১০ মার্চ ২০২৩ ১৪:৫১ পিএম
অলঙ্করন : প্রবা
১৯৭১ সালের মার্চের প্রতিটি দিন ছিল বাঙালির জীবনে অগ্নিঝরা। ১০ মার্চ আরও একটি উত্তাল দিনের নাম।
বিক্ষুব্ধ বাঙালির বিক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া
পর্যন্ত। দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকা অসহযোগ আন্দোলন চলছিল তখন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই
কার্যত চলছিল পূর্ব পাকিস্তান। আবার এই দিনে অনেক বাড়িতে উড়ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের
মানচিত্রখচিত নতুন পতাকা।
অসহযোগ আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে শোক প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের নির্দেশে ১০ মার্চ সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
কালো পতাকা তোলা হয়। এমনকি প্রধান বিচারপতির বাসভবন এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনসেও
এদিন কালো পতাকা ওড়ে। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি পুলিশের
গাড়িগুলোও কালো পতাকা লাগিয়ে রাজপথে চলাচল করে। দেশে সরকারি ও আধাসরকারি অফিসের
কর্মচারীরা দশম দিনের মতো কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
থাকলেও পাকিস্তান এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ রুট বন্ধ ছিল। একাত্তরের এই দিন সকালে বঙ্গবন্ধু তাঁর
বাসভবনে বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু বলেন, ৭ কোটি
বাঙালি আজ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যেকোনো মূল্যে তারা অধিকার
আদায়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বাঙালি অনেক রক্ত দিয়েছে। এবার আমরা এ
রক্ত দেওয়ার পালা শেষ করতে চাই।
বিকালে ওয়ালী ন্যাপের উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকার
নিউমার্কেট এলাকায় পথসভা হয়। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। ‘লেখক-শিল্পী
মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে লেখক ও শিল্পীরা ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সিভিল সার্ভিসের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের প্রতিনিধিরা সভায় মিলিত হয়ে
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেন। সেদিন নিউইয়র্কে প্রবাসী
বাঙালি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা নিরস্ত্র বাঙালিকে
হত্যা, ধর্ষণ ও অত্যাচার বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে স্মারকলিপি দেন। স্বাধীন
বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে বাঙালি সেনা, ইপিআর ও পুলিশ সদস্যদের প্রতি
পাকিস্তানি প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের নামে আমি যে নির্দেশ দিয়েছি
সচিবালয়সহ সরকারি ও আধাসরকারি অফিস-আদালত, রেলওয়ে ও বন্দরগুলোয় তা পালিত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেন, ক্ষমতাসীন চক্র প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তি নিয়ে
বাংলাদেশর জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত।
করাচিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে ন্যাপপ্রধান ওয়ালী খান বলেন,
তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য ১৩ মার্চ ঢাকায় আসবেন। তিনি সাংবাদিকদের
বলেন, ক্ষমতা যাতে হস্তান্তর করা যায় সেজন্য আগে আমাদের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের
চেষ্টা করতে হবে। সেদিন আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম বন্দরে ১৭ নম্বর
জেটিতে পাকিস্তানের সমরাস্ত্র নিয়ে আসা জাহাজ এমএল সোয়াত নোঙর করে। বন্দরের বাইরে ওয়াগন
প্রস্তুত রাখা হয়েছিল সমরাস্ত্রগুলো জাহাজ থেকে নামিয়ে বিভিন্ন সেনা ছাউনিতে পাঠানোর
জন্য। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিকরা এসব সমরাস্ত্র জাহাজ থেকে নামানোর নির্দেশ
অগ্রাহ্য করেন। সামরিক বাহিনীকে দিয়ে সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ নামানোর এবং ওয়াগনে তোলার
ব্যবস্থা করতে গেলে উপস্থিত জনতার প্রতিরোধে তা নস্যাৎ হয়ে যায়।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.