× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারীর অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা দুই-ই দৃশ্যমান

ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩ ১৪:৫৫ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

প্রবাদ আছে, একজন পুরুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা। আর একজন মেয়েকে শিক্ষা দেওয়া মানে গোটা পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা। জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতিতে নারীশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কেননা, নারী সমাজেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশ যেমন এগিয়ে যাবে, তেমনি দেশের উন্নয়নে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও নারীর অবদান দৃষ্টিগোচর হবে যা ইতোমধ্যে চোখে পড়ার মতো। কাজেই নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

১৮৫৭ সালে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারের লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। ওই সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় : ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে বিশ্বজুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সম-অধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভিপ্রায় নিয়ে।

নারী আর পিছিয়ে নেই, নারীর উন্নয়ন হয়েছে তার বড় প্রমাণ নারীর ক্ষমতায়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। এক সময় বাংলাদেশের প্রশাসনে নারীর পদচারণা তেমন লক্ষ্য করা যেত না। এই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আশার কথা হলো, দেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নারীরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছেন। জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধি আইন তৈরিসহ বিভিন্ন নীতিনির্ধারণীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অপরদিকে স্থানীয় পর্যায়ে নারী এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখছেন। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদে সরাসরি গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নারী সদস্যের সরব উপস্থিতিই প্রমাণ করে পুরুষের মতো নারীর অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের সংবিধানে নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে ২৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে। তাই কোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে গেলে নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। এ কথা বেগম রোকেয়া, কবি নজরুল অনেক আগেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ সর্বক্ষেত্রেই নারীর ক্ষমতায়ন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে। ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নারী প্রতিনিধি নির্বাচনে নারী যে অগ্রসরমাণ, এই চিত্রই ফুটে ওঠে।

বেগম রোকেয়া যে নারী জাতির অগ্রগতি-উন্নয়নের কথা ভেবেছিলেন তা আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। এগিয়ে চলেছে নারী, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমান সমাজে নারী সেকালের বৃত্তের মধ্যে বন্দি নেই। সমাজব্যবস্থার আরোপিত শৃঙ্খল ভেঙে আত্মবিশ্বাসে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার আলোতেই আজ বাংলার নারী আলোকিত জীবন পেয়েছে। তাই তারা অগ্রগতির পথে উন্নয়নের পথে ধাবমান। তাদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। নারী এখন শুধু রান্নাঘরে সীমাবদ্ধ নয়, একজন পুরুষের সঙ্গে তারাও সমানভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। উপযুক্ত শিক্ষা ও অনুকূল পরিবেশের বিস্তৃতি ঘটলে নিজের মেধা ও মননে নারী নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি সেটাই প্রমাণ করে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। রাজনীতি ও ক্ষমতাকাঠামো থেকে অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে বাদ দিয়ে সত্যিকার অর্থে কখনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে কিংবা নিরক্ষর অবহেলিত অদক্ষ রেখে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়। নারীর অগ্রগতিতে শিক্ষা অর্জন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য সরকার শিক্ষাকে অগ্রধিকার দিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ফলে নারীশিক্ষায় নবযুগের সূচনা হয়েছে। নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে নারীর অগ্রগতি, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। আবার শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে পুরুষের সমকক্ষতা অর্জনও কখনও সম্ভব নয়। সংবিধান মোতাবেক শিক্ষাগ্রহণ করে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবে নারীর অগ্রগতির ক্ষেত্রে কিছু বাধা ও প্রতিবন্ধকতা এখনও রয়ে গেছে। এখনও নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। তাদের পথচলা সুগম হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ঘরে-বাইরে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। অথচ নারীরা আজ ঘরে-বাইরে সর্বত্র কাজ করছে পুরুষের চেয়ে বেশি। নারীর অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে। বাল্যবিয়ে, ঝরে পড়া নারীর অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় বাধা। তবুও শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। ফলে অনেক নারী নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষমতা অর্জন করছে। সুতরাং প্রকৃত শিক্ষার আলো প্রবেশ করাতে হবে নারীর সুকোমল অন্তর মানসপঠে যাতে একজন নারী সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে।


  • অধ্যাপক ও  উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় 
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা