× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপসম্পাদকীয়

পরিবেশ সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ

ড. হারুন রশীদ

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ১৩:১৭ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

করোনা মহামারিকালে সবকিছু অচল হয়ে পড়ে। ভাইরাসটি ছোঁয়াচে হওয়ায় নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। ফলে লকডাউন, শাটডাউনের মতো সিদ্ধান্তে যেতে হয় কোনো কোনো অঞ্চল বা দেশকে। বন্ধ হয় গাড়ি-ঘোড়া। এমনকি বিমান চলাচলও। কোনো কোনো দেশ সীমান্তও সিলগালা করে দেয়Ñ যাতে ভাইরাসজনিত রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে না পারে। মহামারিতে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়ে। অর্থনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু এরপরও নতুন একটি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে মানুষজন। সেটি হচ্ছে প্রকৃতির আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পাওয়া। এই দুই-তিন বছরে মানুষের সর্বগ্রাসী অত্যাচার থেকে অনেকটাই রক্ষা পেয়েছে প্রকৃতি। জনবহুল পর্যটন স্পটগুলো জনশূন্য হওয়ায় সেখানকার পশুপাখি নিরাপদে ঘুরে বেড়িয়েছে। কলকারখানা বন্ধ থাকায় দূষণ কমেছে। কমেছে কার্বন নিঃসরণ। শুধু চীনেই ২০ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে ১০ শতাংশ। ফলে জলবায়ু বিশুদ্ধ হয়েছে। প্রাণভরে শ্বাস নিতে পেরেছে মানুষ। ধুলায় ধূসর ঢাকা, দিল্লি ও বেইজিংয়ের আকাশ পরিষ্কার হয়েছে। স্বচ্ছ পানিতে ডলফিনের ঘোরাফেরা দেখা গেছে।

করোনার সময়ে মানুষ সবচেয়ে ভুগেছে অক্সিজেন সংকটে। মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় গাছ কাটাও কমে যায়। ফলে প্রকৃতিতে বেড়ে যায় অক্সিজেনের সরবরাহ। পৃথিবী ভরে যায় সবুজে। কোভিড ১৯-এর অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে প্রকৃতির ওপর অত্যাচার বন্ধ করে তার কাছে ফিরে যাওয়া। সহাবস্থান না করে অত্যাচার চালালে মানুষও যে টিকতে পারবে নাÑ এটিই যেন বলে দিচ্ছে করোনা মহামারি। সে কারণে পরিবেশ রক্ষা এবং সচেতনতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সংকট আরও ঘনীভূত হবে। বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। অথচ মাত্র এক মিটার উচ্চতা বাড়লেই দেশের সাড়ে ১৭ ভাগ ভূমি সাগরতলে হারিয়ে যাবে চিরতরে। ভাবা যায়! এমনিতেই জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ বাংলাদেশ। সাগরতলে ভূমি হারিয়ে গেলে কয়েক কোটি লোক পরিবেশ আর জলবায়ু শরণার্থী হবে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে যে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনও সাগরতলে তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশের কৃষি, জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হবে মারাত্মকভাবে। এ অবস্থায় টেকসই পরিবেশ বজায় রাখাই বিরাট চ্যালেঞ্জ।

পানিদূষণ, বায়ূদূষণ, আর্সেনিকদূষণ, মাটিদূষণ আরও জটিল করে তুলছে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশ সমস্যাকে। রাজধানী ঢাকা এখন নানা দিক থেকেই বাস অনুপযোগী শহর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোকজনকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। যত্রতত্র যখন-তখন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলাবালির। সকালবেলা বাসাবাড়ি থেকে বের হয়ে লোকজনকে রীতিমতো ধুলায় গোসল করে ফিরতে হয়। ওয়াসা, ডেসা, তিতাসÑ এক সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে কাজ শেষ করে তো আরেক সংস্থা শুরু করে। এতে যেমন রাষ্ট্রের অর্থের শ্রাদ্ধ হয়, তেমনি মানুষের ভোগান্তিও বাড়ে। এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের কাজের কোনো সমন্বয় না থাকায় যুগ যুগ ধরে চলছে এই জগাখিচুড়ি অবস্থা। মানুষের লোভ ও লালসা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। সর্বগ্রাসী মানসিকতার কাছে হার মানছে আইন-কানুন, মানবিকতাÑ সব। ফলে প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ মানুষের। প্রতিবছর পাহাড় ধসে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা।

পরিবেশদূষণের বিষয়টি ভয়াবহ। রাষ্ট্র ও সমাজের কেউই রেহাই পায় না। এই দূষণ রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যেও থাকে না। গোটা অঞ্চল তথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। গত ৩১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংকের ‘কান্ট্রি ক্লাইমেট ও ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৩২ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী পরিবেশদূষণ। দূষণে প্রতি ১ লাখের মধ্যে ১৬৯টি শিশু অকালে মারা যায়। বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ মানুষ বেশির ভাগ সময় দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকে এবং পানিদূষণের কারণে ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগ বাড়ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেশের চারটি অঞ্চলকে পরিবেশের দিক থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। এগুলো হলো যথাক্রমে বরেন্দ্র, পার্বত্য চট্টগ্রাম, উপকূল ও হাওর এলাকা। পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বিচার পাহাড় ও বন ধ্বংস করে নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। নদীর পানির প্রবাহ বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ থাকতে হবে। হাওর অঞ্চলে প্রায় প্রতিবছরই বন্যা ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরিবেশের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল। প্রায় প্রতিবছর সেখানে ঘূর্ণিঝড় হানা দেয়। লবণাক্ততার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবিকাও আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক তথ্য হলোÑ পরিবেশদূষণ আমাদের উন্নয়নের গতিও থামিয়ে দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয় এবং পরিবেশদূষণে জিডিপির ৮ শতাংশ খোয়া যায়। এক সময় ঢাকা শহর থেকে পরিবেশদূষণকারী পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আবার তা ফিরে এসেছে। পরিবেশদূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সব উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশ সহায়ক। উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ বন, নদী, জলাভূমি, সৈকত ধ্বংস করা যাবে না। শিল্পকারখানা করার ক্ষেত্রে পরিবেশ আইন শতভাগ মেনে চলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে। তাপমাত্রা ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে দেশে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা ইত্যাদির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি। পাল্টে যাচ্ছে ঋতুর ধারাক্রম। ফলে মানুষের চিরচেনা স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহই আজ ব্যাহত। প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণিকুলের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পরিবেশবিষয়ক সাংবাদিকতা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। লেখার মাধ্যমে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশবাদী সংগঠন নিয়ে বেশি করে খবর প্রকাশ করতে হবে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে পরিবেশ সাংবাদিকতার গতি-প্রকৃতি ও পরিধি বাড়াতে হবে এবং তা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই।


  • সাংবাদিক 
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা