সম্ভাবনা
অলঙ্করন : প্রবা
আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে এ প্রত্যয়ে অনেকের শঙ্কা-সন্দেহ রয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বোঝা—এমন ভাবনা যুগোপযোগী তো নয়ই, একইসঙ্গে নয় বিজ্ঞানসম্মতও। তবু এমন ভাবনা সমাজে জিইয়ে আছে। তবে আশার বিষয়, ধীরে ধীরে এই ভাবনার বদল ঘটতে শুরু হয়েছে। সমাজের ভ্রান্ত ধারণা ভুল প্রমাণ করার লক্ষ্য নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর ব্লাইন্ড চিলড্রেন (এবিসি) ১৯৭৮ সাল থেকে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর ব্লাইন্ড চিলড্রেন (এবিসি) মূলত একটি এনজিও। এই এনজিও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের মৌলিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নানা কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিটি সমাজের শিশুই অমূল্য ধন। তার মধ্যে জগতের আলো-দৃশ্য-চিত্রবঞ্চিত শিশুরাও আছে। এবিসি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে সম্ভাবনাময় যে বীজ রোপণ করেছিল সেই বীজ চারায় রূপ নিয়েছে। এক সময় সংস্থাটির দেখা স্বপ্ন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকেও প্রভাবিত করতে শুরু করেছে।
প্রথম থেকেই সংস্থাটি নিজেদের কার্যপরিকল্পনা নির্ধারণ করে রেখেছিল। জাতীয় পরিসরে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য ছিল বলেই সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে একটি অলাভজনক এনজিও হিসেবে নিজেদের উপস্থিতি অন্তর্ভুক্ত করিয়ে নেয়। আইন ও নৈতিক দিক বিবেচনায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়েই তারা বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুর ক্ষেত্রেও নানা ধরন রয়েছে। কেউ জন্মগতভাবেই অন্ধ,
কেউ শৈশবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতার সমস্যায় ভুগছে অথবা কারও বিরল কোনো রোগ হয়েছে যার ফলে সে ক্রমেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে উঠছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব শিশুর প্রতি সহানুভূতি নিয়েই সমাজের মানুষ এগিয়ে আসে। তবে এবিসি তাদের আত্মপরিচয় দিতে চেয়েছে। এবিসি প্রথম থেকেই চেয়েছে এই শিশুরা যেন তাদের সম্ভাবনা ছুঁয়ে দেখতে পারে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু আমাদের বোঝা নয়— এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে শুরু থেকেই কাজ করছে এবিসি। এ কাজের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সে সম্ভাবনাকে সফল করার জন্যও তারা কাজ করে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুর জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা এবং যারা অসহায়-গৃহহীন তাদের জন্য আবাসন নিশ্চিতকরণের দায়িত্বও সংস্থাটি বহন করে আসছে জন্মলগ্ন থেকেই। ইতোমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে এনজিওটি দেশের সাতটি জেলায় হোস্টেল স্থাপন করেছে। এই হোস্টেল থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা জীবনযাপনের সব সুযোগ-সুবিধা পায় এবং বিশেষায়িত স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষাজীবনে প্রবেশ করতে পারে। শিক্ষার্থীদের পুরো ব্যয়ভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর ব্লাইন্ড চিলড্রেনই বহন করে। এই সাতটি হোস্টেলে (৬টি ছেলেদের, ১টি মেয়েদের জন্য) এখন পর্যন্ত ৭৪ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু তাদের সম্ভাবনা বিকশিত করার পথে এগিয়ে চলেছে।
এখন পর্যন্ত এবিসির সফলতার পাল্লা অনেকটাই ভারি। ১৯৮০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এই দীর্ঘ পথযাত্রায় ২৯৫ শিক্ষার্থী এই সংস্থার পরিচর্যায় উচ্চ মাধ্যমিক ধাপ পর্যন্ত সম্পন্ন করেছে। এদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগও পেয়েছে নিজ যোগ্যতার ভিত্তিতে। সম্প্রতি এবিসি পরিচালিত হোস্টেলের ১১ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে, যা অনেকেরই প্রশংসা কুড়িয়েছে। ১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। বাকিরাও এর কাছাকাছি ফলাফল অর্জন করেছে। অন্য শিক্ষার্থীরাও প্রশংসনীয় ফলাফল করেছে। তারা হলো— নুসরাত জাহান কাকলী, নাহিদ হোসেন ইফাত, মোহাম্মদ মহসিন, সাদ্দাম আলী, মোহাম্মদ সাদেক, মোফাজ্জল হক, আরিফুল ইসলাম, নয়ন আহমেদ, সাকিব শেখ, তানিম হোসেন এবং অপু চন্দ্র দাস। এবিসির প্রচেষ্টা ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা সমাজকে দিতে পারে অন্য আলো—এই প্রত্যাশা রইল। অভিনন্দন সবাইকে।