× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গার্ডিয়ানের বিশ্লেষন

খাদ্যসংকট মোকাবিলায় খুঁজতে হবে নতুন পথ

জর্জ মনবায়োট

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩ ০৯:৫৮ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

খাদ্যের ওপর আমাদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। অথচ খাদ্য উৎপাদন খাত নানা সমস্যার মুখোমুখি। বস্তুনিষ্ঠভাবে বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে আলোচনা করা কঠিন। খাদ্যসংকটের ক্ষেত্রে যা প্রভাব রাখতে পারে তা শনাক্ত করায় আমরা এখনও ভ্রান্ত ধারণায় আক্রান্ত। সবচেয়ে প্রগতিশীল ভাবনার ব্যক্তিও খাদ্যসংকটে উগ্রবাদী হয়ে উঠতে পারেন। বাজারে সংকট কিংবা আমাদের খাদ্যাভ্যাসে রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক কারণে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব এলে মানুষ সঙ্গত কারণেই ফুসে ওঠে। খাদ্যবিষয়ক লেখকরা অতীতে একাধিক মন্তব্য করেছিলেন। সেসব মন্তব্য বিভিন্ন সময় মানুষের মতামতে পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু এখন খাদ্যসংকট সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামতে দ্বিধার প্রভাব বেশি। বিশেষত, পরিবেশবাদীরা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রতিনিয়ত কথা বলছেন। শিল্পায়নের ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষি খাতের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন চালু রাখার পক্ষে তারা মন্তব্য করছেন। তারা হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, পর্যাপ্ত উর্বর জমির অভাব রয়েছে। খাদ্য উৎপাদনবিষয়ক সমস্যাটি কতটা ব্যাপক এমনটি যে তারা এখনও বুঝতে পারেননি তা এমন মন্তব্যেই স্পষ্ট। কারণ শুধু খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে যদি কৃষি উৎপাদনে জোর দিতে হয় তাহলে পর্যাপ্ত জমি পাওয়া যাবে কি? আর এমনটি করলে যতটুকু জীববৈচিত্র্য রয়েছে তাও কি ধ্বংস করতে হবে না?

ট্রানসিলভেনিয়া ছোট একটি গ্রামের মতো অঞ্চল। আশপাশে গরু-বাছুর ছোটাছুটি করছে। জলাশয়ে হাঁস কিংবা অন্যান্য পাখির আনাগোনা। কৃষকরা ঘোড়া কিংবা গরুর গাড়িতে চড়ে নিত্যদিনের কাজ সম্পন্ন করেন। এমনকি বাড়ির অলস বিড়ালটিও মাটির রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে। মানুষ ওখানে ফসল ফলায়। ঘাসের ওপর কাস্তে চালিয়ে তাদের ফসল আর খড়ের স্তূপ জমা করতে হয়। এমন একটি দৃশ্য যেকোনো শিশুর জন্য লেখা বইয়ে পাওয়া যাবে। যেকোনো শিশু বড় হওয়ার সময় এমন বই পড়ে। বর্ণ পরিচয়ের পর গবাদিপশুর খামারকে কেন্দ্র করে অনেক গল্পই তাদের পড়তে দেওয়া হয়। খামার তাদের কাছে এমন একটি জায়গা, যেখানে মাংস, দুগ্ধপণ্য, ডিম উৎপাদনের করা হয়; সেখানে পশুপাখির ওপর মানুষ নানাভাবে নির্যাতন চালায়। অথচ বাস্তবে এমন কিছুই নয়। খাদ্য উৎপাদন খাত এবং খামার সম্পর্কে আমরা আলোচনা শুরু করলে এই জায়গার প্রকৃত চিত্র বোঝাতেই হিমশিম খেতে বাধ্য হই। তবে সবাই অন্তত এটুকু মেনে নেন, শিল্পায়নের তুলনায় খামার পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদনই শ্রেষ্ঠ। অন্তত খামারের মধ্যে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আছে। এজন্যই বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বারবার খামার ও কৃষি উৎপাদন পদ্ধতির দিকেই আমাদের ঝোঁক।

২১ শতাব্দীর বিশাল জনসংখ্যার খাদ্য ঘাটতি মেটাতে তাই মধ্যযুগের কৃষিব্যবস্থার পুনর্জাগরণ জরুরি বলে ভাবেন অনেকে। কিন্তু এমন পথ আমাদের জন্য ভালো কিছু হতে পারে না। কারণ খাদ্য শুধু ক্ষিধে মেটায় এমন না। খাদ্য আমাদের মনের খোরাকিও বটে। তাই মধ্যযুগে যেভাবে মুরগি পালন করা হতো এখন তা সম্ভব নয়। মধ্যযুগে মুরগিকে উন্মুক্তভাবে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হতো। এখনও এশিয়ার অনেক জায়গায় দেশি জাতের মুরগিকে এভাবে পালন করা হয়। তারা নিজেরা নিজেদের খাদ্য জোগাড় করে নেয় এবং অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে প্রকৃতিতে মেলামেশার অবকাশ পায়। কিন্তু গ্রামীণ অঞ্চলে পাখিকে উন্মুক্ত করে দিলে ফসল বা অন্য অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এমনকি অনেক উন্নত জাতের মুরগি নিজের খাদ্য নিজের সংগ্রহ করতে পারে না। আর এভাবে মুরগি পালন করে বিশ্বের সবার খাদ্য চাহিদাও পূরণ করা হবে না। কারণ শুধু ক্ষুধা মেটাতেই মানুষ প্রাণিজ আমিষ খায়, এমন না। তারা মনের আনন্দের জন্যও নানা ফাস্টফুড খেয়ে থাকে। তাই চাহিদার মাত্রাটা বিবেচনা করা জরুরি।

সমস্যা হলো, মানুষ বইয়ের সুন্দর চিত্রকেই শৈশব থেকে ঠাঁই দিয়ে এসেছে। বাস্তব পরিসংখ্যান তাদের প্রভাবিত করেনি। এই সংকটের সময় আমরা নিরাপদ একটি জায়গার কথা কল্পনা করছি। অথচ কতজন নিরাপত্তার সন্ধান করছেন, সেদিকে আমাদের খুব একটা মনোযোগ নেই। বইভিত্তিক এই কল্পনাপ্রবণতা আমাদের ক্ষতিই করবে। ক্ষুধানিবৃত্তির সমাধান খুঁজে না পেলে মানুষ প্রকৃতির কতটা ক্ষতি করতে পারে তা নিকট অতীতে বহুবার আমরা দেখতে পেয়েছি। রোমান্টিক ভাবনা কিংবা গল্পের বইয়ের মতো কৃষি খাত নয়। ব্রিটিশ উপনিবেশ বিশ্বপর্যায়ে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। ওই সময় সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষের উৎখাত এবং বড় পর্যায়ে বনভূমি ধ্বংস করে কৃষি খামার ও শস্যক্ষেত্র তৈরি করা শুরু হয়। কারণ এতদিন স্থানীয় পর্যায়ে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য ব্রিটিশ উপনিবেশে উৎপাদন হতো। উপনিবেশ হওয়ার পর বৈশ্বিক চাহিদাও এই উপনিবেশগুলোকে পূরণ করতে হয়েছিল। সঙ্গত কারণেই এসব সমস্যা নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করতে যাই, তখন বাস্তব চিত্র অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। অর্থাৎ বৈশ্বিক খাদ্যসংকট সমাধানের কোনো পদ্ধতিই আমাদের জন্য আনন্দদায়ক নয়। এই সংকট মোকাবিলার জন্য শিল্পকারখানার ব্যবহার অবধারিত হয়ে ওঠে। অথচ জলবায়ু সংকট ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কথা ভেবে শিল্পকারখানার প্রতি নেতিবাচক ধারণা রয়েছে সবারই।

আজ আমরা যে খাদ্যই গ্রহণ করি তার উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের পেছনে এক বা একাধিক কারখানার হাত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৫ শতাংশ মানুষ মাংস খায়। অথচ ৪৭ শতাংশ মানুষ কসাইখানা বন্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আমরা যদি ভাবি আরও শস্যক্ষেত বাড়াতে পারলে প্রকৃতি ও খাদ্যসংকটের সমাধান হবে, তাহলে ভুল হবে। বরং আমাদের শিল্পকারখানার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। এমন শিল্পকারখানা গড়তে হবে, যেখানে দূষণ কম হয়, যেখানে নৃশংসতা ও বৈষম্য কম এবং যার কার্যপদ্ধতি আরও উন্নত। এমনকি কৃষি খাতে অণুজীবের ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যযুগের যেকোনো ভূপ্রকৃতির বর্ণনা আমাদের আনন্দ দেয়। কিন্তু আট বিলিয়ন মানুষের খাদ্যের জোগান দেওয়াও কম কথা নয়। পুরোনো কৃষিব্যবস্থায় যে পরিমাণ অপচয় হয় এবং সময় প্রয়োজন হয়, তা খাদ্যসংকট মেটাতে যথেষ্ট নয়। কৃষি খাতে তাই সমন্বয়মূলক ব্যবস্থার প্রয়োগ বাড়াতে হবে। নাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়।

  • লেখক ও কলামিস্ট


গার্ডিয়ান থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা