বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
মো. খসরু চৌধুরী
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:৫১ এএম
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:৫১ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
বিশ্ব অটিজম দিবস স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জাতিসংঘের সাতটি দিবসের মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছর ২ এপ্রিল পালিত হয় বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা, যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা লক্ষ করা যায়। শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা, এতে ব্যক্তির মধ্যে বাইরের জগৎ সম্পর্কে অতি সামান্য আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃতপক্ষে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য মানুষ বা বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না বললেই চলে। বরং তার সব মনোযোগ যেন তার ইচ্ছা ও অনুভূতির মধ্যেই মগ্ন থাকে। অটিস্টিক শিশুর বিকাশ তিনটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়, যেমনÑ সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা; অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ না থাকা, কে কী করছে তা নিয়ে কৌতূহল না থাকা এবং অন্যের আচরণ বুঝতে না পারা। যোগাযোগ স্থাপনে বাধা; মুখের ভাষায় কথা বলতে না শেখা, কিছু কথা বলতে পারলেও অন্যের সঙ্গে আলাপচারিতায় সমর্থ না হওয়া এবং ইশারা-ইঙ্গিত করতে না পারা। আচরণের ভিন্নতা; পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করা, একই কাজ বারবার করা এবং একই খেলা বারবার খেলা।
অটিজমের পেছনে দুটি কারণ রয়েছেÑ জিনগত এবং পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশে এক সমীক্ষায় জানা যায়, অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ১৯৮০ সালে প্রতি ২ হাজার ৫শ জনে একজন ছিল অটিস্টিক এবং ২০১০ সালে ছিল ১১০ জনে একজন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু। বর্তমানে এই সংখ্যা ৫৪ জনে একজন (সিডিসি, ২০১৮ থেকে)। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপে (২০২০-২১) বর্তমানে বাংলাদেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬১ হাজার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি জরিপে (২০১৩ সাল) বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিস-অর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা)’-এর এক গবেষণায় বাংলাদেশে তিন বছরের নিচের শিশুদের অটিজমের হার ১০ হাজার জনে ১৭ জন। জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে ৩৪টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। দেশের সব জেলার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে একটি করে অটিজম কর্নার (১০৭টি) স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অটিজম রোগীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে অটিজম নিয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বজুড়েই নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সবার মধ্যে বেড়েছে সচেতনতা। বাংলাদেশেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় অটিজম আক্রান্তরা নানাভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি ও তাদের জন্য অবকাঠামোগত পরিবেশ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিবন্ধী শিশুরা যাতে সাধারণ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিবিড় শিক্ষাগ্রহণের জন্য প্রত্যেক প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে অটিজম কর্নার। প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। নীতিমালার আওতায় ৫০টি বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের সমাজের অনেকেই আছেন যারা প্রতিবন্ধীদের অবহেলা করেন। তাদের জানা উচিত প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। তাদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশেষ দায় থাকা উচিত। প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে হবে আমাদের সবাইকে।