২৫ মার্চ ১৯৭১
অলঙ্করন : প্রবা
১৯৭১
সালের ২৫ মার্চ
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে
নৃশংস গণহত্যায় অংশ নেয় পাকিস্তানের
সেনাবাহিনী। ১৯৭০ সালের
নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই ক্ষমতা
হস্তান্তর যেন করতে
না হয়,
সে নিয়ে নানা
টালবাহানা শুরু করে পাকিস্তানিরা। তাদের
সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রথমে
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন
স্থগিত ঘোষণা করেন
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এরপর
শুরু হয় আলোচনার
নামে সময় নষ্ট
করা। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া
খান ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে
কয়েক দফা আলোচনায়
বসেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের
পক্ষ থেকে সে আলোচনা ছিল লোকদেখানো। সমস্যার
সমাধান না চেয়ে
আলোচনার নামে এ সময়ে পশ্চিম
পাকিস্তান থেকে বিপুলসংখ্যক
সেনা ও অস্ত্র
আনা হয়। উদ্দেশ্য
বাঙালি নিধন। সেই পরিকল্পনার চূড়ান্ত
রূপ ২৫ মার্চ। বাঙালি
জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার
মিশনের নাম দেওয়া
হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। অভিযানের
নির্দেশনামা তৈরি করেন
পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তা
মেজর জেনারেল খাদিম
হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল
রাও ফরমান আলী। কোনো
লিখিত নথি রাখা
না হলেও পুরো
নির্দেশ মুখে মুখে
জানানো হয় অপারেশনসংশ্লিষ্টদের। খাদিম
হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে
সঙ্গে নিয়ে গণহত্যার
এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন
সার্চলাইট।
মার্কিন
সাংবাদিক রবার্ট পেইন
২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে
৭০০০ মানুষকে হত্যা
করা হয়।’
গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার
প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ
চলাকালে পাকিস্তান সরকারের
প্রকাশিত শ্বেতপত্রে বলা হয়,
‘১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে
২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি
মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
২৫ মার্চ দুপুরের
পর থেকেই থমথমে
অবস্থা বিরাজ করতে
থাকে ঢাকাসহ সারা
দেশে। চোখে পড়ার
মতো তৎপরতা দেখা
যায় সেনা কর্মকর্তাদের
মধ্যে। তারা হেলিকপ্টারযোগে
দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস
পরিদর্শন করে। ২২তম
বালুচ রেজিমেন্ট অবস্থান
নেয় পিলখানার বিভিন্ন
স্থানে। মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা
পণ্ড হওয়ার খবর মুহূর্তেই সারা
দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য
দিনের মতোই মানুষ
ভিড় করে ধানমন্ডির
৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধু
বেশ কয়েকবার বারান্দায়
দাঁড়িয়ে উপস্থিত জনতার
উদ্দেশে বক্তব্য দেন। সকালে
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া
খান ও পিপিপি
প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট
ভবনে একান্ত বৈঠক
করেন। ভুট্টোর সঙ্গে
বৈঠকের পরই জেনারেল
ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক
করেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের
সামরিকপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল
টিক্কা খান,
চিফ অব জেনারেল
স্টাফ জেনারেল আবদুল
হামিদ খান,
মেজর জেনারেল মিঠঠা
খান, মেজর জেনারেল
রাও ফরমান আলীসহ
উচ্চপদস্থ সেনাকর্তাদের সঙ্গে। সন্ধ্যায়
ইয়াহিয়া খান গোপনে
ঢাকা ত্যাগ করেন। ইয়াহিয়ার
ঢাকা ত্যাগের খবরে
বঙ্গবন্ধু রাত ৯টার
দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে উপস্থিতদের
উদ্দেশে বলেন,
‘সবাইকে সর্বোচ্চ ত্যাগের
জন্য প্রস্তুত থাকতে
হবে।’
রাত ১০টার দিকে
ঢাকা সেনানিবাস থেকে
সেনাবাহিনীর একটি বড় কনভয় যুদ্ধসাজে
শহরের দিকে রওনা
হয়। শুরু হয় শহরের বিভিন্ন
স্থানে পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা। রাত ১টার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
ধানমন্ডির বাড়ি থেকে
গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি
সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ
মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের
স্বাধীনতা ঘোষণা করেন
এবং যেকোনো মূল্যে
শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
গড়ে তোলার আহ্বান
জানান। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।