সম্ভাবনা
সুবর্ণা আক্তার
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ০৪:৩৯ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
ফাল্গুনের প্রখর রোদে বাতাসে মাঝে মাঝে দোল খাচ্ছে মনকাড়া সূর্যমুখী ফুলগুলো। ক্ষণে ক্ষণে পাখি আর কীটপতঙ্গের দল ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ যেন অপরূপ এক দৃশ্য। আকৃষ্ট করছে সূর্যমুখী ফুলবাগান। সৌন্দর্যের এই আকর্ষণ বাদেও ভোজ্যতেল হিসেবে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখীর তেলই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। তা ছাড়া বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ হ্রাস নানা সমস্যা তৈরি করেছে। এমন সময়ে দেশের কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
গত বছর ঈশ্বরদী উপজেলার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিশাল এলাকাজুড়ে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটিই সূর্যমুখী চাষের জন্য উপযুক্ত। তাই কৃষকের মধ্যেও আগ্রহ বেড়েছে সূর্যমুখী চাষে। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধালিটার তেল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে সাত মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। আর বিঘায় তেল উৎপাদন হবে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজারমূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বিঘাতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা। এই শস্যের কোনো কিছুই ফেলনা নয়। কারণ সূর্যমুখীর কাণ্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।
সূর্যমুখী চাষে তেমন ঝামেলা নেই। দুটি সেচ এবং নিয়মিত ফুল পর্যবেক্ষণ করলেই হয়। পাট কিংবা ধান চাষে যে পরিমাণ শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়, সূর্যমুখীর ক্ষেত্রে তা প্রয়োজন হয় না। দেশের বেশ কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি সূর্যমুখী চাষে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নিয়েছিল গত বছর। নতুন বছরেও সূর্যমুখী চাষে দেখা যাচ্ছে অপার সম্ভাবনা। এ ফসলের চাষ এখনও নতুন। ২০২১ সালে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়। চাষাবাদ পদ্ধতি তুলনামূলক সহজ হলেও উত্তোলন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে এখনও অনেক কৃষকের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই। দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে অনেক চাষিই পর্যাপ্ত লাভ পাচ্ছেন না। অনেক তরুণই বর্তমানে সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। গ্রামীণ অঞ্চলে উপযুক্ত মাটি ও পরিবেশ পেলেই তারা সূর্যমুখী চাষ করছেন। যেহেতু বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী উৎপাদনের কাজ বেশিদিন শুরু হয়নি, তাই সূর্যমুখী চাষ সম্পর্কে কৃষককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এজন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। সূর্যমুখী ফুলের তেল মানে ও গুণে ভাল। বিক্রি করে লাভের মুখও দেখা যায় সহজে। এই সম্ভাবনাময় ফসলের চাষের সম্ভাবনাকে আঁকড়ে ধরতে হবে।