× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

দেশহিতৈষী পরমাণুবিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া

লোপা মমতাজ

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩ ০৯:১৪ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ড. ওয়াজেদ মিয়া প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন বিজ্ঞানী। তার সমগ্র জীবনে মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। বিজ্ঞানকে সামাজিক উন্নয়নে আরও অর্থবহ করে তোলার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার নতুন নতুন সুযোগের সন্ধানে মত্ত ছিলেন আজীবন। রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে অবস্থান করেছেন ঠিকই, কিন্তু ক্ষমতার মোহ তাকে স্পর্শ করেনি। খুব সাদামাটা একটা জীবন কাটাতেই পছন্দ করেছেন আজীবন।

একটা উন্নয়নশীল দেশে অনেক সময় বিজ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞানীদের প্রয়োজনীয়তা অনেকে বাস্তবতাবর্জিত এবং অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। কিন্তু তিনি মনে করতেন একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই জাতির জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে। তার জীবনের কর্মময় সময়গুলো তিনি নিবেদন করেছেন বিজ্ঞানচর্চায়। তিনি বলেছিলেন, আমাদের চাহিদাকে মাথায় রেখে যথোপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করাটা বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব এবং অবশ্যই নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিজ্ঞান এবং উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে হবে। জ্বালানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা শিল্পায়নের সংকট নিরসনে পরমাণুবিজ্ঞানের অনেক সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। বিজ্ঞানের জ্ঞাননির্ভর একটি ভবিষ্যৎ সমাজ তার লক্ষ্য ছিল।

১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা আব্দুল কাদের মিয়া এবং মা ময়েজুন্নেসা। তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে ওয়াজেদ মিয়া সর্বকনিষ্ঠ। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি ও পীরগঞ্জ থানার হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ১৯৫৬ সালে এই স্কুল থেকে ডিস্টিংশনসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে বোর্ডের মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।

তিনি কখনও রাজনীতিবিদ হয়ে উঠতে চাননি। আবার রাজনীতিবিমুখও ছিলেন না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১-৬২ শিক্ষাবছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে আণবিক শক্তি কমিশনে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তাকে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়। তিনি ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। সেই সময়ই দেশের মাটিতে সংঘটিত হয় ইতিহাসের বর্বরোচিত এক হত্যাযজ্ঞ। ওই বছর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তারপর ওয়াজেদ মিয়া পরিবারসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়েছেন মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তির দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ড. ওয়াজেদ মিয়া সাতটি পাঠ্যবই লিখেছিলেন, এর মধ্যে ছয়টিই ইতোমধ্যে প্রকাশিত। তার অনেক গবেষণামূলক ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

২০০৯ সালের ৯ মে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী তুখোড় মেধাবী এই মানুষটি। আশা করি দেশের নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানীরাও তার বিজ্ঞানচর্চা দ্বারা অনুপ্রাণিত হবেন। আজ এই শোকাবহ দিনে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি।

  • লেখক ও সাংবাদিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা