দিবস
ছবি : সংগৃহীত
২০১০ সালে স্পেন
রেডিও সংস্থা সর্বপ্রথম রেডিও
দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। পরে জাতিসংঘের ৩৬তম
সাধারণ অধিবেশনে ইউনেস্কোর কার্যনির্বাহী
কমিটি এ প্রস্তাব উত্থাপন
করে। জাতিসংঘের সদস্য
রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিক্রমে ২০১১
সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম
উদযাপিত হয় ‘বিশ্ব রেডিও
দিবস’। সেবার ‘নতুন রেডিও, নতুন
বিশ্ব’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে
দিবসটির যাত্রা শুরু। গণমানুষের
সঙ্গে রাষ্ট্রের সংযোগ
স্থাপনে রেডিওর ভূমিকা অনুধাবন
করানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে
রেডিওসংশ্লিষ্টরা এ দিনে নানা
অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির আয়োজন
করেন।
রেডিওর সঙ্গে আমাদের
এই ভূখণ্ডের ইতিহাস ও
সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ জড়িয়ে
রয়েছে। ১৯৩৬ সালে
ভারতে ‘ইম্পেরিয়াল রেডিও’ নামে সর্বপ্রথম
রেডিও স্টেশনের যাত্রা শুরু
হয়। পরে ভারত
স্বাধীন হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিকে ‘অল
ইন্ডিয়া রেডিও’ নামে রূপান্তর
করা হয়। বিশ
শতকের উপমহাদেশের ইতিহাসে
রেডিওর সম্পৃক্ততা রয়েছে। বেতার সম্প্রসারণে ভারতীয়
বিজ্ঞানী ড. জগদীশ চন্দ্র
বসুর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের
কথা আমরা জানি। তিনিই
প্রথম বিজ্ঞানী যিনি রেডিও
এবং মাইক্রো ওয়েভসের অপটিক্সে
কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশের
স্বাধীনতার ঘোষণাও এসেছিল বেতার
বার্তার মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের
সময় যুদ্ধের খবরাখবর ও
তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও রেডিও
ছিল মানুষের একমাত্র ভরসা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বেতার ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিহার্য সঙ্গী। বাংলাদেশ বেতার মুক্তিযুদ্ধে দেশে বীরসেনাদের অন্যতম এক অনুপ্রেরণার মাধ্যম। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঢাকা বেতার কেন্দ্র। যুদ্ধের সময় এটি হয়ে যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। বিজয় অর্জনের পর সাফল্যের খবর শুনিয়ে সহজেই কেড়ে নেয় মুক্তিকামী মানুষের মন। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট নামে খ্যাত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের এক বলিষ্ঠ প্রচার কাণ্ডারি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কালজয়ী গান ও অনুষ্ঠানগুলো একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে শক্তিশালী করেছে; অন্যদিকে দেশের জনগণকে স্বাধীনতার দিকে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশ বেতারের জন্মের
সঙ্গে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের
স্বাধীনতারও রয়েছে অদ্ভুত মিল। ১৯৩৯ সালের ১৬
ডিসেম্বর বাংলাদেশ বেতারের যাত্রা
শুরু হয়। ঠিক
৩২ বছর পর এই
দিনে বাংলাদেশও স্বাধীনতা
অর্জন করে। শুধু
তাই নয়, রেডিওর শ্রোতা
জরিপের ভিত্তিতেই জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
বাঙালি বলে ঘোষণা দেওয়া
হয়। ফলে রেডিওর
সঙ্গে বাংলার ইতিহাস ও
মানুষের গভীর সম্পৃক্ততা রয়ে
গেছে।
অনেকেই মনে করেন, ইন্টারনেট ব্যবস্থার প্রসারে রেডিওর আবেদন কমে গেছে। তবে এমনটি ভাবার কারণ নেই। রেডিওর প্রচার-প্রসারের মাধ্যম বদলেছে। এখনও দেশের অনেক প্রান্তেই রেডিও শোনে মানুষ। বিশেষত মোবাইলে রেডিও চলে আসায় এখন রেডিও শোনা সবার জন্যই সহজ হয়ে গেছে। শুধু মানুষকে বিনোদন দেওয়াই নয়, যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে রেডিওর মাধ্যমে এখনও যোগাযোগ সম্পন্ন করা হয়। রেডিওর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে বিধায় এখনও দেশে সরকারি রেডিওর পাশাপাশি বেসরকারি ও কমিউনিটি রেডিও রয়েছে। আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস ও রেডিওর গুরুত্বকে অনুধাবন করেই পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব রেডিও দিবস’। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য— রেডিও এবং শান্তি। চলমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে রেডিও যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে উপজীব্য করেই নানা অনুষ্ঠান-আলোচনা সভার মাধ্যমে উদযাপিত হতে যাচ্ছে দিনটি। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে পল্লি অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে তথ্য এবং যোগাযোগের অধিকার এনে দিয়েছে যে রেডিও, তার বিকাশের নতুন মাত্রা নিয়ে ভাবার প্রেক্ষাপটও তৈরি হবে এই দিনটিতেই।