× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

মানসম্পন্ন মাতৃস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করুন

সম্পাদক

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩ ১৪:১৮ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

সুস্থ মা, সবল শিশু, সুন্দর আগামীÑ এটি কোনো আপ্তবাক্য নয়। ২৮ মে সারা দেশে সচেতনতা বাড়াতে ‘গর্ভকালে চারবার সেবাগ্রহণ, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করি’Ñ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়েছে। ওই দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে প্রসবপূর্ব চারবারের সেবা বিনামূল্যে পাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ধাপে ধাপে কমছে সেবাগ্রহীতার হার। চতুর্থ ধাপে অধিকাংশ গর্ভবতী মা হাসপাতালে আসেন না এবং এর ফলে মাতৃত্বজনিত রোগে ভুক্তভোগীদের সংখ্যাও বাড়ছে। এজন্য সচেতনতা ও অবকাঠামোগত সুবিধার অভাব এ ক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী বলে মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ওই প্রতিবেদনেই জানা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সিজার বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং এর বেশিরভাগই হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। আমরা জানি, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ সালের মধ্যে কিছু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর মধ্যে প্রশিক্ষিত জনবলের মাধ্যমে প্রসব পূর্ববর্তী সেবার আওতায় ৯৮ শতাংশ গর্ভবতীকে আনার বিষয়টি অন্যতম। প্রসবপূর্ব সেবা অনেকেই ঠিকমতো পাচ্ছেন না বিধায় হাসপাতালেও অনেক মায়ের মৃত্যু ঘটছেÑ এই খবরও সংবাদমাধ্যমেরই। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় অবহেলাজনিত কারণও দৃশ্যমান।

দেশে মাতৃসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন নতুন নয়। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মা প্রসবের আগে ও সময় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী পান না, সে খবরও উদ্বেগজনক। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার মূলকথা, প্রত্যেক মানুষ প্রয়োজনের সময় মানসম্পন্ন সেবা পাবেন। এই প্রেক্ষাপটে মাতৃস্বাস্থ্যসেবা আরও বেশি জরুরি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২২ সালে সন্তান জন্মদানের সময় ৯১ জন নারীর মৃত্যু সংবাদ জানা গেছে এবারের নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে। এটি একটি খণ্ডিত দৃষ্টান্ত মাত্র। একটি হাসপাতালের চিত্র যদি এই হয়, তাহলে সারা দেশের চিত্র কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। চিকিৎসকদের মতে, একজন নারীকে গর্ভাবস্থায় অর্থাৎ প্রসবের আগ পর্যন্ত চারবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। এর মধ্যে গর্ভকালীন এক থেকে দুই মাসের মধ্যে একবার, চতুর্থ মাসে একবার, ষষ্ঠ ও অষ্টম মাসে আরও দুইবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি হলেও দেখা যাচ্ছে, অনেকেই তা করছেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য মতে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে গাইনি বিভাগে মোট তিন হাজার ২৯৫ সন্তান প্রসব হয়। এর মধ্যে ৩৬ জন মা ও ১০২ নবজাতকের মৃত্যু হয়। আর মৃত অবস্থায় জন্ম হয় ৫২২ শিশুর। বাংলাদেশ স্যাম্পল ফাইটার স্ট্যাটিস্টিক্সের তথ্যানুসারে, দেশে প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্ম নিতে গিয়ে ১৬৮ জন মা মারা যান। খণ্ড খণ্ড এসব পরিসংখ্যানের কোনোটিই সুখকর নয়।

আমরা জানি, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব যেমন পরিবারের, তেমনি রাষ্ট্রেরও। গর্ভকালীন সেবা নেওয়ার হার ক্রমাগত কেন কমছে, এর কারণগুলো অস্পষ্ট নয়। একদিকে অসচেতনতা, অন্যদিকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার পথ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় মসৃণ না হওয়া এর অন্যতম কারণ। নিরাপদ মাতৃত্ব একজন মায়ের অধিকার। এই অধিকারের পথ সুগম করার দায়িত্বই রাষ্ট্রের। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কায় ৯৮ ভাগ মায়ের সন্তান প্রসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সরকারি হাসপাতালে, দক্ষ প্রসবকারী এমনকি বিশেষজ্ঞদের হাতে। জানা গেছে, এ জন্য সেখানে মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কম। অনস্বীকার্য, আমাদের দেশও গত এক দশকের বেশি সময়ে স্বাস্থ্যসেবায় অনেক অগ্রগতি ঘটেছে, কিন্তু এখনও ৬৮ শতাংশ প্রসব হচ্ছে অদক্ষ প্রসবকারীর হাতে এবং বেশিরভাগ গ্রামের ঘরে ঘরে। এই তথ্যও আমাদের উদ্বিগ্ন করে। এ অবস্থা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়, এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে যথাযথ কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে এগোতে হবে। মাতৃমৃত্যুর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। কম সন্তান, সুস্থ মা, সুস্থ শিশুÑ এসব বিষয়ই একে অন্যের পরিপূরক। আমরা জানি, এই লক্ষ্যে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বটে, কিন্তু জনবলের অভাব এবং অনেক ক্ষেত্রে সহজে সেবাপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় এখনও জিইয়ে আছে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। আমরা মনে করি, শুধু দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতায় এই পরিস্থিতির নিরসন ঘটানো সম্ভব নয়। এজন্য জরুরি হলো সরকারের প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জনবল এবং আনুষঙ্গিক সবকিছু নিশ্চিত করা।

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা