, তাতে এই পরিসংখ্যান আগামী বছর আরও স্ফীত হবে সমস্যা হলো, বিনিময় হার যদি আমরা স্বাভাবিক রাখতে পারতাম, তাহলে এত সমস্যা হতো না কিন্তু তা তো সম্ভব হচ্ছে না মূল্যস্ফীতি হ্রাসের সুফল তখনই ভোগ করা সম্ভব, যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থাকবে আইএমএফ বলছে, ডলার টাকার বিনিময়মূল্যের ক্ষেত্রে একটি রেট নির্ধারণ করতে হবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এমন কিছু সম্ভব নয় গত ৩০-৪০ বছর ধরে আমরা দেখছি, দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক বাজারে এক ধরনের রেট আর ব্যাংকিং খাতে আরেক ধরনের রেট আইএমএফ এও বলছে, সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়াতে হবে এমনটি কীভাবে সম্ভব? অর্থনীতির গতি যদি হ্রাস পায়, তাহলে রাজস্বের পরিমাণ কমাটাই স্বাভাবিক রাজস্ব মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত কঠিন এই সময়ে বাড়তি ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে গেলে তা আমাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাহয়ে দাঁড়াবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে আগামী ছয় মাসে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে আমি যথেষ্ট শঙ্কিত

বাজেটের আকার বাড়ানো হলে উন্নয়নের পথ গতিশীল করবেÑ এমন ভাবার কারণ নেই বরং সরকারের ব্যয় কমাতে হবে যে খাতে ব্যয় সংকোচনের সুযোগ আছে, সে খাতে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত তবে ব্যাংকে সুদহার কমিয়ে ব্যয় সংকোচন করা যাবে না প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ মেগাপ্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে আমাদের মনোযোগ এদিকে না দিয়ে রাজস্ব বাজেটের দিকে দেওয়া উচিত সরকার যদি ব্যয় না কমায়, তাহলে কোনোভাবেই রাজস্ব বাজেটের সুষ্ঠু বণ্টন করতে পারবে না সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হচ্ছে তা ছাড়া অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় বাড়ছে এই ব্যয় সরকার নির্বাহ করবে কীভাবে? এই ব্যয় সরকার কর আদায়ের মাধ্যমে করবে কিন্তু মানুষের তো কর দেওয়ার ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমছে বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে বিদ্যমান সংকট মোকাবিলা করতে গেলে করের ব্যাপ্তি বাড়ানোর চেষ্টা করলে অর্থনীতি তার স্বাভাবিক গতি হারায় উন্নত রাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এমনটা স্বাভাবিক হলেও আমাদের জন্য তা স্বাভাবিক যুক্তিসংগত নয় উন্নত অর্থনীতির দেশের মাথাপিছু আয় বেশি হওয়া করের ব্যাপ্তি বাড়ালে অর্থনীতির গতি অতটা প্রভাবিত হয় না দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের মাথাপিছু আয় করসীমার আওতায় আনা যায় না কিন্তু করের ব্যাপ্তি বাড়ানো মানে এই ৫০ শতাংশ মানুষকেও অন্তর্ভুক্ত করা আইএমএফ এক্ষেত্রে একটু নিরাপদ অবস্থানে থাকতে চায় তারা মূলত দুটো জিনিস চায়Ñ একটি হলোÑ সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে যেন তাদের ঋণ ফেরত পায় আরেকটি হলোÑ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব? রিজার্ভ বাড়ার কোনো সম্ভাবনাই তো দেখা যাচ্ছে না ইতোমধ্যে রপ্তানি আয় কমে গেছে এই মুহূর্তে রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য বাড়তি প্রচেষ্টা অর্থনীতিতে খরা বাড়বে

প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রচ্ছন্নভাবে আইএমএফের দেওয়া শর্ত অনুসরণের এটি একটি প্রবণতা এখানে লক্ষ করা যায় আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংক আমাদের কখনও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেবে না কিন্তু কৃষিই আমাদের মূল চালিকাশক্তি করোনার সময় একমাত্র কৃষি খাত সচল ছিল বলেই আমরা ভয়ংকর সময় পার করতে পেরেছি আইএমএফের কথা শুনে কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানোর কোনো যুক্তি থাকতে পারে না বরং কৃষি খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত এক্ষেত্রে অন্য কোনো খাতে সুযোগ পাওয়া গেলে বরাদ্দ কমিয়ে তা কৃষি খাতে দেওয়া যেতে পারে সরকারকে অপ্রয়োজনীয় সব ব্যয় কমিয়ে ফেলতে গাফিলতির সুযোগ নেই আমাদের অর্থনীতি বড় একটি সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে সব সংস্থার কথা শুনতে গেলে আমাদের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে এই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্বাভাবিক করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে যদি বিনিময়মূল্য স্থির না থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারী কিংবা ক্রেতা কেউই আত্মবিশ্বাস পাবেন না ফলে বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে ভুলে গেলে চলবে না, মুদ্রার মান বাজার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মুদ্রার দাম বাড়লে পণ্যের দামও নানাভাবে প্রভাবিত হয় তাই বিষয়টি নিয়ে আরও ভাবতে হবে


  • অর্থনীতিবিদ  শেয়ারবাজার বিশ্লেষক; সাবেক অধ্যাপকঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা