× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আল জাজিরার বিশ্লেষণ

তবু শান্তি যেন মুখের বাণী

জনাথন কোহেন

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৩ ১৪:৪৪ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

বিশ্বের ধনী দেশগুলো জাপানের হিরোশিমায় ১৯ মে অংশ নেয় জি৭ সম্মেলনে। এবারে এমন এক শহরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো যে শহর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ংকর বোমা হামলার শিকার হয়েছিল। হিরোশিমা যে ১৯৪৫-এর ওই ভয়ংকর অবস্থা থেকে নিজেদের পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে, তা এ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে জাপান সরকার দেখাতে চেয়েছে। তাদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে পুরো পৃথিবীর সামনে পৌঁছাবে শান্তির বার্তা। ইথিওপিয়ার রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনা বেশি পুরোনো নয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ এখনও চলমান। সুদান গৃহযুদ্ধাবস্থার মতো পরিস্থিতিতে রয়েছে। তবু শান্তি যেন মুখের বাণী! বিশ্বের সব রাজনীতিকই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুদ্ধ ভীষণ ব্যয়বহুল ঘটনা। যারা যুদ্ধ লড়ে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার দোহাই দেয়। তাদের সবার মুখে ওই একই বক্তব্যÑ ‘রাষ্ট্রের বিষফোড়া’ সরিয়ে দেওয়া হবে এবং আমাদের ‘বাসভূমি’ মুক্ত করা হবে। বলা বাহুল্য, এ কথার বাস্তবায়নের পথ এত সহজ নয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক। প্রতিদিনই সংবাদপত্রে ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ যুদ্ধের পেছনে একতাবদ্ধ সমাজ ও দেশের ভেতর সংকটের যে দোহাই দেওয়া হয়েছে, তা দিয়েই এতদিন ধরে যুদ্ধটি চলমান। অথচ আলোচনা ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দুই পক্ষেরই নিজেদের ক্ষতি কমানোর সুযোগ রয়েছে।

বিগত ১৪ বছরে বিশ্বে শান্তি বা স্থিতাবস্থা একেবারেই কমতে শুরু করেছে। সেফারওয়ার্ল্ড এবং মার্সি কর্পসের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, যুক্তরাজ্য সংঘর্ষ কমানোর জন্য ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে। চলতি বছরের শুরুতে সুইডিশ প্রশাসন শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী ফাউন্ডেশন বা প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন বাড়িয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত অর্থ খরচের পর শান্তিটা আসলে কোথায় পালিয়ে যাচ্ছে? দাতা দেশগুলোর অর্থ যে শরণার্থীদের কাছে পুরোপুরি যাচ্ছে না তা সহজেই বোঝা যায়। এ অর্থের সিংহভাগই প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। ২০২২ সালে এ প্রবণতা আরও বেড়েছে। যুক্তরাজ্যসহ অনেক রাষ্ট্রেই প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ফলে ভূরাজনৈতিকভাবে অন্যান্য দেশ নানা সমীকরণের হিসাব মেলাতে শুরু করে। যে রাষ্ট্রগুলো এককালে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিনিয়োগ করছিল, তারাই এখন পিছিয়ে যেতে শুরু করেছে। এমনটি ঘটারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনকে অনেকেই বড় প্রতিবন্ধকতা মনে করছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের পর পুরো পৃথিবীই অবাক হয়েছিল। পশ্চিমা দেশের নিষেধাজ্ঞার পরও কিছু করা যায়নি। অন্যদিকে চীন অভিযান চালাচ্ছে তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীনা সাগরে।

Bottom of Form

ভূরাজনৈতিক এ বিষয়গুলো হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এ কথাও বুঝতে হবে, যেকোনো বিরোধের ফলে বৈশ্বিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় থেকেই আমাদের মনোযোগ সরে যায়। জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা লিঙ্গবৈষম্যের মতো সমস্যা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না এজন্যই। যখনই বিরোধ হয় তখন ভূরাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় প্রতিটি দেশ সামরিক কায়দা অনুসরণ শুরু করে। সামরিক বাহিনী যুদ্ধ লড়ে আর সাধারণ মানুষ এ যুদ্ধের পরিণতি থেকে নিজেদের বাঁচানোর নানা চেষ্টা করে যায়। মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ ককেশাসের উদাহরণ টানলেই বিষয়টি বোঝার কথা। জীবন পরিচালনার রসদ তাদের কমে গেছে যুদ্ধের কারণে। তারপর মানবেতরভাবে জীবন পরিচালনা করতে হয়েছে তাদের। পুরো পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটতে দেওয়া যায় না।

২০১৯ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম একটি সমীক্ষায় বলেছিল, যুদ্ধাবস্থা প্রতি বছর বিশ্বে ১৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো আর্থিক ক্ষতি করে। অর্থাৎ পুরো পৃথিবীর জিডিপির ১০ শতাংশই ব্যয় হয় যুদ্ধ-পরবর্তী স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। বিরোধ এড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজটি তুলনামূলক কঠিন। আমাদের সামনে এক বড় সুযোগ নিয়ে এসেছিল জি৭ সম্মেলন। এ সম্মেলনে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের নেতারা অংশ নিলেও হিরোশিমা শীর্ষ সম্মেলন সার্বিক অর্থেই হয়ে ওঠে একক এজেন্ডার সম্মেলন। সম্মেলনজুড়েই জি৭ নেতারা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের লক্ষ্য অর্জনে নিরস্ত্রীকরণ ও পরমাণু বিস্তার রোধে চালানো প্রচেষ্টা জোরদার করার কথা বলেন। আবার চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনকেও সাহায্য করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। তবে সম্মেলনে আলোচনার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজা হয়নি। অথচ এই নেতাদেরই দায়িত্ব ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন বীভৎসরূপ না নেয়। এজন্য প্রতিটি রাষ্ট্রকেই তাদের কূটনীতিতে শান্তির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। বাড়াতে হবে বিনিয়োগ। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দূত নিয়োগ কিংবা দক্ষ কাউকে কাজে লাগানোর কথাও ভাবতে হবে। রাষ্ট্রগুলোকে একত্র হয়ে জাতিসংঘের ‘নিউ এজেন্ডা ফর পিস’ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় কপ-২৮ সম্মেলনের বিষয়েও ভাবতে হবে। জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পেছনে বিরোধ ও যুদ্ধের সরাসরি অবদান রয়েছে। জি৭-এর সব রাজনীতিককে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে হবে। যুক্তরাজ্য প্রশাসন অবশ্য এ বিষয়ে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, শরণার্থীদের সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা আর গাফিলতি করবে না। দেশটির ৭০ শতাংশ মানুষ এ ঘোষণার পক্ষে আছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে অধিকাংশ দেশের সমীক্ষায় ৭০-৮০ শতাংশ সমর্থন পাওয়া যায়। এর জলজ্যান্ত উদাহরণ কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের গুড ফ্রাইডে/বেলফাস্ট চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন। তার পরও সময়টা যুদ্ধের। শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমাদের আরও জোর দিয়ে ভাবতে হবে।


  • এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী এনজিও কন্সিলেশন রিসোর্সেস, ইংল্যান্ড

 

আলজাজিরা থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত

অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা