× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংলাপ ও নির্বাচন ব্যবস্থার বিতর্কের বৃত্তে রাজনীতি

ড. মোসলেহউদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ০৪:৫৩ এএম

আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩ ২০:২১ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নিকট অতীতে এলডিসি সম্মেলনের পর দেশে ফিরে এক সংবাদমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ‘আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এজেন্সি অপতৎপরতা চালাচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য অমূলক নয়। দেশে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশি-বিদেশি নানা সংগঠন-গোষ্ঠী কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান নেয়। অন্য অনেক দেশে নির্বাচন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষত পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোয় নির্বাচন প্রক্রিয়াটি নির্দিষ্ট একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয় তার স্বাভাবিক গতি মেনে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। বিগত দুটি নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল নানা বিষয়ে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। এবারও প্রধান বিরোধী দলসহ সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেশ কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। ভবিষ্যতে নির্বাচনী পরিবেশ কেমন হবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বিভিন্ন মহলে বেড়ে চলেছে। এর আগেও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ লিখেছি, দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি বলে অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো নির্বাচনী প্রথাও আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়ছে সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন বাদেও ছোটখাটো বিষয়েও সংঘর্ষ দৃশ্যমান হচ্ছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের নির্বাচনেও আমরা দেখলাম অনাকাঙ্ক্ষিত চিত্র। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা এবং রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিবেশ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে উৎকণ্ঠিত করে তুলেছে। অধিকাংশ মানুষই আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হবে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সে আভাসই দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাসও কিন্তু স্পষ্ট করেই দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদেরও প্রতিবার তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশের আশ্বাস দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ভোটার থেকে শুরু করে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার বার্তা হিসেবে দেখতে হবে।


কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তাপ কোনোভাবেই কমছে না। বিশেষত দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল এবং ক্ষমতাসীন জোটের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সংলাপে বসে বিরোধের নিষ্পত্তি করুকÑ এমন দাবি বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত উঠছে। কিন্তু ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘কিসের সংলাপ! কাদের সঙ্গে সংলাপ?’ দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংলাপ ফলপ্রসূ যে নয়, এ কথা বহু পুরোনো। সম্প্রতি সংলাপ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত-প্রচারিত নানা খবর এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট করে। আমরা দেখছি, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসছে। সংবাদমাধ্যমে এও বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। আবার সংলাপের এ আহ্বান নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির খবরও সংবাদমাধ্যমেই উঠে আসছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে এমন ধূম্রজালের কোনো অবকাশ ছিল না। তার পরও ভুলে গেলে চলবে না, তৃতীয় বিশ্বে ও উন্নয়নশীল অনেক রাষ্ট্রেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে থাকে। এর কারণ, স্থানীয় সরকার কাঠামোর দুর্বলতা এবং স্বাধীন গণতান্ত্রিক কাঠামোর অভাব। জাতীয় সংসদের বর্তমান চিত্র যদি পর্যালোচনা করা হয় তাহলে বলতে হয়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। যেহেতু বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে তাই এ দলটিকেও অন্যতম প্রধান বিরোধী দল মনে করা সঙ্গত। রাজনৈতিক উত্তপ্ততায় রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদের মুখে উত্তপ্ত কথা শোনাই যায়। এ ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ভাবতে হবে আমাদের।


সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের এবং সরকার নির্বাচনের সহযোগী শক্তি। হয়তো সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব তাদের কারওই নয়, কিন্তু নির্বাচনী পরিবেশ সুন্দর করার দায়িত্ব তো তাদের নিতেই হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দলের গঠনমূলক ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রেও তাদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনে। বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রশ্নমুক্তভাবে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি বিরোধী দলেরও কিছু কর্তব্য রয়েছে। গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে না পারায় সরকারের কাঁধে এ বাড়তি দায়িত্ব চেপে বসে। অনেকেরই হয়তো স্মরণে আছে, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর দুই বছর ইন্টেরিয়াম সরকারও দায়িত্ব পালন করেছে। এ রকম যেন না হয় সেজন্য সরকারকে সতর্কতামূলক অবস্থান নিতে হবে। সরকারকে দূরদর্শী, সর্বজনগ্রহণযোগ্য ভূমিকা পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে।


প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিও মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার নতুন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তাদের একটিই দাবিÑ সরকারের পদত্যাগ। নিজেদের দাবি থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ তাদের বক্তব্যে পাওয়া যাচ্ছে না। যে দলই ক্ষমতাসীন হোক কিন্তু প্রতিটি দলের নীতিনির্ধারকদের যথাযথ দায়িত্ব পালনই নির্বাচনী পরিবেশ অনেকাংশে নির্ধারণ করে দেয়। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোই পরিবেশ নির্ধারণ করে তাদের নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড দিয়ে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর সময়ে রাজনৈতিক দলকে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেহেতু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি এবং বিষয়টি নিয়ে এখনও নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না; সেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোকে বাড়তি দায়িত্ব নিতেই হবে দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থে। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ ও ছাত্র সংগঠনের মধ্যে অরাজনৈতিক কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণে বিব্রত হতে হচ্ছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী এমনকি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে। যেহেতু দীর্ঘদিন তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তাই কীভাবে বা কোন উপায়ে ক্ষমতা অধিগ্রহণ করেছে এমন প্রশ্ন একেবারে অবান্তর। বরং বলতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্রমান্বয়ে নিজেদের সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে বিরোধী দল আছে, জাতীয় সংসদ আছে এবং সরকারও স্বাভাবিক গতিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পদত্যাগের যুক্তিসংগত কারণ নেই। বিএনপি তাদের এক দফা দাবিতে অবিচল। কিন্তু সরকার পদত্যাগ করার পরও তো আরেকটি সরকারকে ক্ষমতায় বসতে হবে। ক্ষমতায় বসতে হলে তাদেরও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আর এ গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হলে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিকল্প নেই। বিএনপি সরকারের পদত্যাগের দাবি করছে। কিন্তু সরকার পদত্যাগের পর সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়েও তাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে এমনটিই প্রত্যাশিত। যে প্রক্রিয়ায় হোক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত সংযম ও সহনশীলতা।


দেশে পরিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান না থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর ভূমিকা নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন এর একটি। ২০০১-এর পর চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। ওই জোট সরকারই প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে প্রধান পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত করার ব্যবস্থা করে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করেছিল। তখন বিরোধী দলগুলো সরব হয়ে উঠেছিল। কোনো অবস্থায়ই এমন একপক্ষীয় নির্বাচন আয়োজন করতে দেওয়া যাবে না- এমনটিই তখন নেতাদের বক্তব্যে পাওয়া গেছে। তাই বিরোধী দলের কেউই ওই সিদ্ধান্ত মানেনি। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হলো যে কারণে প্রায় দুই বছর দেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে অগণতান্ত্রিক শাসকরা দেশ পরিচালনা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পতনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। আমরা যেন ফের অতীতের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে না পড়ি, সেজন্য সরকারকে সতর্ক অবস্থান নিতে হবে। বিরোধী দলকেও দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। দেশের কথা বিবেচনা করতে হবে সবার আগে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দেশপ্রেমিক হবেন এমনটাই প্রত্যাশিত। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে তাদের দায়বদ্ধতার জায়গাগুলো ভুলে গেলে রাজনীতির উত্তাপ কমানো যাবে না। আমাদের প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সতর্কতামূলক অবস্থানে থাকবে। কোনো অস্থিতিশীলতা কিংবা বাহ্যিক চাপ যেন পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে তা নিশ্চিত করার দায় কমবেশি সবার। আমরা চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে উঠুক এবং একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তৈরির পথ সুগম হোক। বিদ্যমান সংকট নিরসনে আলোচনার বিকল্প নেই। জেদ ধরে যার যার অবস্থানে বসে থাকলে সংকট বাড়বে। এমনটি কাম্য হতে পারে না। নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক।


- অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা