বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস
অলঙ্করন : প্রবা
১৯৪৬
সালে অর্থাৎ জাতিসংঘ
প্রতিষ্ঠার পরের বছর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
রূপরেখা তৈরির জন্য
একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিশন
গঠন করা হয়। এ কমিশনের মতামতের
ভিত্তিতে ১৯৪৮ সালের
৭ এপ্রিল বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা
(ডব্লিউএইচও) গঠন করা হয়। এ সংস্থাটি মানুষের
সুস্থতা রক্ষা এবং জীবন রক্ষার
শপথে পরিচালিত হবে বলে জানায়। প্রতিষ্ঠার
দুই মাস পর অর্থাৎ ১৯৪৮
সালের ২৪ জুন জেনেভায় সংস্থাটির
প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয়। এ সম্মেলনে
জাতিসংঘের তৎকালীন ৪৬টি
সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য
দিবস পালনের প্রস্তাব
উপস্থিত প্রতিনিধিরা আলোচনা
সাপেক্ষে নির্ধারণ করেন। ওই সম্মেলনেই সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয় ১৯৫০
সালের ৭ এপ্রিল
থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য
দিবস পালন করা হবে। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থার জন্মদিনেই
পালন করা হবে স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি
বছরের মতো এ বছরও উদযাপিত
হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য
দিবস।
প্রতি
বছর সারা বিশ্বের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য
সম্পর্কিত বিষয়কে প্রাধান্য
দিয়ে একটি মূলমন্ত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
নির্ধারণ করে থাকে। এ বছর বিশ্ব
স্বাস্থ্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য
‘স্বাস্থ্য সবার জন্য’। এ প্রতিপাদ্যের নিরিখেই
বিশ্বব্যাপী নানা অনুষ্ঠান
আয়োজিত হয়। দুই বছরের বেশি
সময় করোনা মহামারি
আমাদের স্থবির রেখেছিল। তখনও
স্বাস্থ্য খাত ছিল ব্যস্ত। করোনার
পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন
সময়ে ডায়রিয়া,
ডেঙ্গু ও অন্যান্য
রোগের প্রাদুর্ভাবেও স্বাস্থ্য
খাতকে সামাল দিতে
হয়েছে। এ সময়ে
স্বাস্থ্য খাতে বেশকিছু
উদ্যোগও সরকার নিয়েছে। স্বাস্থ্য
খাতে ব্যাপক উন্নতির
পরও নানা প্রতিবন্ধকতা
এখনও জিইয়ে আছে। মূলত
রোগীদের অসচেতনতা এবং কতিপয় অসাধুর
অপতৎপরতায় স্বাস্থ্য খাতে
নানা সমস্যা তৈরি
হচ্ছে। তবে সম্প্রতি
সরকার বিভিন্ন বিষয়ে
সচেতনতা কার্যক্রম চালু
করায় রোগী এবং চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্টরা
সতর্ক হচ্ছেন।
বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থার এ বছরের প্রতিপাদ্যটি
একবার ভেবে দেখা
প্রয়োজন। বিশ্বে জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে ক্রমেই
আমাদের জীববৈচিত্র্য হুমকির
মুখে পড়ছে। আবহাওয়া
ও জলবায়ুর পরিবর্তন
এবং পরিবেশ দূষণের
নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে
আমাদের শরীরে। শুধু
তাই নয়,
খাদ্য উৎপাদনে রাসায়নিক
উপাদানের ব্যবহার আমাদের
স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক
প্রভাব ফেলছে। আবাসন
সংকট প্রকট এবং সুশিক্ষার ক্ষেত্রে
সীমিত সুযোগ পাচ্ছে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে
সুযোগের অভাব,
বৃহত্তর লিঙ্গবৈষম্য,
নিরাপদ পরিবেশ,
বিশুদ্ধ পানি-নির্মল বায়ু
ও নিরাপদ খাদ্য
সংকট এবং সংকটাপন্ন
স্বাস্থ্য পরিষেবা। এসব বিষয় আমাদের
সমাজ এবং অর্থনীতি
মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমনকি
কমে আসছে মানবদেহে
অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা। এসব সমস্যার কথা বিবেচনায় ব্যক্তির
স্বাস্থ্যের দিকেই মনোযোগ
বাড়ানো জরুরি। এ সমস্যাগুলোর প্রতিকার
ও প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য
আমাদের প্রত্যেকের জীবনযাত্রার
মান উন্নতকরণে,
সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থ
পরিবেশ নিশ্চিত করার
ক্ষেত্রে বিশ্বনেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করা জরুরি। সবার
জন্য সমান সুযোগ
সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বনেতাদের
বদ্ধপরিকর থাকতে হবে। একসঙ্গে
কাজ করার ক্ষেত্রে
স্বাস্থ্যসেবার অসম্পূর্ণ দিকগুলো
বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে
হবে। সমাধানগুলো বাস্তবায়ন
করতে হলে ক্ষতিগ্রস্ত
সম্প্রদায় এবং মানুষের
সঙ্গে একত্রে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন
হবে নির্ভরযোগ্য তথ্য/ডেটা সংগ্রহ
করা। সময়োপযোগী এবং নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যতথ্য
এমনভাবে সংগ্রহ করতে
হবে যেন লিঙ্গ, বয়স,
উপার্জন, শিক্ষা,
মাইগ্রেশনের স্থিতিশীলতা,
অক্ষমতা, ভৌগোলিক অবস্থান
এবং জাতীয় প্রসঙ্গ
ইত্যাদি পৃথকভাবে প্রাধান্য
পায়। কেবল তখনই
বিশ্ব জনসংখ্যার উপগোষ্ঠীগুলোতে
অসম্পূর্ণতার মূল্যায়ন এবং কার্যকর পদক্ষেপ
গ্রহণ করা সম্ভব
হবে।