× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সেই প্রস্তাব

আমিরুল আবেদিন

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০২:২৩ এএম

পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সেই প্রস্তাব

ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নে যে কজন প্রবীণ রাজনীতিক অংশ নেন, তাদের একজন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান ভারত ভাগ হওয়ার পর পূর্ব বাংলা পড়ে পাকিস্তান অংশে, ১৯৫৩ সালে পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে পাকিস্তানিরা নামকরণ করে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান সৃষ্টির ঠিক ছয় মাস পর পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশনে উর্দু এবং ইংরেজি ব্যবহার করা হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় এবং ওই অধিবেশনের ব্যবহার্য ভাষা হিসেবে উর্দু এবং ইংরেজিতে কার্যক্রম শুরু হলে তার প্রতিবাদ করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সামনে দৃপ্তকণ্ঠে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলার সাহস বাংলার উপস্থিত অনেক জনপ্রতিনিধিই করতে পারেননি গণপরিষদে শুরুর প্রথম ভাষণেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘গণপরিষদের যে কার্যবিবরণী লেখা হয় তা ইংরেজি এবং উর্দু ভাষায় অথচ সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে তাই ইংরেজি এবং উর্দুর সঙ্গে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে গণপরিষদে ব্যবহার করার প্রস্তাব রাখছি দেশের কোটি ৯০ লাখ নাগরিকের মধ্যে কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে, তাহলে আপনিই বলুন মাননীয় সভাপতি রাষ্ট্রভাষা কী হওয়া উচিত?

গণপরিষদের অধিবেশন আহ্বানের নোটিস জারি হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তার একটি সংশোধন প্রস্তাব দাখিল করেন ওই সংশোধনের মূল প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ২৯ নম্বর বিধির নম্বর উপবিধিতে উর্দু এবং ইংরেজির পর বাংলা শব্দটি সংযুক্ত করা হোক প্রেমহরি বর্মা, ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত, শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আর কংগ্রেসের রাজকুমার চক্রবর্তী তার প্রস্তাব সমর্থন করে গণপরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন এজন্যই তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ এজন্য পাকিস্তান শাসকদের রোষানলেও পড়তে হয়েছিল তাকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল ১১ মার্চ সমগ্র প্রদেশে ধর্মঘটও হয় এই সূত্রে, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পালা চলে এবং এভাবেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের শুরু

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরে তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি করলেন, বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক কারণ, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা হলো বাংলা মুসলিম লীগ সদস্যরা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না আমরা দেখলাম বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ তমদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে... সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে বাংলা ভাষা দাবি দিবস ঘোষণা করা হলো

ভাষা আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক ফল হলো বাঙালি মুসলমানের আত্মআবিষ্কার এবং পাকিস্তানি ভাবাদর্শের খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসা বাঙালি জাতিকে ক্রমে স্বাধিকার চেতনায় সংঘবদ্ধ করার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় অনিবার্য হয়ে ওঠে ওই মুহূর্তে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সাহস প্রজ্ঞার সঙ্গে সংবিধান সভায় দাবি তুলে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, মুক্তি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সূচনা করলেন পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভিযাত্রাকে এক যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিলেন নির্লোভ, সদাচারী, দেশপ্রেমিক, সত্যসন্ধ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত অকম্পিতচিত্তে নিজের কর্তব্য করে গেছেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম এই পথিকৃৎকে আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার দায়টি আমাদেরই পালন করতে হবে


গ্রন্থনা : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা