× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ন্যাচার ম্যাগাজিনের বিশ্লেষণ

খাদ্য নিরাপত্তার বড় ঝুঁকি ছত্রাকের সংক্রমণ

ইভা স্টুকেনব্রোক ও সারা গুর

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩ ১৩:২৭ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক প্রতিবেদনে মানবশরীরে ছত্রাক সংক্রমণের নেতিবাচক প্রভাব বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে তারা এও সতর্ক করে, কিছু ছত্রাকের সংক্রমণ রোধ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। ছত্রাক সংক্রমণে পুরো বিশ্বে দশ মিলিয়ন মানুষ প্রতিবছর মারা যায়। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে গবেষণা, সমীক্ষা ও প্রতিরোধী প্রক্রিয়া গড়ে তোলার জোর তাগিদ দিয়েছে। চলমান খাদ্য সংকটের সঙ্গে ছত্রাক সংক্রমণও একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা এখনও গড়ে ওঠেনি। খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (ফাও) ঘোষিত ১৬৮টি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য প্রতিবছর ছত্রাক সংক্রমণের শিকার হয়। প্রতিবছর অন্তত ১০ থেকে ২৩ শতাংশ খাদ্যশস্য নষ্ট হয় ছত্রাকের সংক্রমণে। এমনকি খাদ্যশস্য উৎপাদনের আগেও ছত্রাকের সংক্রমণ খাদ্যশস্য নষ্ট করে। এত পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট না হলে প্রতিবছর অন্তত ৬০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন মানুষের খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হতো।

বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আশঙ্কার কালে এই সমস্যা যুক্ত হওয়ার কারণ আছে। আধুনিক কৃষিব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছত্রাকও নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনছে। এ জন্য আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কিছু সমস্যা থেকেই যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ছত্রাকের সংক্রমণ কেমন রূপ নেবে তা একটি বড় প্রশ্ন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছত্রাকও নিজেদের তাপ সহনশীল করে তুলছে। আর খাদ্যশস্য একদিকে যেমন প্রচণ্ড তাপে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনি ছত্রাক আরও শক্তিশালী হয়ে খাদ্যশস্য নষ্টের জন্য কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। গবেষকরা ধারণা করছেন, প্রচণ্ড তাপ সহনশীল হয়ে ওঠা ছত্রাক মাটিতে অবস্থান করতে পারে এবং নানাভাবে তা প্রাণিদেহেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমনিতেই খাদ্য সংকট অনেক দেশের নীতিনির্ধারকদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে। যদি ছত্রাক সংক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। অথচ আগামী ৩০ বছরে পৃথিবীর মোট জসংখ্যা ৯ দশমিক ৭ বিলিয়নে পৌঁছাবে। এই সমস্যা বিবেচনায় মানুষ চরম খাদ্য সংকটের মুখে রয়েছে।

খাদ্যশস্য উৎপাদনে ছত্রাকের সংক্রমণ ঠেকানোর প্রচলিত পদ্ধতির ওপর নির্ভর না করে আরও সমন্বয়মূলক পদ্ধতির দিকে এগোতে হবে। কৃষক, কৃষিসংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান, চারা উৎপাদনকারী, ব্রিডার, উদ্ভিদের রোগ বিশেষজ্ঞ, সরকার, নীতিনির্ধারকÑ এমনকি বিনিয়োগকারীদেরও এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করতে হবে। বিশেষত ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধী খাদ্যশস্য নিয়ে গবেষণায় জোর দিতে হবে বেশি। উৎপাদক এবং বিনিয়োগকারীদের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। মূলত একটি সংক্রমণের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট জাত কীভাবে খাপ খাওয়াতে পারে তা নির্ধারণ করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা অনেক জরুরি। ইতোমধ্যে বেশকিছু দেশ এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

ছত্রাক সংক্রমণ রোধে গবেষণা কার্যক্রম সচরাচর অ্যাাগ্রোকেমিক্যাল ক্রপ প্রটেকশন ইন্ডাস্ট্রি করে থাকে। কিন্তু অনেক কৃষিনির্ভর দেশেও এমন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় ছত্রাকের সংক্রমণে প্রচুর খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে থাকে। এই খাত মূলত ছত্রাকের নতুন ধরন আবিষ্কার এবং রাসায়নিক দ্রব্যের মাধ্যমে তা নির্মূলের গবেষণা করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই রাসায়নিক দ্রব্য দিয়েই গবেষণা করা হয়, যা এখন এড়িয়ে যাওয়া জরুরি। তা ছাড়া খাদ্যশস্যের সংকরায়ন প্রক্রিয়ায় যদি রোগপ্রতিরোধী জিনের সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া যায়, তা হলে সংকটাবস্থা কাটানোর দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। ২০২২ সালে ডেনমার্কে উৎপাদিত গমের ২৫ শতাংশই এমন ধরনের জাত হওয়ায় তারা অনেক ফসল নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে পেরেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সংক্রমণ ঠেকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে করা যেতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্যাটেলাইট, রিমোট সেন্সিং টুলের ( যেমন ড্রোন) ব্যবহার বাড়িয়ে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ওই পর্যবেক্ষণে পাওয়া তথ্য কৃষক ও উৎপাদনসংশ্লিষ্ট সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। প্রযুক্তি এভাবেই জনসচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া প্রচলিত সংকরায়ন পদ্ধতি থেকেও বের হয়ে আসা জরুরি। প্রচলিত ব্যবস্থায় এক বা একাধিক জিনের মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে একটি নির্দিষ্ট রোগ বা সংক্রমণের বিরুদ্ধের প্রতিরোধ কেমন তা যাচাই করা হয়। এ জিনকে সচরাচর আর জিন বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু ছত্রাকও প্রায় দশ বছরের সময়কালে নিজেকে এই জিনের বিরুদ্ধে কার্যকর করে তোলার সক্ষমতা অর্জন করে নিতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে। এক্ষেত্রে সংকরায়নে একাধিক আর জিনের বিষয়ে মনোযোগ বাড়ালে কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

আরেকটি ভালো পদ্ধতি হলো কৃষি উৎপাদনে বায়োলজিক্সের ব্যবহার বাড়ানো। বায়োলজিক্স সচরাচর জীবিত অরগানিজম থেকে প্রোবায়োটিক উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হলেও কৃষিব্যবস্থায় খাদ্যশস্য নিরাপত্তায় এর অন্তর্ভুক্তি আমাদের জন্য লাভজনকই হবে। বিভিন্ন দেশের সরকার এক্ষেত্রে অর্থায়ন বাড়ালে খাদ্য সংকট মোকাবিলার বৈজ্ঞানিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। খাদ্যশস্য নিজে নিজে গজায় না। এখানে অণুজীবের ভূমিকাও রয়েছে। তা ছাড়া আবহাওয়ার চাপ সহনশীলতা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও এর অন্তর্ভুক্ত। বিগত কয়েক দশকে খাদ্য উৎপাদনে উপকারী অণুজীবও আবিষ্কৃত হয়েছে। অণুজীবের সদ্ব্যবহারের বিষয়েও গবেষণা অত্যন্ত জরুরি।

ছত্রাক সংক্রমণ উদ্ভিদের ক্ষতি করার পাশাপাশি মানবদেহেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। ভবিষ্যতে এটি আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্যই সরকার ও কৃষিসংশ্লিষ্ট সংস্থাকে উৎপাদনে জোর দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্যশস্য নিয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা পরিচালিত আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ রক্ষা কনভেনশন প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। সমস্যা হলো, সংস্থাটির কার্যক্রম সম্পর্কে অনেকেই এখনও পরিচিত নন। এই সংস্থায় থাকা ১৮০ সদস্য রাষ্ট্র একজোট হয়ে কাজ করলে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের ঝুঁকি নিরসন করা কঠিন কিছু নয়। আপাতত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া মানবস্বাস্থ্যের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হওয়ায় ছত্রাক নিয়ে কেউ অত মনোযোগ দিতে পারছে না। ফলে আমাদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে, ছত্রাক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক একটি ঝুঁকি হয়ে উঠছে।


  • লেখকদ্বয় যথাক্রমে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক অধ্যাপক, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব এভালুশনারি বায়োলজি, জার্মানি এবং চেয়ার অব ফুড সিকিউরিটি, এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য

 

ন্যাচার ম্যাগাজিন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

 

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা