সাধারণ্যে
ছবি : বাপন ম্রং
বাপন ম্রং, ময়মনসিংহের গারো। বাপন
নিজ এলাকা ছেড়ে একদিন চলে আসেন ঢাকায়, অভাবের তাড়নায় ভাগ্য অন্বেষণে। তখন তার বয়স ছিল
সম্ভবত বারো বা তেরো। এখন বয়স আনুমানিক ৪০। বিয়ে করেছেন, সন্তান হয়েছে। নিজে লেখাপড়া
করতে পারেননি, কিন্তু সন্তানকে মানুষ করবেন, লেখাপড়া করাবেনÑ এই তার স্বপ্ন। তার কর্মস্থল
‘জল ও জঙ্গলের কাব্যে’ এসে কথা হয় বাপনের সঙ্গে।
পরিবারে কে
কে আছে?
মা আছে, বাবা
আছে। আমরা তিন ভাই। বউ আছে আর দেড় বছরের একটা বাচ্চাও আছে।
কি নাম বাচ্চার?
ওর নাম ওয়ালসেন
জোসেফ দালবত। আমার মা শ্যামলা ম্রং, বাবা নিকেন রংদি, ভাই তুহিন ম্রং, লিপসন ম্রং আর
বউ রানী মল্লিক।
আপনার বাড়ি
কোথায়?
ময়মনসিংহ জেলা,
দুবড়া থানা, গ্রামের নাম আউলাতুলি।
ঢাকায় এসেছেন
কবে?
মনে হয় আঠারো
বা বিশ বছর আগে। তখন আমার বয়স ছিল ১২ থেকে ১৪ বছর।
এই শহরে কেন
এলেন?
কাজের সন্ধানে।
বাড়িতে অভাব আছিল। অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারি নাই। মা-বাবা চলতে পারে না, খাইতে
পারে না। আমি চলতে পারি না। কি করমু, তাই ঢাকায় চইলা আইছি।
জল ও জঙ্গলের
কাব্যে কীভাবে কাজ শুরু করলেন?
আমার এক মাসি
আছিল। সে আমারে এখানে নিয়া আইছে। এইখানে আমি প্রায় ১৫ কি ১৬ বছর ধইরা কাজ করতাছি।
এখানে এতদিন
কেন?
এখানের সবকিছু
আমার ভালো লাগছে। অনেক গাছ-পালা আছে, পুকুর আছে, হাঁটাহাঁটি করতে পারি। কাজের পরে গ্রামগঞ্জে
ঘুরতে পারি। এখানের পরিবেশ অনেক ভালো। মানুষগুলাও ভালো। স্যারও অনেক ভালো। স্যার মানে
পাইলট কামাল স্যার। স্যার এই জায়গাটা বানাইছে।
কি কি কাজ
করেন এখানে?
যে সময় যে কাজ।
যেমন কৃষি কাজ, ঘর বানানোর কাজ। মাঝে মাঝে মেহমান আসেন, তাদের কাজ করি। পুকুর থেকে
মাছ ধরি। গাছ লাগাই। আমের দিনে আম, বরইয়ের দিনে বরই, পেয়ারার দিনে পেয়ারা গাছ থেকে
পাড়ি। এই যে এখন যাচ্ছি ময়মনসিংহ। ওখান থেকে বোরাক বাঁশ কিনা নিয়ে আসব, জল-জঙ্গলে লাগাব।
আপনি তো গারো ভাষায় কথা বলতেন? ঢাকায় এসে ভাষা
নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়নি?
হ। এলাকায় সব
সময় আছিলাম গারোদের সঙ্গে। ঢাকায় শুরুতে একটু অসুবিধা হইছে। এখন ঠিক হইয়া গেছে। এখানে
যেমন বলে ‘কচুরিপানা’। আর আমরা বলি ‘জারমানি’। বুঝতে অসুবিধা হইত। আমরা বলিÑ
‘না নামি ডোংগমা’, আর বাংলায় বলে, ‘তুমি কেমন আছো’? আবার ‘আমি ভালো আছি’। এই কথা আমরা বলতাম, ‘হয় অংগা নামি ডঙ্গিয়া’। এখন সব বুঝতে পারি।
কাজ শেষে কি
করেন?
কাজ শেষ হলে গল্প
করি, গান শুনি, গ্রামে গ্রামে ঘুরি। এখানে শান্তি আর শান্তি। কোনো হইচই নাই, আওয়াজ
নাই। আমি বিয়া করছি এই গাজীপুরেই। ডেমুরপাড়া। মাঝে মধ্যে শ্বশুরবাড়িতেও যাই।
কিন্তু আমার এখানে এই জল-জঙ্গলেই থাকতে বেশি ভালো লাগে।
গারোদের প্রধান উৎসব কি কি?
বরদিন, ওয়ানগালা,
স্টার সানডে, ওয়াকিচুগান এইগুলাই।
একটা গারো
খাবার সম্পর্কে বলেনÑ
নাখাম কারি। এইটা পুঁটি মাছের শুঁটকি দিয়ে তৈরি হয়। অনেক
মজার খাবার।
আপনার একটা
স্বপ্নের কথা বলেনÑ
আমি লেখাপড়া করতে
পারি নাই। চলতে অনেক কষ্ট হইছে। কিন্তু আমার বাচ্চাটারে ঠিকই লেখাপড়া শিখাইতে হইব।
আমার বাচ্চা বাংলাও শিখবে, আবার গারো ভাষাতেও কথা বলবে।