প্রেক্ষাপট
জুবায়ের আহমেদ
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩ ১২:১০ পিএম
অলঙ্করন : প্রবা
গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে জুয়া নিষিদ্ধ। অথচ জুয়ার নেশায় আসক্তরা মা-বোন, স্ত্রী-কন্যার স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সম্পদ বিক্রি করে জুয়া খেলে
থাকেন। তাদের জুয়ার নেশা থেকে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে। জুয়ায় সর্বস্ব হারানোর বহু
নজির থাকলেও এই ভুল থেকে কেউ শিক্ষা নে্ন না। প্রশাসন জুয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও
বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না জুয়া। উল্টো জুয়া খেলার মাধ্যম ক্রমেই বাড়ছে।
এক সময়
ক্রিকেট-ফুটবলসহ বিভিন্ন
গ্রামীণ খেলাধুলা এবং ক্যাসিনোর মাধ্যমে জুয়া খেলার প্রচলন থাকলেও স্মার্টফোনের
সহজলভ্যতার কারণে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে নানাভাবে এখন জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত
হওয়া যায়। বিভিন্ন নামে থাকা জুয়ার অ্যাপসগুলোর বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশি ব্যাংক এবং
বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ দেখিয়ে টোপ দিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করছে। এ
ছাড়াও জুয়ার বিভিন্ন কোম্পানি
চ্যানেলগুলোতে অবাধ বিজ্ঞাপন প্রচার করায় জুয়া এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে।
রাষ্ট্রীয় আইনে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো
নিয়মশৃঙ্খলা নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট-ফুটবল লীগগুলো বাংলাদেশি চ্যানেলে ও ভিনদেশি চ্যানেলে
দেখানোর সময় সেসব চ্যানেলে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার হওয়ায় বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ
হলেও জুয়া সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশে
বেকার সমস্যা প্রকট। বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়ে জুয়ায় মত্ত
হচ্ছে। বিদেশি ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে জুয়ায় অংশগ্রহণ করা সহজলভ্য হওয়ায় ঘরে বসেই
বিভিন্ন অর্থ লেনদেনের মাধ্যম
ব্যবহার করে জুয়া খেলছে তরুণরা, মধ্যবয়সিসহ
সব বয়সের মানুষ। মোবাইলের মাধ্যমে জুয়া খেলা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন কাজ। তাই
মোবাইলে জুয়াড়িদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেয়েও বড়
দায়িত্ব পরিবারের সদস্যদের। সন্তান কার সঙ্গে মিশছে, মোবাইলে সারাক্ষণ সে কী করছেÑ তা পর্যবেক্ষণে রাখার মাধ্যমে সন্তান যেন স্মার্টফোনের
অপব্যবহার করতে না পারে, তার
জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
যেহেতু
জুয়ায় আসক্ত ব্যক্তিরা মাদকাসক্তের মতোই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে যায়, সেহেতু মোবাইল কিংবা অন্য কোনোভাবেই জুয়া খেলা হোক না কেন, তা বন্ধ করতে পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে
রাখতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে জুয়ার কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা
সৃষ্টি করতে হবে। মোবাইলের মাধ্যমে কিংবা যেকোনো জুয়ার আসর ভেঙে দিয়ে মূল
হোতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সংবিধানে
যেহেতু ‘জুয়া খেলা নিরোধের
জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’
মর্মে বলা আছে, সেহেতু সব
ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ ও জুয়াড়িদের শাস্তি এবং
বাংলাদেশে জুয়ার ওয়েবসাইট প্রদর্শন বন্ধসহ স্পষ্ট আইন প্রণয়ন করার মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড
প্লে স্টোরে থাকা সব ধরনের
জুয়ার অ্যাপস এবং বাংলাদেশে দৃশ্যমান সব জুয়ার ওয়েবসাইটের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
ঘোষণার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে সরকারের আইটি সংস্থা কর্তৃক প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশব্যাপী ওয়েবসাইট-স্মার্টফোনের
মাধ্যমে জুয়ার যে ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে, তা
রোধ করতে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সচেতনতা তৈরি করতে পারলে মোবাইল জুয়াসহ
সর্বপ্রকার জুয়ার ভয়াবহতা থেকে মুক্ত থাকা কঠিন হবে না।
·
গল্পকার