× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পলিটিকোর বিশ্লেষণ

এখন কোন পথে হাঁটবেন এরদোয়ান

এলসিন পোয়েরাজলার

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩ ১২:১৫ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

টানা দুই দফায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় থাকার পর ফের তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তার রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রমাণ রাখলেন। রবিবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের মাধ্যমে তিনি যেন পশ্চিমা বিশ্বকে নতুন বার্তা দিলেন। এ জয়ের পর তুরস্কের জনগণের কাছে নতুন একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছেÑ এখন কোন পথে এগোবেন এরদোয়ান? কৌশলগত দিক বিবেচনায় এরদোয়ান ন্যাটো শক্তির অন্যতম প্রধান। ইউরোপের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগ সাধনে তুরস্কের গুরুত্ব নতুন করে বলার কিছু নেই। বলা বাহুল্য, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে এরদোয়ানের প্রভাব এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তুরস্কে মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনীতির বিভিন্ন খাত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। আপাতত এরদোয়ানের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ তার অভ্যন্তরীণ সংকটের সমাধান।

সদ্যসমাপ্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এরদোয়ানের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের পর তিনিই তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদি শাসক। এ নির্বাচনে এরদোয়ান ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতার ব্যবহারে কোনো কার্পণ্য তাকে করতে দেখা যায়নিইউরেশিয়া গ্রুপ কনসালট্যান্সির ইউরোপীয় পরিচালক এমরে পার্কার বলেন, ‘২০০১ সাল থেকেই দেশটিতে অর্থনৈতিক টানাপড়েন একটি বড় সমস্যা। সদ্যসমাপ্ত এ নির্বাচন থেকে এটুকু স্পষ্ট, রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেও অস্থিতিশীল সময়ে তুরস্কের এই রাজনীতিক বিজয় ছিনিয়ে আনার সক্ষমতা রাখেন।তার এ বক্তব্য অর্থবহ। কারণ দুই দশক আগে এরদোয়ান নিজেও অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তুরস্কের অবস্থা তখন থেকে এখন অনেক জটিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, রাষ্ট্রের সম্পদের ওপর এরদোয়ানের কর্তৃত্ব থাকায় তিনি এই সময়ে বিজয়ী হয়েছেন। তারা এও বলেন, তিনি তুরস্ককে ক্রমান্বয়ে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করছেন। গণমাধ্যম, বিরোধী দলের নেতাকর্মী এমনকি সিভিল সোসাইটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর তার প্রভাবও এখানে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এরদোয়ান কোন পথে এগোবেনÑ এ নিয়ে বিস্তর কথা আছে। এরদোয়ান বিজয়ী হওয়ার পর অনেকেই মনে করছেন আগামী পাঁচ বছরে তুরস্কে গণতন্ত্রচর্চার পথ একেবারেই রুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এরদোয়ানের সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্ততা আমাদের অন্য বার্তা দেয়প্রায় ২০ বছর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে তিনি জনগণকে নানাভাবে সন্তুষ্ট রাখতে পেরেছেন। অনেকে মনে করেন, বিগত ২০ বছরে তুরস্কে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক অঙ্গনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ফলে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পরও পশ্চিমা রাষ্ট্রের সঙ্গ দরকষাকষির সুযোগ তুরস্কের আছে।

বিজয়ের পর এক ভাষণে এরদোয়ান জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে তিনি তার শাসনপ্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন আনবেন না। তিনি এও জানান, কুর্দিশ নেতা সালাহাত্তিন ডেমিরতাসকে জেলেই রাখবেন। অথচ ইউরোপিয়ান কোর্ট অব রাইট জানিয়েছেন, এই নেতাকে মুক্ত করে দেওয়া উচিত। ভূরাজনৈতিক সমস্যা হয়তো তিনি সহজেই সামাল দেবেন। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা চাইলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন না। তুরস্কের অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দের দিকে ঝুঁকছে। নিকট অতীতের তুলনায় তুরস্কে মূল্যস্ফীতির হার এখন সর্বাধিক। গত বছর মূল্যস্ফীতি ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দুর্বল মুদ্রা হওয়ায় ডলারের তুলনায় এর মূল্যমান অনেক কমে যায়। এমনকি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও কমে আসছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমান আরও কমবে কি না? নির্বাচনের পর বাজারব্যবস্থা যেহেতু আবার সচল হয়ে উঠছে, তাই এমন সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

এখানেই সমস্যার শেষ নয়এরদোয়ান কি এবার আরও গোঁড়া পদ্ধতিতে এগিয়ে যাবেন? নাকি আগের মতোই ব্যয় চালিয়ে যাবেন এবং সুদ বৃদ্ধির হার বাড়ানোর বিষয়টিকে খুব একটা পাত্তা দেবেন না? অর্থনীতিবিদদের দাবি, এ পদ্ধতি বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব নয় এবং এর ফলে জাতীয় অর্থনীতি আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে। আঙ্কারায় বিজয়ীর ভাষণ দেওয়ার সময় এরদোয়ান অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি সুদহার কম রাখার পক্ষে। এভাবেই মূল্যস্ফীতি কমাতে পারবেন বলে তার বিশ্বাস। অর্থনীতিবিদরা অবশ্য এ ধারণাটি পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

সম্ভবত ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে তুরস্কের অবস্থান বিবেচনা করেই এরদোয়ান এ জেদ আঁকড়ে রেখেছেন। এরদোয়ানের শাসনামলে তুরস্ক বৈশ্বিক নানা ঘটনার মুখ্য প্রভাবক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এরদোয়ান রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেননি। কিন্তু কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের শস্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেনন্যাটো সদস্য হিসেবে তুরস্ক ফিনল্যান্ডকে নতুন সদস্য হিসেবে সংযুক্ত করেছে। অথচ সুইডেনের সদস্যপদের আবেদন তারা ঝুলিয়ে রেখেছে। তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক ভালো না। কারণ ইউরোপ তুরস্কে এরদোয়ানের শাসন পদ্ধতিকে ভালো চোখে দেখে না। তা ছাড়া লাখ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীকে আশ্রয়ের বিষয়টিও তারা ভালোভাবে নিতে পারেনি। এমন অনেক কারণেই তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক শীতল।

মনে করা জরুরি, নির্বাচনের আগে এরদোয়ান এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘এ নির্বাচনের মাধ্যমে তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্বকে একটি বার্তা পৌঁছে দেবে। আমরা পশ্চিমাদের কথার অপেক্ষা করি না। তারা কী বলে, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের কী মতামত তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। জঙ্গিবাদ দমন কিংবা অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় আমরা পশ্চিমা শক্তির ওপর নির্ভর করি না। অবশেষে তুরস্কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ হলো। এরদোয়ান এখন আগের তুলনায় আরও বেশি ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছেন। তুরস্কের ন্যাটো সদস্যভুক্ত মিত্ররাষ্ট্ররা কিছুটা শঙ্কিত। এরদোয়ান কোন পথে হাঁটবেন? তিনি তার দেওয়া হুমকি বাস্তবায়নের পথ নেবেন, নাকি সমস্যা মোকাবিলায় যেসব প্রতিজ্ঞা ছুড়ে দিয়েছেন সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে বেশি মনোযোগী হয়ে উঠবেন?


  • লন্ডনে নিযুক্ত বিবিসির তুরস্ক প্রতিনিধি



 

পলিটিকো থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা