× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না

সম্পাদক

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ১৩:২৩ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

চীনের নেতা মাও সেতুং লিখেছিলেন, কোনো কোনো মৃত্যু থাই পাহাড়ের চেয়েও ভারী। আমাদের সমাজে মাও সেতুংয়ের ওই মন্তব্য উদ্ধৃত করার মতো মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটেই চলেছে। ২৯ মে রাজধানীর মহাখালীর রেলগেট এলাকায় নির্মাণাধীন উড়ালসড়ক থেকে এক শিশুর মাথায় রডবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ায় ফের চীনের ওই নেতার মন্তব্যটি স্মরণ করিয়ে বেদনাকাতর করেছে। মর্মন্তুদ এমন ঘটনার জন্য নির্মাণ প্রকল্পে ঠিকাদারি সংস্থা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট তদারককারীদের খামখেয়ালিপনা যুগপৎ জননিরাপত্তায় উদাসীনতা দায়ী বলে মনে করি। আমরা শোকাহত। আমরা ক্ষুব্ধ। এই মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারে না। একই সঙ্গে প্রশ্ন রাখতে চাই, দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় আর কত জীবনপ্রদীপ এভাবে নিভে যাবে। আমাদের স্মরণে আছে, অতীতে রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট ও উত্তরায় উড়ালসড়কের গার্ডার পড়ে হতাহতের ঘটনা এক রক্তাক্ত হুশিয়ারি দিলেও নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং সরকারের তদারকদের চৈতন্যোদয় ঘটেনি। বড় নির্মাণ প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদারি সংস্থা কতটা অনিরাপত্তা-অসতর্কতায় কাজ করছে, সর্বশেষ মহাখালী রেলগেটের ঘটনাটি এরই সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করেছে।

৩০ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পথচারী শিশুটি একখণ্ড ভারী রডে বিদ্ধ হয়ে রেললাইনে পড়ে ছিল। অন্য একজন পথচারী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মহাখালীতে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তার প্রাণরক্ষা করা যায়নি। ওইদিন দুপুরে শিশুটি মারা যায়। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, রেলপথের যেখানে শিশুটি পড়ে ছিল, তার ওপরে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ চলছিল এবং একই জায়গায় আরও একটি রড পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আমরা জানি, এই রেলপথ দিয়ে প্রতিদিন অনেক ট্রেন চলাচল করে এবং পথচারীরাও যাতায়াত করেন। বিমানবন্দর থেকে মগবাজার পর্যন্ত এলাকার উড়ালসড়কের কাজ চলমান। এই উড়ালসড়কের বেশিরভাগ অংশ গেছে রেললাইনের এবং কিছু এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাথের ওপর দিয়ে। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, ভারী যন্ত্রপাতি চালিয়ে নির্মাণকাজ চালালেও নিরাপত্তা বেষ্টনী, নিরাপত্তা সংকেত কিংবা কর্মী রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা কোথাও দৃশ্যমান নয়। আমাদের স্মরণে আছে, গত বছরের আগস্টে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র অভিযোগ করেছিলেন, ব্যস্ত সড়কের ওপর কোনো ধরনের নিরাপত্তা না রেখে ক্রেন দিয়ে ভারী মালপত্র পরিবহন এবং উঠানোর সময় নিচ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলছে এমনটি দেখে তারা শঙ্কিত। রাষ্ট্রের দুজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির এমন উদ্বেগ রাজধানীর অসংখ্য মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয়। তবে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ আর সরকারের দায়িত্বশীলদের উদ্বেগ প্রকাশের মধ্যে নিশ্চয় তফাত আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এরইবা সুফল কী। মালিবাগ এবং উত্তরায় দায়িত্বহীনতার কারণে যে মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছিলÑ এরপর সরকারের মন্ত্রীরাও বলেছিলেন, বড় নির্মাণ প্রকল্পে দায়িত্বহীনতা-অনিয়মের ছায়া সরানো হবে। কিন্তু সেই ছায়া আজও সরেনি বরং ক্রমেই তা প্রশ্নের পর প্রশ্ন তুলছে। সরকারের দায়িত্বশীলরা কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণের পরও যখন এমন পরিস্থিতি জিইয়ে থাকে তখন তাকে বলতেই হয় বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া

রাজধানীতে মেট্রোরেল ও উড়ালসড়কের চলমান নির্মাণকাজের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জননিরাপত্তার ব্যাপারে যেন কোনো দায়ই নেই। একই সঙ্গে এই প্রকল্পগুলোর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ দেখাশোনায় যে দায় রয়েছে, তাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। উত্তরায় ঘটনাটি ঘটেছিল প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিঁড়ে পড়ায়। তদন্তে জানা গিয়েছিল, ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী অর্থাৎ হেলপার। এমন নজির আরও আছে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, এসব ক্ষেত্রে উদাসীনতার কোনো অবকাশ নেই। একের পর এক মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটবে অথচ এর কোনো প্রতিবিধান নিশ্চিত হবে না, তা তো হতে পারে না। যখন এই সম্পাদকীয়টি লেখা হচ্ছে তখন পর্যন্ত হতভাগ্য শিশুটির কোনো পরিচয় মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, সে পথশিশু। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার পরিচয় মানুষ এবং সে রাষ্ট্রের নাগরিক। নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় যাদের তারা যদি দায় ভুলে থাকেনÑ তাহলে অপ্রীতিকর ঘটনার রাশ টেনে ধরা দুরূহ। আমরা এ ঘটনার অনুসন্ধানক্রমে দ্রুত প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানাই। প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদবে, তা হতে পারে না। প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা