× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভোটারের স্বাধীনতা ও ইসির দায়

মুনীরা খান

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০২:২৭ এএম

আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০২:৩৬ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

দেশে ঐতিহ্যগতভাবে নির্বাচনকে উৎসব হিসেবেই দেখা হয় নির্বাচনে প্রার্থীসহ ভোটারদের মধ্যেও এক ধরনের বাড়তি আগ্রহ দেখা যায় কিন্তু সদ্যসমাপ্ত জাতীয় সংসদের ৬টি শূন্য আসনের উপনির্বাচনে ভোটারের খরা দেখা গেছে জন্য অনেকে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দুষছেন সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এসব নির্বাচনে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে সংগত কারণেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং এই উপনির্বাচনে ভোটার খরা থেকে আশঙ্কা জাগে জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে তবে এই উপনির্বাচনের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের পরিস্থিতি এখনই অনুমান করা যাবে নাএও সত্য

আগেও বহুবার বলেছি, সাধারণ নির্বাচন উপনির্বাচনের চরিত্র আলাদা হওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতি নির্বাচনী পরিবেশে পার্থক্য থাকে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের অবকাশ তৈরি হয় প্রতিটি দলই সময় নির্দিষ্ট আসনে প্রার্থী মনোনয়নসহ প্রচার-প্রচারনায় কোনো কমতি রাখে না তারা জানে সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ওই রাজনৈতিক দলের কাছে আসবে তাই দলগুলো জনসমর্থন আদায় কিংবা ভোটকেন্দ্রে ভোটারকে আনার প্রাণপণ চেষ্টা চালায় তবে উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু আলাদা এবং সদ্যসমাপ্ত ৬টি আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার প্রত্যক্ষ কিছু কারণ ভেবে দেখা জরুরি

আমরা জানি, ওই ৬টি আসনে জয়ী অর্থাৎ জনসমর্থন বেশি রয়েছে এমন ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেছেন তাদের পছন্দের দলের প্রার্থী যেহেতু পদত্যাগ করেছেন, সেহেতু এই বিশাল ভোটারদের এই নির্বাচনকে নিয়ে আগ্রহ থাকার কথা নয় উপনির্বাচনগুলোর ফলাফল প্রত্যাশিতই ছিল আমরা যারা বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করি, তারা সব সময় দেখেছি উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি মানুষের উৎসাহ কম হয় এবার উৎসাহ আরও কম লক্ষ্য করা গেছে বর্তমান সংসদের মেয়াদও আর বেশি নেই যে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন তার মেয়াদকাল যদি দুই থেকে তিন বছরের মতো থাকত, তাহলে ভোটারের আগ্রহ আরেকটু বেশি হতো কারণ নির্বাচনী পরিবেশে ভোটার প্রার্থী দুজনেরই দায়বদ্ধতা থাকে ভোটারের দায়বদ্ধতা পূরণ হয় নির্ধারিত মেয়াদে জনপ্রতিনিধি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবেনএই আস্থা রেখে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে কিন্তু কয়েক মাস পরই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন তাই উপনির্বাচনে ভোটারের উৎসাহে ভাটা পড়াটাই স্বাভাবিক আপাতত যতজন ভোটারই এসেছেন তা প্রত্যাশিতই ছিল এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনুমান করা উচিত হবে না তবে ভোটারের খরা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়

তারপরও যতই যুক্তিতর্ক দাঁড় করাই না কেন, নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়াতে না পারার দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা যে ধরনের নির্বাচনই হোক না কেন; নির্বাচনী আয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে তা নিশ্চিত করার সক্ষমতা তাদের থাকতে হবে এখন ভোটারের অংশগ্রহণ কম হবে অনুমান করে নির্বাচনী আয়োজনে শিথিলতার কোনো অবকাশ নেই যেকোনো নির্বাচনেই আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ এমন হতে হবে যেন সংঘাত-সহিংসতা ঘটানোর সুযোগ কেউ নিতে না পারে এমনকি ভোটকেন্দ্রের কারিগরি ত্রুটির বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে দ্রুত সমাধান করতে হবে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনে তারা যেমন প্রস্তুতি নেবে, স্থানীয় এবং উপনির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই প্রস্তুতি রাখতে হবে বিষয়গুলোতে ঘাটতি থাকায় নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার পারদ ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে

তবে নির্বাচন কমিশন যদি ভোটারকে আশ্বস্ত করতে পারে, আমরা একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনী মঞ্চ গড়ে দিয়েছি; এবার ভোটার হিসেবে আপনার দায়বদ্ধতা পূরণ করতে আসুন; আপনার পছন্দের জনপ্রতিনিধিকেই নির্বাচিত করুন, তাহলে কিন্তু এত শঙ্কা থাকে না ভুলে গেলে চলবে না, ভোটাধিকার এক ধরনের মানবাধিকার কথাটি ইতঃপূর্বে আমি বহুবার বলেছি এই উপনির্বাচনে ভোটার খরার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে ভাবার সুযোগ দিয়েছে এখন তারা হয়তো ভাববে, এই যে নির্বাচনটি তারা আয়োজন করল, সেটি মানুষের আস্থা ঠিক কতটা অর্জন করতে পেরেছে নিশ্চয় তা ভাবতে হবে কারণ মাত্র ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে যদি নির্বাচন কমিশন অংশগ্রহণমূলক, ঝঞ্ঝাটহীন প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনী আয়োজন না করতে পারে, তাহলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সময় ব্যবস্থাপনা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সক্ষমতা জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাবে কীভাবে? একজন নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে দেখব, তারা কি উপনির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে সন্তুষ্ট কি-না তাদের স্বচ্ছতা জবাবদিহির বিষয়টি তাদের প্রকাশ করতে হবে উপনির্বাচন আয়োজনে কি কি ঘাটতি রয়ে গেছে, সেগুলো তারা যদি প্রকাশ করে তাহলে রাজনীতিকদের মধ্যে জনমনে আস্থা ফিরে আসবে একজন ভোটার নির্বাচন কমিশন থেকে অজুহাত নয়, ফলাফল দেখতে চায়

নির্বাচন কমিশনের ঘাটতি দায়িত্বের পাশাপাশি তাদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও আমাদের ভেবে দেখতে হবে দেশে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রায়ই সংঘাত-সহিংসতার খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে প্রতিবারই নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় নির্বাচন ছোট পরিসরের হলে সংঘাত-সহিংসতা হবে না অথবা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় স্থানীয় নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা বেশি হয় তার কারণ চেনা গণ্ডিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ভোটারদের প্রবণতাও পরিচিত থাকে ফলে ধরনের ছোট পরিসরের নির্বাচনে ম্যানিপুলেশন বেশি হয় এবং মানুষের মধ্যে সহিংস হওয়ার প্রবণতাও থাকে বেশি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একই অবস্থা দেখা যায় এই ম্যানিপুলেশন অর্থের বিনিময়ে কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে করা হয় নির্দিষ্ট অঞ্চলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রার্থী তার সম্মান, প্রতিপত্তি প্রভাব ব্যবহার করেই ম্যানিপুলেশন করেন, যা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অনেক সময় প্রতিহত করা কঠিন হয়ে পড়ে সংসদীয় আসনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ম্যানিপুলেশন এত প্রয়োজন হয় না কারণ প্রার্থীরা মনে করেন তিনি সংসদের প্রার্থী হবেন এবং সেখানে কথা বলবেন

তবে নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাগুলো অনুমান করে প্রতিহতের ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন নিতে না পারলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক নজর রাখতে হবে সংবাদমাধ্যমে জেনেছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনে ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে ভোটারদের ভয় দেখানোর জন্য ভোটকেন্দ্রে একটা ককটেল বিস্ফোরিত হলে এলাকার ভোটার ভোট দিতে আসার সাহস হারাবে এটাই বাস্তবতা এভাবে ভোটারের ভোটাধিকারের স্বাধীনতা ব্যাহত হয় আমি একবার ফিলিপাইনের নির্বাচন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম সেখানে ঠিক আমার পেছনেই পরপর দুটি গ্রেনেড আচমকা বিস্ফোরিত হলো আমার সঙ্গে থাকা দোভাষী আতঙ্কে পালাতে চাইলেন আমিও বাধ্য হয়ে তার পেছনে পেছনে ছুটছি অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি একজন ভোটারও নেই নির্বাচনী পরিবেশে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা সবসময় মানুষকে হতাহতের জন্য নয়, বরং ভয় দেখিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে করা হয় এমন কিছু যেন না ঘটে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বিশেষত আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী যেন পর্যবেক্ষণে শিথিল না হয়

আমি বহু আগে থেকেই নির্বাচন কমিশনকে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি এবারও তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ভোট যে এক ধরনের মানবাধিকার তা রাষ্ট্রের প্রত্যেককে বোঝাতে হবে ভোটার ভোট দেবেন এবং জন্য তার কোনো সমস্যা হবে নাএই নিশ্চয়তা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে এক্ষেত্রে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভোটারকে আশ্বস্ত করার পদ্ধতি শেখাতে হবে সচরাচর নির্বাচনের আগে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই পোলিং এজেন্টদের নিয়োগ দেওয়া হয় অধিকাংশ সময় এই নিয়োগপ্রাপ্তরা জানেনই না তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য কীভাবে সম্পন্ন করবেন মনে আছে, আমাদের সংগঠন ফেমা জাপান থেকে একবার পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি গ্রান্ট পেয়েছিল তাদের মনে হয়েছিল বিষয়টি জরুরি উদ্যোগটি শেষে অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে গ্রান্টের অর্থ তারা ফেরত নেয়

পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ গড়ার জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজটি নির্বাচন কমিশন তাদের অর্থায়নেই করতে পারে তবে তাদের যদি মনে হয় এই পরামর্শ বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা কিংবা লোকবল সংকট রয়েছে, তাহলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তায় সম্মিলিতভাবে আয়োজন করতে পারে প্রয়োজনে এমন কাজে ইচ্ছুক সংগঠনকেও সম্পৃক্ত করতে পারে শুধু তাই নয়, নির্বাচনে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক দলকে সম্পৃক্ত করতে পারলে ভোটাররা আরও আশ্বস্ত হবেন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক দলের উপস্থিতি থাকলে নির্বাচনী পরিবেশের গুমোটভাব অনেকাংশে দূর হবে যেকোনো নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করার দায় নির্বাচন কমিশনের একই সঙ্গে এক্ষেত্রে অংশীজনের দায়ও কম নয় মোট কথা, জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সদিচ্ছা থাকে, তাহলে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি ভোটার এডুকেশনের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে ভোটকেন্দ্রে আসার অনুপ্রেরণাও নানাভাবে দিতে হবে মানুষ কেন ভোট দিতে আসবে এবং আসার পর তারা উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট দিবে--এমনটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনেরই

 

লেখক : প্রেসিডেন্ট, ফেমা এবং দেশ-বিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা