× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মেধাস্বত্ব স্বীকৃতি

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩ ০৭:৪৯ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অনস্বীকার্য, মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুতনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে দেশের ভূমি-গৃহহীন পরিবারের হাতে জমি ও সেমিপাকা বাড়ির দলিল প্রদান সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শুধু বিরল নয়; দৃশ্যমান মানবকল্যাণে বিশ্বশীর্ষ পটভূমি নির্মাণ করেছে। মহান মুজিববর্ষেই প্রধানমন্ত্রী এই অভূতপূর্ব ও বিস্ময়কর অধ্যায় রচনায় উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থাকল্পে দেশের সব গৃহহীনকে নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেওয়ার জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে প্রায়োগিক ব্যবস্থা গ্রহণে বহুলাংশে সফল হয়েছেন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেশের ভিক্ষুক-ছিন্নমূল-বিধবা-দিনমজুর- বেদে-দলিত-হরিজন-ট্রান্সজেন্ডারসহ বহুকালব্যাপী ভাসমান এসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে ‘স্বপ্নের স্থায়ী নীড়' উপহার দিয়ে যথার্থ অর্থে সামাজিক নিরাপত্তায় প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্বনন্দিত হয়েছেন। সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য শেখ হাসিনা সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। তারই অংশ হিসেবে সমাজের মূলধারার মানুষের সঙ্গে জলবায়ু উদ্বাস্তু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, ভিক্ষুক, বেদে, দলিত, হরিজনসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যও জমিসহ ঘর প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা। অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে সৃজনশীল কর্মের মেধাস্বত্বের স্বত্বাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। মানুষের কল্যাণে এমন পদক্ষেপ ইতিহাসের নন্দিত অধ্যায় হয়েই থাকবে। কল্যাণের আলোয় আলোকিত হচ্ছে সমাজ। ‘আশ্রয়ণ : অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল'কে সৃজনশীল মেধাকর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।

১৩ এপ্রিল ২০২৩ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত তথ্যমতে, কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সনদে সৃজনশীল কর্মের প্রণেতা (স্বত্বের অংশ) এবং সৃজনশীল কর্মের স্বত্বাধিকারী হিসেবে ‘শেখ হাসিনা'র নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সচেতন মহলসহ দেশের আপামর জনগণ সম্যক অবগত আছেন, ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন নোয়াখালী জেলার চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে ভূমি-গৃহহীন অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে ১৯৯৭ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সেন্টমার্টিন পরিদর্শন করে আক্রান্ত ভূমি-গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ভূমি গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনে ১৯৯৭ সালে 'আশ্রয়ণ' নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২২ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি ভূমি গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। আশ্রয়ণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থাসহ গৃহ নির্মাণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়েছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে। প্রতি পরিবারের পাঁচ সদস্য হিসেবে মোট উপকারভোগী ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।

‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহ-ভূমিহীন থাকবে না' মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার যথার্থ বাস্তবায়নে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০ প্রণয়ন করা হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে সারা দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করা হয়। তার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬০ হাজার ১৯১টি এবং ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত মোট ঘরের সংখ্যা হলো ১ লাখ ১৭ হাজার ২৯টি। কৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪টি এবং চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তর হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর। ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়সহ মোট হস্তান্তরিত একক গৃহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি। বিভিন্ন সূত্রমতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জানা যায়, আশ্রয়ণের ফলে এ পর্যন্ত দেশের ৯টি জেলা এবং ২১১টি উপজেলা ভূমি-গৃহহীনমুক্ত হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের এই নতুন পদ্ধতি ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনা মডেল' হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। এর ছয়টি বৈশিষ্ট্য তথা-উপার্জন ক্ষমতা ও সঞ্চয় বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী-সম্মানজনক জীবিকা ও সামাজিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা-নারীদের ঘরের অর্ধেক মালিকানা দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়িয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন-ব্যাপক হারে বনায়ন ও বৃক্ষ রোপণ করে পরিবেশের উন্নতি সাধন এবং গ্রামেই শহরের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি আশ্রয়ণ প্রকল্পকে অধিকতর সমৃদ্ধ করেছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের মেধা ও শ্রম দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের সম্মানজনক জীবন নির্বাহের স্বপ্ন সার্থক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের কারণে সর্বশেষ যে রাষ্ট্রীয় সমীক্ষা, যেখানে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে জনসংখ্যা শতকরা দশ ভাগ থেকে পাঁচ দশমিক আটে নেমে এসেছে। এটি মূলত আশ্রয়ণের নানামুখী উদ্যোগের কারণেই সম্ভব হয়েছে।

ভূমি-গৃহহীন, অসহায় অসচ্ছলদের পুনর্বাসনে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তারই উপকারভোগী হিসেবে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় হাটিকুমরুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ০.66 একর জমিতে চারটি পাঁচ ইউনিটের সেমিপাকা ব্যারাকে তৃতীয় লিঙ্গের ৫০ জন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়। তাদেরকে পাকা ঘরের পাশাপাশি জীবিকার জন্য সেলাই মেশিন চালানো, গরু পালন এবং সবজি চাষের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এই উপকারভোগীদের একজন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আজীবন ভেবেছি অন্য দশটা মানুষের মতো আমার জীবনটা এক নয় কেন? পথে পথে ঘুরে মানুষের থেকে ভিক্ষা করে সারাটা জীবন কেটেছে। নিজের কোনো ঠিকানা ছিল না। এখন প্রধানমন্ত্রী মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এ জন্য তার প্রতি মন থেকেই কৃতজ্ঞতা জানাই।' পাশাপাশি দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলার বাঙ্গি বেচা ব্রিজসংলগ্ন পল্লীতেও এর আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের ১২৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের এই বিজয় সত্যিকার অর্থে পবিত্র সংবিধানের ধারা ২৮ (১) সহ অন্যান্য ধারায় সন্নিবেশিত মানবতা-মানবিকতা-মনুষ্যত্বকে মর্যাদাসীন করে দেশের সমাজ ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অনন্য দৃষ্টান্ত। 

  • শিক্ষাবিদ ও সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা