× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপসম্পাদকীয়

বড় শহরগুলোতে কেন জনচাপ কমাতে হবে

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩ ১২:৫১ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

ঢাকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কারণে অনেক সময় নগরবাসীর মনে তিক্ততা তৈরি হয়। গাছ কাটা, পরিবেশ ধ্বংস, অগ্নিদুর্ঘটনা, গণপরিবহনে যানজট এসব নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। জনগণ অন্যায্য কিছু বলেন না এবং কামনাও করেন না। জনবহুল দেশ আমাদের। মানুষের ভিড়ে চাপা পড়ে গেছে স্বপ্নসাধ। এমনকি বাঁচার উপায়ও যেন ধীরে ধীরে উধাও হতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে ঢাকার বাতাস ছিল সবচেয়ে বেশি দূষিত। ওইদিন এ অঞ্চলের বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা ছিল ২৬৩ দশমিক ১ এবং বাতাসের মান ছিল ৩১৩। যা সব বয়সি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আইকিউ এয়ারের পূর্বাভাস বলছে, আগামী দিনেও ঢাকায় বাতাসের মানে উন্নতির সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ আগামী সপ্তাহেও এ শহরের বায়ু থাকবে অস্বাস্থ্যকর।

গত ১১ দিন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শহর ছিল রাজধানী ঢাকা। নতুন বছর শুরুর পর এখনও একদিনও স্বাস্থ্যকর বায়ু পায়নি ঢাকাবাসী। গত মাসের ৩১ দিনের মধ্যে ২২ দিনেই ঢাকা শহরের বায়ু ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ছিল। আর বাকি ৯ দিন ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’। ফলে প্রতিদিনই বিষে ভরা বাতাস শহরবাসীর নাকে ঢুকেছে। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যগত সমস্যাও। ৩০ মে সকালে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই- বায়ুর মানসূচক) স্কোর ২৯১, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ঢাকা থেকে ১০০ কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা করাচির বায়ুর মান ছিল ১৯১। গত সোমবারও ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ২৬৩।

দূষণের প্রভাব মারাত্মক। লোকালয়ের শিশুদের ঝুঁকি, বড়দের চেয়ে বেশি। গরম ও অন্যান্য জলবায়ু-সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বড়দের তুলনায় তাদের কম। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পুষ্টিহীনতায় ভোগারও ঝুঁকি থাকে এ শিশুদের। দুর্যোগে স্কুল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জনবহুল সমাজে মনিটরিং অসম্ভব। তার চেয়েও বড় কথা, নিয়ম মানানো। কিন্তু বিষয় যদি হাতের বাইরে চলে যায় মানুষের প্রাণ ও জীবনযাপন বিঘ্নিত হবে। যার কুফল এখন হাতে হাতে মিলছে। কী মারাত্মক! ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি ৩১৭ দিন ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে ঢাকার বাতাস ১৬ গুণ বেশি দূষিত থাকছে। প্রকৃতিই হচ্ছে ভারসাম্য। আমাদের বড় বড় শহরগুলোয় মানুষের চাপে প্রকৃতি বিপন্ন। সবুজ নাই। মাঠ নাই। খোলা আকাশ উধাও হওয়ার পথে। যতবার দেশে যাই বিমান অবতরণের সময় জানালায় চোখ রাখলেই ভয় লাগে। অক্টোপাসের মতো দালানকোঠা ঘিরে ধরেছে ঢাকা নগরীকে। চারদিক থেকে দানবের মতো ঘাড় উঁচু করে উঠে আসা দালানের চাপে অসহায় এই নগরীর ভবিষ্যৎ কী?

মন্ত্রী-আমলারা যে ঘন ঘন বিদেশে যান, তারা নিশ্চয়ই দেখেন কীভাবে সেসব দেশের রাজধানীর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নাই। কুয়ালালামপুর থেকে অনতি দূরে পুত্রজায়া নগরীতে সরকারি দপ্তর সরিয়ে নিয়ে মালয়েশিয়া যা করেছে, তাও করি না আমরা। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ঢাকার উপকণ্ঠে বা একটু দূরে সরালেও চাপ কমত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর দীর্ঘমেয়াদি সব কাজের ঠেলায় এদিকে তাকানোর সুযোগ নাই কারও। আসলে কেউ কাউকে ঘাঁটাতে নারাজ। সব দপ্তরেই সরকারি দলের নেতাকর্মীরা আছেন। তারা কি ঢাকা ছেড়ে বাইরে যাবেন? কখনোই না। ফলে নীরব আঁতাতের ঘা খেয়ে ধুঁকছে আমাদের দেশের রাজধানী।

বাংলাদেশে পরিবেশের অবক্ষয় ও দূষণ একটি বড় সমস্যা। উপর্যুপরি বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু ও আবহাওয়ার অস্থিরতাসহ অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী। এসবের মূলে মানুষের কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী। যথেচ্ছ বৃক্ষ নিধন, অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, জোরালো শব্দের হর্ন, আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা ও ইটভাটার অবস্থান ইত্যাদি পরিবেশকে দূষিত করছে। পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠী নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে পড়েছে সারা বিশ্বের মানুষ। বিশেষত গত ২০ বছরে এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে আমেরিকা মহাদেশেও। বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিআরআই)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হন্ডুরাস, তার পরেই আছে মিয়ানমারের নাম। চতুর্থ অবস্থানে আছে নিকারাগুয়া, পঞ্চম ফিলিপাইন ও ষষ্ঠ অবস্থানে বাংলাদেশ (সূত্র উইকিপিডিয়া)।

দেশের মানুষের রুটি-রোজগার আর জীবনের জন্য দেশের ভেতরে বড় শহরেই থাকতে হয়। আমাদের অযুত আত্মীয়স্বজন সবার কেউ না কেউ আজ এই দূষণের শিকার। মজার ব্যাপার হলো, যারা কথায় কথায় দেশকে সিঙ্গাপুর হংকং বানিয়ে ফেলেন তারাও থাকেন এসব শহরে। হয়তো অনেকের পরিবার সন্তান-সন্ততি থাকে না দেশে। কিন্তু তাতে কি, তাদের জীবন তো দূষণেই বন্দি! তারা কেন এগিয়ে আসেন না? বাংলাদেশের উন্নয়ন সূচকগুলো যেমন আশাজাগানিয়া, তেমনি অন্যদিকে এসব বিষয় হতাশার। কবে কে কখন কঠোর ভূমিকা নিয়ে এই দূষণরোধে এগিয়ে আসবেন জানি না। তবে ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোর ওপর চাপ কমানো এখনই প্রয়োজন। নয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।


  • সিডনি প্রবাসী লেখক

 

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা