× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপসম্পাদকীয়

ভোটার অংশগ্রহণ বাড়ানোর মঞ্চ সিটি নির্বাচন

মুনীরা খান

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩ ০২:০৭ এএম

আপডেট : ২৫ মে ২০২৩ ০২:১৬ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে হাজার ১০০ ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে সিটি করপোরেশনকে যদি আমরা স্থানীয় সরকারের মধ্যে ফেলি, তাহলে বলা যায় স্থানীয় সরকার রাষ্ট্রের এমন একটি প্রশাসনিক অংশ যেটি শহর বা ওই নির্দিষ্ট স্থান মানুষের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ আগামী ২৯ জুনের মধ্যে আরও চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৩টি ধাপে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে নানা দিক থেকে গাজীপুরসহ পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ কেউ কেউ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনী আয়োজন ইসিরঅ্যাসিড টেস্টবলে অভিহিত করছেন জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজন নতুন কোনো বিষয় নয় এর আগেও আমরা এমন নির্বাচনী আয়োজন দেখেছি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অতীতের ওই নির্বাচনগুলোকে আমরা সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ বলে মেনে নিয়েছিলাম ওই সময় বিরোধী দলের অনেক প্রার্থীও মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন অথচ পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, নির্বাচিত সেই মেয়রদের অনেকেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি এক্ষেত্রে গাজীপুরের কথাও বলতে হয় দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত গাজীপুর সিটির কোনো মেয়রই তার মেয়াদকাল পুরোপুরি পার করতে পারেননি নির্বাচিত মেয়র কিছুদিনের জন্য ক্ষমতায় থাকবেন এবং কয়েকদিন পর তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে এমনটি হতে পারে না এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের একটি সুপরিকল্পিত রোডম্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন যে পরিকল্পনার মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি অর্থবহ একটি ফলাফল দেওয়ার চেষ্টা করা সম্ভব হবে

পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ইসির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার প্রতি আস্থা বাড়াতে সিটি নির্বাচনগুলো তারা গুরুত্বের সঙ্গেই নেবে এমনটাই প্রত্যাশা নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের প্রস্তুতিও সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয় নিয়ে ভাবিত হওয়ারও বেশকিছু কারণ রয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিনিধিত্বশীল সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেমন বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ এই একই বিষয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রেও জরুরি স্থানীয় উন্নয়নের জন্যই মূলত সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয় সিটি করপোরেশনের কাজ অনেক বিস্তৃত কবরস্থান-শ্মশানের রক্ষণাবেক্ষণ সংরক্ষণ, মশা নিধন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তাও সিটি করপোরেশনের কাজের আওতায় অর্থাৎ নগর ব্যবস্থায় মানুষের সব সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন এবং কাউন্সিলরদের ওপর বর্তায়

উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে মেয়ররা কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তার ভিত্তিতে মেয়ররা পাঁচ বছরের মেয়াদকালের কর্মপরিকল্পনা ভাগ করে নেন আমাদের এখানে অবশ্য অধিকাংশ সময় এই সমন্বয় দেখতে পাওয়া যায় না এজন্য সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে কাউন্সিলরদের ভূমিকা সাধারণের পক্ষে অনেক সময় বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি হিসেবে একজন কাউন্সিলর নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের অভিযোগ দাবি মেয়রকে জানান কিন্তু আমাদের এখানে দেখা যায় সমন্বয়হীনতার ফলে কাউন্সিলরের সঙ্গে মেয়রের সম্পৃক্ততা অনেক কম এই সমন্বয়হীনতার কারণ যেমন খতিয়ে দেখা জরুরি, তেমনি নির্বাচন কমিশনকেও একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে হবে নিকট অতীতে একটি উপনির্বাচনে মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষ ভোট দিতে এসেছিল নির্বাচন কমিশনকে অনুধাবন করতে হবে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে শুধু রাজনৈতিক দলেরই অংশগ্রহণ নয়; অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও বাঞ্ছনীয় রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে ভোটারের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই ভুলে গেলে চলবে না, নাগরিকদের জন্যই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় নির্বাচন কমিশনকে শুধু রাজনৈতিক দলের কথা ভাবলে চলবে না

রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণকেও গুরুত্ব দিতে হবে সেটাও ভোটারের কথা মাথায় রেখেই কোনো নির্বাচনে ভোটার অংশ না নিলে কেউ বিজয়ী হলেও তাকে পুরোপুরি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া বলা যায় না কারণ জনপ্রতিনিধি কাদের দায়িত্ব নেবেন? কাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন? অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে বিজয়ী মেয়রের সে দায় থাকে না থাকে না বলেই বিভিন্ন সময়ে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেন না কারণ জনগণের প্রাত্যহিক জীবনে যখন মেয়র তাদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে পারেন না, তখন এই সামাজিক প্রতিক্রিয়াই তাকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ উপহার দিতে হয় সমাজে প্রতিটি মানুষ একই রাজনৈতিক দল বা মতের সমর্থক নন, তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন যদি ব্যক্তির পছন্দের রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেয়, তখন সে দলের সমর্থনকারীও ভোট দিতে আসেন না এই একটি ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে

অবশ্য ভোটারদের সচেতনতার অভাবও এক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা যেমনটা বলেছি, কারও সমর্থিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নিলে তারাও ভোট দিতে যান না এখানেই তারা ভুল করেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত নয় এটি স্থানীয় নির্বাচন এবং এই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আগামী পাঁচ বছর স্থানীয় অবকাঠামো, জনজীবনের উন্নয়নের কাজ করবে তার পরও ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো প্রার্থীর প্রতি মানুষের আগ্রহ একটু বেশি থাকে ধরনের নির্বাচনে কারণ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নির্বাচিত হলে স্থানীয় উন্নয়ন আরও দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি অনেক সময় স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম জনগণের প্রত্যাশা যথাযথভাবে পূরণ করতে ব্যর্থ হয় সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উন্নয়ন প্রকল্পের দোহাই দিয়ে সড়ক বিভাজনের গাছ কেটে ফেলে স্থানীয়রা কিন্তু এমন কিছু প্রত্যাশা করেনি ফলে স্থানীয় সরকারের প্রতি তাদের অনাস্থা তৈরি হয়, যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলে যখন ভোটার অংশগ্রহণ হবে কম, তখনও কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারে বোঝার স্বার্থে ধরা যাক কোনো নির্বাচনে ১৫ শতাংশ ভোটার অংশ নিয়েছে ফলে ওই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ৮৫ শতাংশ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ থাকছেন না দায়বদ্ধতার জায়গা পূরণ করার জন্যই নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণে বেশি জোর দিতে হবে

অর্থাৎ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপাতত ইসির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আনা কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে কি আদৌ এমন কিছু সম্ভব? খুব সম্ভব বলেই আমি মনে করি এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার এডুকেশনে জোর দিতে হবে সে জন্য বড় পরিসরে ভোটারদের ভোটবিষয়ক সচেতনতা ভোটের নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে হবে মানুষকে সংসদীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনের তফাত বোঝাতে হবে তাদের বোঝাতে হবে, সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক স্বার্থ গুরুত্ব পেলেও স্থানীয় নির্বাচনে তা হয় না স্থানীয় নির্বাচন ওই নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার একটি কাঠামোবদ্ধ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে এটি অবশ্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নিলে জনপ্রিতিনিধিদের দায়বদ্ধতা অনেকাংশে কমে যায়, এটি মানুষকে বোঝার প্রক্রিয়াটি সহজ নয় এই সমস্যাটি বাদে প্রার্থী মনোনয়নের দিকেও একটু চোখ ফেরানো দরকার সম্প্রতি নির্বাচনের আগে প্রার্থী মনোনয়নে নানা জটিলতা দেখে দিচ্ছে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হবে বিশেষত প্রার্থীর ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীলরা নিরপেক্ষ নয় এমন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন এখানে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক দেখা গেল, কোনো প্রার্থী নির্বাচনের আগে নিয়মভঙ্গ করেছে পরে সে এর কারণ দর্শানোর পর নির্বাচন কমিশন যদি বলে, আমরা তার ব্যাখ্যায় তুষ্টÑ তাহলে প্রতিষ্ঠানটি তার নিরপেক্ষতা হারাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে বহু দেশে আমি নির্বাচনী ব্যবস্থার আলোচনায় অংশ নিয়েছি সবখানেই নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে দুঃখের বিষয়, আমাদের এখানে এই স্বচ্ছতার অভাব আছে তার পরও নির্বাচন কমিশনের সামনে পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ এই চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে তারা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়ানোর মঞ্চ হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমাদের চোখে


  • প্রেসিডেন্টফেমা এবং দেশ-বিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা