২৪ মার্চ ১৯৭১
অলঙ্করন : প্রবা
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনের সামনে আসা অগণিত মানুষের উদ্দেশে আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তা সহ্য করা হবে না। আমাদের ন্যায্য ও সুস্পষ্ট দাবি অবশ্যই মেনে নিতে হবে।’
১৯৭১ সালের ২৪
মার্চ সকাল থেকে অসংখ্য মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আসতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর
পর্যন্ত মিছিল আসা অব্যাহত থাকে। নারী-পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে সমাজের সবশ্রেণির
মানুষ এসব মিছিলে শরিক হয়। সামরিক শাসকদের উদ্দেশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনারা যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, আপনারা জনগণের দাবি ঠেকাতে পারবেন না। দাবি আদায় না হওয়া
পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। কোনো শক্তির
কাছে মাথা নত করব না। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব। আমার মাথা কেনার শক্তি
কারও নাই। বাংলার মানুষের রক্তের সঙ্গে আমি বেঈমানি করতে পারব না। আমি বুলেটের
সম্মুখীন হতে রাজি আছি, কিন্তু জনগণকে গোলাম থাকতে দেব না।’
২৩ মার্চ রাত থেকে
২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী
বোতলাগাড়ী, গোলাহাট ও কুন্দুল
গ্রামে অবাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে ১০০ জন নিহত এবং এক হাজারেরও
বেশি মানুষ আহত হয়।এই দিনে ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠক
অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ভুট্টো বলেন, ‘উই আর মেকিং সাম প্রগ্রেস।’ কোনো ধরনের নতি স্বীকার না করার
সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। কোনো
রক্তচক্ষু সহ্য করা হবে না।
তখন প্রতিরোধ
ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতেও। চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনারা নৌবন্দরের ১৭
নম্বর জেটিতে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে গেলে প্রায় ৫০
হাজার বাঙালি তাদের ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে কিছু অস্ত্র
নিজেরাই খালাস করে ১২টি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতা পথরোধ করে। সেনাবাহিনী
তখন জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে শতাধিক শহীদ হন।
মিরপুরে অবাঙালিরা সাদা পোশাকধারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাঙালিদের বাড়িঘরের ছাদ থেকে বাংলাদেশের পতাকা ও কালো পতাকা নামিয়ে জোর করে তাতে আগুন দেয় এবং পাকিস্তানি পতাকা তোলে। রাতে বিহারিরা সেখানে ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।এদিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান শেষ হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টের উচিত তার দিক থেকে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা। এই দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৩২ নম্বর সড়ক স্লোগানে মুখর ছিল।