× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আশ্রয়হীনের আশ্রয়ে আনন্দধারা

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩ ০৪:২৯ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

একমুঠো চালের আশায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে সামান্য চালের জোগাড় হলে তাই ফুটিয়ে লবণ দিয়ে খেয়ে পেট ভরানো মানুষের সংখ্যা কমেছে। অভাব যাদের শুধু দু-মুঠো অন্নের জন্যই ঘুরিয়েছে, তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ ভাতের দেখা পেয়েছে। দ্রব্যমূল্য হাতের নাগালের বাইরে, তার পরও না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে। ক্ষুধার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নজর দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা বাসস্থানে। একটি ঘরের স্বপ্ন দেখা মানুষের সে স্বপ্নও আজ পূরণ হতে শুরু করেছে। একমুঠো ভাতের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো মানুষ ও খোলা আকাশের নিচে একটি নিরাপদ ছাউনিতে রাত কাটানোর কথা ভাবতে পারছে। লবণের সঙ্গে গরম ভাত আর রাতের অন্ধকারে, নিজের নিরাপদ আশ্রয়- এটুকু সুখের দেখা মানুষের হাতের নাগালে এসেছে। গৃহহীন মানুষকে গৃহের সুখ দেওয়ার উদ্যোগ আওয়ামী লীগ নেয় প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেই। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ড সফরে সেখানের মানুষের জীবনমান দেখেন। দেশে ফিরে তিনি হাতে নেন ‘একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্প। দূরদর্শী এই প্রকল্পটি ক্ষমতার পালাবদলে ২০০১ সালে বন্ধ হলেও আবার চালু হয় আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে। ১৯৯৭ সালেই গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘরের স্বপ্ন দেখা আশ্রয়ণ প্রকল্পটি মুজিববর্ষে এসে সম্প্রসারিত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, দ্বিতীয় ধাপে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ ৩৯ হাজার ৩৬৫টি পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'মুজিববর্ষের অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল। সেগুলো আমরা করোনার কারণে করতে পারিনি। তবে করোনা একদিকে আশীর্বাদও হয়েছে। কারণ আমরা এই একটি কাজের দিকেই (গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়া) নজর দিতে পেরেছি। আজকে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব।' ২১ মার্চ, ২০২৩ প্রধানমন্ত্রী দেশের ১৫৯টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা দেন, যার মধ্য দিয়ে দেশের ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা । ও ২১১টি উপজেলা ভূমিহীন-গৃ হলো।

প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে, ভালো কাজে বাধা আসে। কিন্তু সে বাধায় থেমে যায় না বড় কাজ। প্রায় ১৮ কোটি জনগোষ্ঠীর এই দেশে অসংখ্য মানুষ এখনও ঘরহীন, আশ্রয়হীন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে সবার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থার মতো মহৎ উদ্যোগটি দ্রুততম সময়ে উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছে দিতেই ঠিকাদার নিয়োগের মতো জটিল আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরাসরি ঘর নির্মাণ করা হয়। এতে কাজের যে সফলতা, নির্ধারিত সময়ে উপকারভোগীদের কাছে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেওয়ার যে আনুষ্ঠানিকতা, তা প্রশংসার দাবিদার। এত বড় একটি মহৎ উদ্যোগে দুর্নীতি-অনিয়মের হাতে গোনা কিছু চিত্রও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। কিন্তু তা পুরো প্রকল্পের চিত্র ছিল না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে পড়ার খবর বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে আসে, সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়রা অভিযোগ করে, ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইটের ব্যবহার হয়েছে, প্রয়োজনীয় সিমেন্ট দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের সত্যতা কতটা যাচাই হয়েছে বা নির্মাণের অল্প সময়ের মধ্যেই কেন ঘরগুলো ভেঙে পড়েছিল, সে বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত কমিটির কথা জানা গেলেও তার ফল জানা যায়নি। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠেছিল, সেসব ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জোরেশোরে শোনা যায়নি। সরকার ভালো উদ্যোগ নিয়েছে, বিপুলসংখ্যক ঘরহীন মানুষকে থাকার জায়গা করে দিচ্ছে, মানবিক এই শুভ উদ্যোগটি অল্প কিছু মানুষের অসততায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে, তা যেমন কাজের কথা নয়, তেমনি এত বড় একটি উদ্যোগে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিও থাকা অস্বাভাবিক নয়। এখন পুরো বিষয়টিকে প্রশ্নহীন করে তুলতে সবচেয়ে আগে জরুরি সচেতনতা। সেই সঙ্গে মহতী এই উদ্যোগ ঘিরে যেসব নেতিবাচক খবর আমাদের সামনে এসেছিল, সেই আলোকে আরও সচেতন, আরও সতর্ক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে এখন এই ঘরগুলো যেন মানুষের কাজে লাগে, যেন ঘরগুলোর সঠিক ব্যবহার হয়, সে দিকটিও নিশ্চিত করতে হবে।

যাদের ঘর দেওয়া হয়েছে, তারা যেন ঘরে থাকতে পারে, এলাকায় থাকতে পারে, সে জন্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়কেও উৎসাহিত করতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগই নিশ্চিত করতে পারে ঘরগুলোর সঠিক ব্যবহার। মানুষের মাঝে শহরমুখী হওয়ার যে প্রবণতা, তা কাজের জন্যই। কাজের অভাবেই শহরমুখী হওয়ার হার বেশি। এই জনস্রোতকে গ্রামমুখী করতে বর্তমান সরকার “একটি বাড়ি একটি খামারে'র মতো যুগান্তকারী কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল, যা আমাদের গ্রামীণ জনপদের ধারণাকেই সমর্থন করে। একসময় প্রতিটি বাড়িই গড়ে উঠেছিল একটি খামার হিসেবে। কৃষক বাড়ির চারপাশের ফাঁকা জায়গায় চাহিদার শাক-সবজি চাষের সঙ্গে বাড়িতে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল রেখেছেন, যা তার চাহিদা মিটিয়েছে, আয়বর্ধক হিসেবেও কাজ করেছে। জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলো যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, কোটি কোটি টাকা যেন জলে না যায়, সেজন্যই এই কার্যক্রমগুলোর সঠিক দেখভাল প্রয়োজন। দীর্ঘ মেয়াদে এসব কর্মসূচি যেন ফলপ্রসূ হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। ইতঃপূর্বে অন্যান্য সরকারের সময়ে ‘গুচ্ছগ্রাম' প্রকল্পের মতো জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির কথাও আমরা জানি। এসব প্রকল্পের আওতায় যারা সুবিধা পেয়েছিলেন, তাদের বর্তমান অবস্থা কী? প্রকল্পগুলোর পেছনে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেগুলো কি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে? না জলে গেছে পুরোটাই? বর্তমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে পেছনের প্রকল্পগুলোর দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। এতে বর্তমান প্রকল্পগুলোর দুর্বলতাও খুঁজে বের করা সহজ হবে। সঙ্গে শুভচিন্তক সব মানুষকে এক হতে হবে, যাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের ফাঁদে পড়ে মহৎ উদ্যোগ ম্লান না হয়। একই সঙ্গে ঘর পাওয়া মানুষগুলোর কর্মক্ষমতা কাজে লাগানোর দিকে মনোযোগ দেওয়াও জরুরি, যাতে জাতীয় উৎপাদনে তারাও শামিল হতে পারেন।


  • সাংবাদিক ও কবি

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা