× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণ

রাশিয়ার ফাঁস হওয়া যুদ্ধের গোপন নথিতে ভয়ংকর তথ্য

ডেভিড ইগনাটিয়াস

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:১৭ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

সিআইএ প্রধান জেমস জে অ্যাঙ্গলটন একবার আমাকে বলেছিলেন, একজন গুপ্তচর ডাবল নাকি ট্রিপল এজেন্ট তা মুখ্য নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি পার্থক্য করতে জানেন। আমার বয়স তখন ২৯। সদ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে নেমেছি। অ্যাঙ্গলটনের কথার মাথামুণ্ডু সেই সময় বুঝতে পারিনি। সম্প্রতি মার্কিন সামরিক বাহিনী ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত গোপন নথি ফাঁস করার পর তার কথার অর্থোদ্ধার করতে সমস্যা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়াই কি ইউক্রেনের দুর্বলতা অথবা তাদের দুর্বল করে দেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধের এই গোপন নথি ফাঁস করেছে। নাকি ইউক্রেনই এই নথি ফাঁস করেছে। বেশ কয়েকজন রাশিয়ান ব্লগার এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য দিয়েছেন। তাদের মতে, এটা একটা নতুন পরিকল্পনা। ক্রেমলিনে অবস্থানরত নীতিনির্ধারকরা যেন ইউক্রেনকে দুর্বল ভাবে, সেভাবেই নথি সাজানো হয়েছে। সামনে তারা হয়তো পাল্টা আঘাত করে রাশিয়াকে চমকে দিতে চাচ্ছে। তাই এমন সময়ে নথি ফাঁস করা হয়েছে।

অ্যাঙ্গলটনের ঘোষিত বক্তব্যটি এই মুহূর্তে কতটা প্রাসঙ্গিক, তাও বোঝার মুহূর্তে আমরা অবস্থান করছি। যেকোনো নিরাপত্তাবিষয়ক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তার পর্যবেক্ষণে নিহিত। সঠিক তথ্যটি শনাক্ত করতে হলে আপনাকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। প্রতিটি ঘটনার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কি কাজ করছে তা আগে বোঝা জরুরি। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নথিগুলোর বেশকিছু ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন। প্রশাসনিক দপ্তরের এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, 'আমরা নথিগুলো এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। তবে প্রথম দেখায় নথিগুলো আসল বলেই মনে হচ্ছে।' দার্শনিকদের মতে, ইন্টেলিজেন্স একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া; যেখানে কোনো জানা বিষয় সম্পর্কে আমরা আরও কিছু জানার প্রক্রিয়া খোঁজার চেষ্টা করতে পারি। এই প্রক্রিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত গোপন রাশিয়ান নথির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব। প্রথমেই নথির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে মনোযোগ ফেরানো যাক। আমরা বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে বিচার করার চেষ্টা চালাই। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে আমরা বিদ্যমান নথির প্রাসঙ্গিকতা ও প্রামাণ্যতা যাচাই করে নিতে পারি। প্রথমত, এই যুদ্ধে ইউক্রেনের কাছে মজুদকৃত এয়ার ডিফেন্সে প্রয়োজনীয় অস্ত্রের অভাব রয়েছে, যা এই যুদ্ধে তাদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন করবে তা আর বলে দিতে হবে না। সমস্যাটি এক সপ্তাহ আগে থেকেই আমরা আন্দাজ করতে পারছিলাম যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তড়িঘড়ি করে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের এয়ার ডিফেন্স অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করে। নতুন এই প্যাকেজে তারা প্যাট্রিয়টের জন্য এমুনিশন এবং উচ্চ গতিসম্পন্ন আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (হিমারস) সংযুক্ত করেছে। এ ছাড়া প্যাকেজে রয়েছে, মিসাইল ব্যাটারি, নয়টি বন্দুক বহনকারী ট্রাক এবং ১০টি এন্টি-ড্রোন লেজার সিস্টেম, নতুন এয়ার সার্ভেইলেন্স রাডার, এন্টি-এয়ারক্রাফট এমুনিশন এবং গ্র্যাড রকেট। ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখে নথিভুক্ত একটি রেকর্ডে ইউক্রেনের আকাশপথে যুদ্ধরসদের অভাবের তথ্যটি নিঃসন্দেহে ভয়ংকর। আকাশপথের যুদ্ধে ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর কাছে বিমান বলতে সোভিয়েত-এরা-এসএ-১০এস এবং সোভিয়েত-এরা-এসএ-১১এস। অধিকাংশ সময় ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ হাজার ফিট ওপরে তারা যুদ্ধ পরিচালনা করে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নথিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তবে নথিতে আশঙ্কা করা হয়েছে, ৩১ মার্চ এসএ-১১এস বিমানটিকে যুদ্ধের জন্য ছাড়া হবে এবং ২ মে এসএ-১০এস যুদ্ধের ময়দানে যাত্রা করবে। অন্য কোনো যুদ্ধযানই রাশিয়ান যুদ্ধযানের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে না। আর এই সংকট এতটাই ব্যাপক যে দ্রুত যুদ্ধরসদ জোগাড় করতে হলে একই সময়ে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে কঠিন একটি কাজ। অর্থাৎ ইউক্রেন যদি আকাশপথে যুদ্ধাস্ত্রের অভাব ঘোচাতে ব্যর্থ হয়, তা হলে এই আকাশপথেই রাশিয়া যুদ্ধজয়ের পথ উন্মুক্ত করতে সক্ষম হবে। আকাশপথেই প্রতিষ্ঠা হবে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। তখন রাশিয়া যখন ইচ্ছে যেভাবে ইচ্ছে ইউক্রেনের ভূমিতে আঘাত হানতে পারবে। এ বিষয়গুলোও ওই নথিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ আপাতত রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ইউক্রেনের নেওয়া পদ্ধতি নস্যাৎ হয়ে যাবে। তাদের সেনাবাহিনী এই মুহূর্তে পাল্টা হামলা কিংবা শহরে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারছে। কিন্তু আকাশপথে হামলা এলে তা আর সম্ভব হবে না। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পশ্চিমী প্রত্যাশার সঙ্গে ইউক্রেনের চাহিদা পূরণের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাত্ত্বিকভাবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউক্রেন কিছুটা সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু এই খোঁড়া নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার কিছুই হয়নি। যুদ্ধাস্ত্রে ইউক্রেনের খরচও বিবেচনাপ্রসূত না হওয়ায় এবং পশ্চিমা সাহায্যও চাহিদার থেকে কম হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। ওই নথিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধাস্ত্রের জন্য ইউক্রেন এতটাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইসরায়েলের কাছে সাহায্য প্রত্যাশা করছে। অথচ এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনকই হওয়ার কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসার লাভ বিবেচনা করে দেশটিতে অসংখ্য অস্ত্র কারখানা গড়ে তোলা হয়। তাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রই জাপান ও জার্মানিকে কোণঠাসা করে দিয়েছিল। বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন কোনো উদ্যোগ এখনও নিতে দেখা যাচ্ছে না কেন? তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে একটু বেশিই গা বাঁচিয়ে চলছে। ব্রিটেন ও রাশিয়া যেখানে অস্ত্র সরবরাহ করছে, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এভাবে গা বাঁচানোর মানে কি? এর মানে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে এখনই মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না। প্রশাসনিকভাবে সতর্কতার বিষয়টিও নজর এড়িয়ে যাওয়ার নয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে উপকূলের ১২ মাইল পর্যন্ত সার্ভেইল্যান্স প্লেন যেতে পারলেও ক্রিমিয়ার খুব কাছে যাওয়ার পক্ষপাতী তারা ছিলেন না। এতটা ঝুঁকি নেওয়া নাকি ঠিক নয়। আমরা অবশ্য জানতে চাইব, কেন নয়? সাংবাদিকরা অবশ্য বলছেন, বসন্ত এলেই ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ চালাবে। এমনকি মার্কিন প্রশাসনও তাই মনে করছে। কিন্তু ১৯৪৩ সালে উইনস্টন চার্চিলের ওই বিখ্যাত বক্তব্যটি ভুলে গেলে চলবে না, যুদ্ধে সত্য এতটাই মূল্যবান যে তার সঙ্গে একজন দেহরক্ষী নিযুক্ত করতে হবে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত গোপন নথি আমাদের ভিন্ন এক গল্প জানায়। এ গল্প মোটেও স্বস্তিকর নয়।

  • মার্কিন সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা