মার্চ ১৫, ১৯৭১
অলঙ্করন : প্রবা
অগ্নিঝরা মার্চের পনেরোতম দিন। ভোরে জেগে ওঠা অনেকেই পত্রিকার অপেক্ষায়। কেউ কেউ হেঁটে যাচ্ছেন পত্রিকার সন্ধানে। ১৪ মার্চ নিজ বাসভবনে রুদ্ধদ্বার এক বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ৩৫টি নির্দেশনা দেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তা লিপিবদ্ধ করেন তাজউদ্দীন আহমদ। ওই নির্দেশনাগুলো পত্রিকার মাধ্যমে জানার জন্যেই সবার অপেক্ষা। দেশের কয়েকটি পত্রিকায় ওই নির্দেশনাগুলো ছাপা হয়। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পর্যায়ের অসহযোগ আন্দোলনের ডাক স্বাধীনতা আদায়ের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। পশ্চিমা শাসকরাও চিন্তিত। তবে ইতিহাসের পাতায় ১৫ মার্চ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে ঠাঁই করে নিয়েছে।
এদিন একটি ছাত্র
সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে ছাত্রনেতা হাসিনা বানু শিরিন বলেন, মহান স্বাধীনতার
আন্দোলনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। ঢাকাতেও দিনভর অনুষ্ঠিত হয়
সভা-সমাবেশ এবং মিছিল। কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডে মহিলাদের এক সভা
অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেতার ও টিভি শিল্পীবৃন্দ দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন
করেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে গণসংগীত, পথনাটক পরিবেশন করেন।
সরকারি-বেসরকারি ভবনের পাশাপাশি যানবাহনেও ওড়ে কালো পতাকা। এ ছাড়া নতুন সামরিক বিধি
জারির প্রতিবাদে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বায়তুল মোকারম প্রাঙ্গণে
ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে। ওই সভায় ছাত্র নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের
জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান। সেখানে তারা মুক্তি সংগ্রামে অস্ত্র নিয়ে সব
নাগরিককে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় পৌঁছান ইয়াহিয়া খান। তবে এটি
ছিল গোপনীয় এক সফর। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন বাদে অনেকেই এই সফরের কথা জানতেন না। ইয়াহিয়া
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকা পৌঁছান। বিমানবন্দরে সামরিক গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান
তাকে স্বাগত জানান। কোনো সাংবাদিক ও বাঙালিকে এ সময় বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া
হয়নি। বঙ্গবন্ধু তার সাদা গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনে যান ইয়াহিয়া খানের
সঙ্গে বৈঠক করতে। বৈঠকে তাজউদ্দীন আহমদসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ওইদিন করাচিতে ভুট্টো এক সমাবেশে নতুন এক দাবির কথা তোলেন। তিনি সমাবেশে তিনি আওয়ামী
লীগ এবং পিপলস পার্টির সমন্বয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাবনা দেন। এই প্রস্তাবনা পশ্চিম পাকিস্তানের
নেতাদের কাছেই হাস্যকর বলে প্রমাণিত হয়। করাচিতে এক জনসভায় কয়েকজন প্রখ্যাত রাজনীতিক
এই দাবির বিপক্ষে মতামত দিয়ে বলেন, ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনেক কথাই
বলেছেন। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন তার পিপলস পার্টি এই অঞ্চলে শতকরা আটত্রিশ ভাগ ভোটও
পায়নি। ওই রাজনীতিবিদদের মতামত, ক্ষমতাগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগই একমাত্র দল।