× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহসা শেষ হচ্ছে না

মাইকেল ও’হ্যানলন

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:০৯ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

প্রায় ২০ বছর আগে ইরাকে যুদ্ধ শুরুর পর জেনারেল ডেভিড পেট্রিয়াস একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘শুধু কথার উত্তর দিন আমায় এই যুদ্ধ শেষ হবে কবে?’ ২০ বছর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই যুদ্ধটা আর কতদিন চলবে? ব্রুকিংস ইনস্টিউটে আমার সহকর্মীরা চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন এসব তথ্যের মাধ্যমে তারা চলমান যুদ্ধের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছেন ইউক্রেনে হামলা চালানোর মাসখানেকের মধ্যে দেশটির ২২ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়া দখল করে নিতে সক্ষম হয় তখন ধারণা করা হচ্ছিল এই যুদ্ধে ইউক্রেন কোনোভাবেই টিকতে পারবে না কিন্তু কিছুদিন পর ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রুশদের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়ে এক-চতুর্থাংশ দখলকৃত এলাকা পুনরুদ্ধার করে নেয় গত বছরের নভেম্বরে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যত সংঘর্ষ হয়েছে সব ইউক্রেনের পূর্বাংশে হয়েছে আপাতত এই অঞ্চলের সবকিছুই যুদ্ধের কারণে অচল হয়ে রয়েছে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের কর্মীদের সংগৃহীত উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এই যুদ্ধ সহসাই থামছে না কূটনৈতিক অঙ্গনে যাই ঘটুক না কেন, যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না

এই মুহূর্তে ইউক্রেনের অর্থনীতির অবস্থা মোটেও ভালো নয় তবুও দেশটি কোনোমতে টিকে আছে রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন; দুই দেশের নাগরিকরা যুদ্ধ প্রভাবিত অচলাবস্থায় ত্যক্ত-বিরক্ত তবে এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধের পরিকল্পনা পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের দাবি জানানো কিংবা চাপ তৈরির বিষয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না প্রতিদিন এতসংখ্যক মানুষের জীবন জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে তবে জলাঞ্জলির সংখ্যা এত বেশিও না যে মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে এবং যুদ্ধ থামানোর জন্য অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে এদিকে গৃহহীন বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ ইউক্রেনবাসী কোনোমতে তাদের দিন কাটাচ্ছে তাদের অনেকেই ইউরোপের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে, নাহয় দেশের অভ্যন্তরেই প্রতিবেশী, আত্মীয়-পরিজন কিংবা বন্ধুদের সামান্য সহযোগিতার মাধ্যমে নিজ অস্তিত্ব টেকানোর সংগ্রাম করছে

ইতিহাস আমাদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দেয়, দেখার নির্দিষ্ট আঙ্গিক বানিয়ে দেয় অতীতে দুটো ভয়াবহ যুদ্ধ আমাদের জবজীবনকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে গেছেÑ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং আমেরিকার গৃহযুদ্ধ দুটো যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কয়েক মাসের বেশি স্থায়ী হবে নাÑ এমন মতামতই বেশি পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওই যুদ্ধগুলো চার বছরের বেশি সময় ধরে চলছে দুটো যুদ্ধেই নৃশংস সংঘর্ষ রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে কয়েক গজ জমি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক মাইল জায়গা অধিগ্রহণের জন্য শত্রুপক্ষ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল নির্দ্বিধায় তাদের দিকে বিস্ফোরক ছুড়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা সরাসরি গুলি চালানো হয়েছে বিস্ময়কর বিষয় হলো, এই যুদ্ধগুলোতেও প্রত্যেক পক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, তারা নিজ সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়েনি বরং বন্ধু, আত্মীয়-পরিজন কিংবা সহযোদ্ধার মৃত্যু রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক, নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের প্রতিজ্ঞা আরও বাড়িয়ে তুলেছে সবার মনে একই ভাবনা, দেশের স্বার্থে যারা যুদ্ধ করেছেন তাদের মৃত্যু যেন বিফলে না যায়

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যখন প্রাথমিক অবস্থায় তখন অসংখ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক, এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি ধারণা করেছিল, প্রবল পরাক্রমশালী রুশ বাহিনীর আগ্রাসনের সামনে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী টিকতে পারবে না অনেকে তো এমন ধারণাও করেছিলেন, রুশ আগ্রাসন এবং ইউক্রেনকে ঘেরাও করে রাখার পরিকল্পনা আক্রান্ত দেশটির অর্থনীতি ধসিয়ে ছাড়বে কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পালটা আক্রমণের মাধ্যমে জবাব দিতে শুরু করে দেশটির ক্যারিশম্যাটিক নেতা পুরো পৃথিবীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে শুরু করেন এবার বিশ্লেষকদের প্রত্যাশারও বদল ঘটল এবার অনেকে তর্ক শুরু করলেন, রুশ সেনাবাহিনী এত ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে বিশেষত অনেক রুশ পরিবার তাদের সন্তান কিংবা ভাইকে হারিয়ে যুদ্ধের আদর্শিক জায়গাটিকে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষ তাদের বিচক্ষণ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে অনেকে এও বলছে, পুতিনের সিদ্ধান্তেই রাশিয়া অন্ত্যজ একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এই যুদ্ধের ধকল আর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার চাপে রাশিয়ার অর্থনীতিই বরং ভেঙে পড়ার মুখে

এই যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক পরিসরেও নানা পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে পুরো পৃথিবীতেই জ্বালানি খাদ্যপণ্যের দামবৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক সরবরাহে সমস্যা দামবৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যেকেই এই যুদ্ধ থামানোর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে শুরু করেছে এমনকি কিয়েভের দখল ছেড়েও যদি সমঝোতা করা যায় তাতেও অনেকের মত রয়েছে, যুদ্ধ শেষ করার জন্য মানুষের এতটাই আর্তি আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুদ্ধ থামানোর জন্য ন্যাটো সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলো সেনাসদস্য সরবরাহ করবে যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধের ন্যূনতম সম্ভাবনাও তৈরি হয় পশ্চিমা দেশগুলো ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সহযোগিতা দিয়েছে এসব দেশের অর্থনীতিও খুব একটা ভালো নেই তারাও সামনে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে পারবে না এই যুদ্ধও সহসাই থামার কোনো লক্ষণ নেই হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেনের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে থেকে নানামুখী চাপ বছর তৈরি হবে যুদ্ধ থামানোর জন্য যে চাপ স্বভাবতই তৈরি হয় কিন্তু আমাদের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত জানান দিচ্ছে, যুদ্ধটি জলদিই থামছে না

যেকোনো যুদ্ধের ক্ষেত্রেই একটি বড় বাস্তবতা হলো, কোনো যুদ্ধই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে চলে না যুদ্ধের গতিবিধি অনুমান করাও ঠিক নয় যেকোনো সময় পাশার দান পাল্টে যেতে পারে কিন্তু যুদ্ধ তার আগ্রাসন স্বাভাবিকভাবে থামাতে পারে না কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হয়, যেন যুদ্ধ সত্যিই থামে


  •  গবেষণা পরিচালকপররাষ্ট্রনীতিব্রুকিংস ইনস্টিউটিউটযুক্তরাষ্ট্র

 

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর (ঈষৎ সংক্ষেপিত) আমিরুল আবেদিন

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা