× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আল জাজিরার বিশ্লেষণ

ফিলিস্তিন সংকটে আরব অঞ্চলের অবস্থান

ইমাদ কে হার্ব

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩ ০০:৪০ এএম

আপডেট : ১৮ মে ২০২৩ ০০:৫৩ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের পর ফিলিস্তিনিদের আকুতি আরব বিশ্বকে চমকে দেয় তখন আরব রাষ্ট্রগুলো নিজেও উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন সংকটে জর্জরিত ছিল এমন সময়ে ফিলিস্তিনকে সংকটাবস্থা থেকে মুক্ত করতে তাদের একজোট হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় কিন্তু আরব অঞ্চলের দেশগুলো তা রাজপরিবারশাসিত হোক কিংবা গণতান্ত্রিক হোক, এক সময় নিজেদের সার্বভৌমত্বে থিতু হয়ে উঠতে শুরু করে ফলে একপর্যায়ে তারা ফিলিস্তিনের সংকট বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ফিলিস্তিন সংকটের প্রতি অনাগ্রহ আজকে আরব অঞ্চলের অগণতান্ত্রিক প্রবণতার বড় উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে কারণ অধিকাংশ আরব রাষ্ট্রই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আমাদের সবারই কম-বেশি জানা আরব অঞ্চলের সংকট অনেকাংশে দূর হয়েছে কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি তাদের আজও আরব অঞ্চলের একমাত্র ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র হয়েই টিকে থাকতে হচ্ছে যার পুরো দায় অদক্ষ ফিলিস্তিন প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে

আজও ফিলিস্তিন সংকট আরব অঞ্চলের মানুষের কাছে একটি বড় বিষয় অসংখ্য ফিলিস্তিনের বাসিন্দা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে৷ তা ছাড়া ইসরায়েলের দখলকৃত গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিমতীরের বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শরণার্থী শিবিরেও অনেক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে আরব রাষ্ট্রগুলো নিজ দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রমে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় ফিলিস্তিন বিষয়ে তাদের মনোযোগ কমে গেছে জনগণের ভেতর নানা সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ নানা কারণে আরব রাষ্ট্রগুলো আজ অনেকটা নিশ্চুপ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানোর বিষয়েও তারা কিছুটা নীরব কারণ বিভিন্ন সময় আরব অঞ্চলের দেশগুলো এই সমস্যাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে আরব রাষ্ট্রের অবস্থা মনোপলাইজ করার বড় উদ্দেশ্য মানুষকে বোঝানো বা চোখে ধুলো দেওয়া বিষয়ে তাদের মনোযোগ যে নেই তা বুঝতে না দেওয়ার জন্যই এমনটি করা হচ্ছে মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাতের পথ তারা রাখছে না তা ছাড়া ইসরায়েলের পেছনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রও এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরব অঞ্চলের তৎপরতার অভাব মূলত তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অবকাঠামোগত স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই করা হচ্ছে

১৯৭৭ সালে ইসরায়েল সফরের কয়েক মাস আগে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত মিসর ইসরায়েলের মধ্যে ইউএস-ব্রোকারেজ চুক্তি স্বাক্ষর করে ঠিক ১৪ বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আরব অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়তে শুরু করে পরাশক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের অস্ত্র সরবরাহ এবং সামরিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা বাড়তে শুরু করে ফলে শান্তিবিষয়ক আলোচনার ওপরও এই রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয় আস্তে আস্তে ফিলিস্তিনের মানুষও আরব রাষ্ট্রগুলোর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র বাদে আর কোনো রাষ্ট্রই নেই

ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় থাকার সময় ইসরায়েল আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্কের ধরনও বদলেছে ফলে ফিলিস্তিন বিষয়ে তাদের আগ্রহও একটু কমে গেছে আপাতত নিয়ে যে আলোচনাই হোক, তাদের জাতিগত স্বার্থে তা কোনো কাজেই আসছে না আর ইসরায়েলের সঙ্গে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া মানে পশ্চিমতীরের অস্থিতিশীলতা জিইয়ে থাকা সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের হামলা বিশেষত হুয়ারা গ্রামের ওপর নিধনযজ্ঞ থেকে বোঝা যায়, এই অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধ কিংবা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের কোনো দ্বিধা নেই৷ এমনকি বিষয়ে তাদের বাধা দেওয়ারও কেউ নেইÑ আত্মবিশ্বাসও ইসরায়েলের তৈরি হয়েছে আরব রাষ্ট্রগুলো এক্ষেত্রে ইসরায়েলকে দায় দেওয়া কিংবা প্রতিবাদ জানিয়েই দায়মুক্তি পেতে চাইছে

২০০৭ সালে হামাস ফিলিস্তিন সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটির (পিএ) প্রধান ফাতাহ তখনও সুসংহত নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিনের জনগণও বিষয়টি মেনে নিয়েছিল, যা ওই অঞ্চলের অভ্যন্তরে একটি বড় সমস্যা বলেই বিবেচিত হচ্ছিল ফিলিস্তিনের সরকারব্যবস্থার ভেতর ঐক্য সংহতি না থাকার কারণ দেখিয়েও অনেক আরব রাষ্ট্র নিজেদের বিষয়ে সম্পৃক্ত করার বিষেয়ে অনাগ্রহ দেখায় তাদের প্রশ্ন, যদি ফিলিস্তিনেরই সংকটের ক্ষেত্রে ঐক্য না থাকে, তা হলে অন্য দেশ তাদের সমস্যার সমাধানই-বা করবে কীভাবে? এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দোষ দেওয়াতেই তারা সীমাবদ্ধ নয় বরং তারা ফিলিস্তিনের জনগণকে বিষয়ে একতাবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে সমস্যা হলো, মানবাধিকার হরণ কিংবা তাদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে কোনো আলোচনাই এখন পর্যন্ত হয়নি এভাবে দায় পিএর ওপর চাপিয়ে শেষ পর্যন্ত আরব দেশগুলো নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে আরব অঞ্চলের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া ফিলিস্তিন নাজুক অবস্থায় আছে৷ আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাদের তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘও বিষয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে৷ অথবা বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে আছে আপাতত ফিলিস্তিনের সংকট আরব অঞ্চলের জন্য একটি দগদগে ঘা

অবস্থাদৃষ্টে ফিলিস্তিনের মানুষকেই সংঘবদ্ধ হয়ে নিজের স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এমনকি তাদের ডায়াস্পোরাদেরও সংগঠিত হতে হবে৷ ফিলিস্তিনের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, সিভিল সোসাইটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও নানাভাবে এখানে যুক্ত হতে পারে আপাতত আরব অঞ্চলের ভূমিকা বিষয়ে নির্ভরযোগ্য নয়৷ কিন্তু ভবিষ্যতে তারা হয়তো নানাভাবে এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে৷ সে জন্য তাদের নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুসংহত শাসনের দিকে আগে পৌঁছতে হবে

 

  •  পরিচালকরিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস এট আরব সেন্টারওয়াশিংটন ডিসি

 

আল জাজিরা থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা