× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

আলোকিত মানিক মিয়া

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩ ১২:৪৬ পিএম

আপডেট : ০১ জুন ২০২৩ ১৫:৩২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

‘আমার মানিক ভাই’ শিরোনামের একটি লেখায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানে বিশেষ করে পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য ইত্তেফাক যা করেছে তা কোনো খবরের কাগজই দাবি করতে পারে না। এদেশ থেকে বিরুদ্ধ-রাজনীতি উঠে যেত যদি মানিক মিয়া এবং ইত্তেফাক না থাকত। ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল জারির পর থেকে হাজার রকমের ঝুঁকি লইয়াও তিনি এদেশের মানুষের মনের কথা তুলে ধরেছেন।’ সাংবাদিকতা এবং সংবাদপত্র জগতে কিংবদন্তি তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে বঙ্গবন্ধু বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করতেন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার যে প্রত্যয় বঙ্গবন্ধু তার মধ্যে দেখেছেন, সেই দৃঢ়তাই তাকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। চারিত্রিক এই দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি স্বীয় প্রজ্ঞা ও সুপরামর্শ দিয়ে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে গতি দিয়েছেন। ছয় দফার প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ সমর্থন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘ছয় দফা আন্দোলন যে এত তাড়াতাড়ি গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে এখানেও মানিক ভাইয়ের লেখনী না হলে তা সম্ভব হতো কি না, তাহা সন্দেহ।’

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জন্ম ১৯১১ সালে। ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বরিশালের ভান্ডারিয়া বর্তমানে পিরোজপুর জেলায় অবস্থিত। শৈশবেই মাকে হারানো মানিক মিয়ার পড়ালেখার শুরু গ্রামের পূর্ব ভান্ডারিয়া মডেল প্রাইমারি স্কুলে। উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ার সময় থেকেই তার মাঝে ফুটে উঠতে থাকে নেতৃত্বগুণ। শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবন শুরু করেন পিরোজপুর জেলা সিভিল কোর্টে। এখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে কোর্টের চাকরি ছেড়ে যোগ দেন কলকাতা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অফিস সেক্রেটারি হিসেবে। তারই উদ্যোগে ১৯৪৬ সালে প্রকাশ পায় আবুল মনসুর আহমেদের সম্পাদনায় ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেহাদের পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারি হিসেবে। এ পত্রিকার মাধ্যমেই গণমাধ্যমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। দেশভাগের পর পত্রিকাটি ঢাকায় আনার চেষ্টা করলেও পূর্ব পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। একসময় পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়, মানিক মিয়াও ঢাকায় চলে আসেন।

১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের বিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। একই বছরে এই রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক-এর। পত্রিকাটির আনুষ্ঠানিক সম্পাদক হন আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি পত্রিকাটি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করলে ১৯৫১ সালের ১৪ আগস্ট দায়িত্ব নেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। ১৯৫৩ সালে তার সম্পাদনাতেই সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রূপান্তরিত হয় ইত্তেফাক। সামরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মানিক মিয়া ১৯৫৯ সালে জেলে যান, এক বছর কাটাতে হয় জেলে। ১৯৬৩ সালে আবারও গ্রেপ্তার হন। এ সময় প্রকাশনা নিষিদ্ধ হয় দৈনিক ইত্তেফাকের। বাজেয়াপ্ত করা হয় নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস। বন্ধ হয়ে যায় মানিক মিয়ার প্রতিষ্ঠিত ঢাকা টাইমস এবং পূর্বাণীও। গণ-আন্দোলনের মুখে সরকার প্রকাশনার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করলে ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক আবারও ফিরে আসে। তিনি মোসাফির ছদ্মনামে উপসম্পাদকীয় লিখতেন।

১৯৬৬ সালে কারাগারে আটক থাকার সময়েই অসুস্থ হন। কারাগার থেকে মুক্তির পরও অসুস্থতা রয়েই যায়। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই প্রাতিষ্ঠানিক কাজে ১৯৬৯ সালের ২৬ মে রাওয়ালপিন্ডি যান। এখানে ১৯৬৯ সালের ১ জুন রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পাকিস্তান যাবার আগে তিনি পেয়েছিলেন রহস্যময় একটি চিঠি। যাতে জানানো হয়, ‘পাকিস্তানে তাকে মেরে ফেলা হবে’। সেই যাওয়াই তার কাল হয়। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘মানিক ভাই গেলেন কিন্তু ফিরে এলেন নিষ্প্রাণ দেহে। মনে হয় শহীদ সাহেবকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, পিন্ডির ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে রহস্যজনকভাবে ডেকে নিয়ে হয়তো মানিক ভাইকে হত্যা করা হয়েছে সেভাবেই।’

 

 

  • কবি ও সাংবাদিক

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা