× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মে দিবসের ডাক

লোপা মমতাজ

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩ ০৪:৩৫ এএম

আপডেট : ০১ মে ২০২৩ ০৪:৫৩ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

মে দিবস, শ্রমিক দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস- যে নামেই ডাকা হোক না কেন, দিনটি বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সংহতির দিবস। বাংলাদেশেও এই দিবসটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশে শ্রমিকরা কতটুকু শ্রদ্ধা বা সম্মান পাচ্ছেন? দেশে এত উন্নতি এত অগ্রগতি সাধিত হলেও শ্রমিকের অধিকার কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? কতক্ষণ কাজ করলে একজন শ্রমিক কত মজুরি পাবেন? শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কতক্ষণ হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর কি শ্রমিক পেয়েছেন? যদি প্রশ্নের উত্তর থেকে থাকে, তবে তা বাস্তবায়ন হয় না কেন? কেন একজন শ্রমিক নিরলস কাজ করেও সময়মতো সম্মানজনক মজুরি পায় না? প্রশ্নগুলো কঠিন, আর উত্তরও মেলা ভার...

তবে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে এ রকম অসংখ্য প্রশ্ন থেকে ক্ষোভ, তার পর দাবি উঠেছিল আট ঘণ্টা কর্মদিবসের। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি যতই ন্যায়সঙ্গত মনে হোক না কেন, মালিকরা সেই আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলেন। তাদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হন। তার পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে পালনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। ১৮৯১ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। পরে ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পহেলা মে তারিখে মিছিলের শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে সব শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই মে দিবস সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা দিনটি পালন করতে শোভাযাত্রা, শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকে।

১৮৮৬ থেকে ২০২৩, শ্রমিকদের এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের ১৩৭ বছরে আমাদের দেশের কাজের পরিবেশ কতটুকু উন্নতি করতে পেরেছি? শ্রমআইন ২০০৬-এর অধীনে অন্তর্ভুক্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলো হলো : পরিচ্ছন্নতা, বায়ু চলাচল এবং তাপমাত্রা ব্যবস্থা, কৃত্রিম আর্দ্রকরণ, জনবহুলতা, আলোর ব্যবস্থা, অগ্নিসংক্রান্ত ঘটনা, অতিরিক্ত ওজন, বিল্ডিং এবং যন্ত্রপাতির ওপর বা কাছাকাছি কাজ করা, বিস্ফোরক বা দাহ্য গ্যাস ও ধুলা, বিপজ্জনক ধোঁয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা, ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম, ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা। মালিকপক্ষ তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করতে এবং কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য একটি সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাধ্য। আমাদের

দেশে ইতোমধ্যে কলকারখানা পোশাকশিল্পে ঘটে যাওয়া বেশকিছু দুর্ঘটনা থেকে লক্ষ করা যায়, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা বিষয়টিতে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়াও ন্যায্য মজুরির জন্য শ্রমিকদের বারবার আন্দোলনে মাঠে নামতে হচ্ছে। আমরা দেখেছি রানা প্লাজা, তাজরীন গার্মেন্টস, রূপগঞ্জসহ অনেক দুর্ঘটনায় অসংখ্য শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। অনেক পরিবার হারিয়েছে তাদের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুর্ঘটনার বিচার চেয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে বছরের পর। শ্রমিকের শ্রমে এবং ঘামে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যাদের পরিশ্রমের ফল এই উন্নয়ন - সময় এসেছে তাদের দেনা ফিরিয়ে দেওয়ার। শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আশা করি দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন এক জোট হয়ে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি মিটিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে অঙ্গীকারবদ্ধ হবে।

লেখক ও সাংবাদিক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা