× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দারিয়া হত্যা

যুদ্ধের গতিধারা বদলের ইঙ্গিত

ইমতিয়ার শামীম

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২২ ১৭:৫৮ পিএম

আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২২ ১৭:০৩ পিএম

যুদ্ধের গতিধারা বদলের ইঙ্গিত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গতিমুখ নতুন দিকে বাঁক নিতে চলেছে। ২৯ বছর বয়সী দারিয়া দুগিনা হত্যাউত্তর পরিস্থিতি বোধকরি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও এ হত্যার ঘটনা সুদূরপ্রসারী ছাপ ফেলতে চলেছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘আধ্যাত্মিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত আলেকসান্দর দুগিন কন্যা দারিয়া দুগিনা হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন, এমন প্রেক্ষাপটে ‘আমাদের হৃদয় প্রতিশোধেরও বেশি কিছু’ প্রত্যাশা করে। এ বিবৃতিতে তিনি ইউক্রেনকে ‘নাৎসি রাষ্ট্র’ হিসেবেও অভিহিত করেন, যেমনটি ক্রেমলিনও করে থাকে। গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দারিয়া দুগিনাকে ‘শহীদের’ মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এ সময় আলেকসান্দর বলেন, ‘দারিয়া জীবন দিয়েছে মানুষের জন্য, রাশিয়ার জন্য।... তার মৃত্যুও হয়েছে বিজয়ের জন্য। এটা আমাদের রাশিয়ানদের বিজয়, আমাদের বিশ্বাস, রাষ্ট্র ও মূল্যবোধের বিজয়।’

এক কথায়, দারিয়া হত্যার কারণে রাশিয়া প্রথমত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে এবং পশ্চিমের বিরুদ্ধে বিরাজিত দ্বন্দ্বের মাঠে শক্তিশালী একটি ‘শহীদী প্রতীক’ পেয়ে গেল, যা জাতীয়তাবাদী রাশিয়াকে, রাশিয়ার জনগণকে আগামী দিনগুলোয় আদর্শিক প্রেরণা জোগাবে। দারিয়া নিজেও ছিলেন দক্ষ রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং সাংবাদিক। তাকে টার্গেট করেই হত্যা করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এতে কোনো সন্দেহ নেই, দারিয়ার মৃত্যু এক অর্থে পরিস্থিতিকে আরও উগ্র জাতীয়তাবাদে পরিপুষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

দ্বিতীয়ত, ছয় মাস আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া যখন হামলা শুরু করে, তখন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই ধারণা করেছিলেন, দেশটি এক সপ্তাহও টিকে থাকতে পারবে না। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সোভিয়েত রাশিয়া যেমন পূর্ব ও দক্ষিণ রণাঙ্গনে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করে জার্মানির জন্য দুঃস্বপ্ন বয়ে এনেছিল, এখন একই ফ্রন্টে ইউক্রেনের গেরিলারাও রুশিদের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি ক্রিমিয়ার একটি প্রধান রুশ বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনীয় গেরিলাদের আক্রমণে আটটি রুশ সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা রাশিয়ার নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে দারিয়া হত্যা যুদ্ধকৌশল পরিবর্তনের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসছে। এই কৌশল পরিবর্তনের ধারায় চোরাগোপ্তা হামলা কতটুকু গুরুত্ব পাবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে লেখাই বাহুল্য, এমন আক্রমণ এবং হত্যাকাণ্ডে রাশিয়ার পারদর্শিতা কম নয়। খোদ রাশিয়াতেই গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতা, সাংবাদিক এবং সরকারের সমালোচক হত্যার শিকার হয়েছেন। এমন মনে করার শক্তিশালী কারণ রয়েছে যে, এসব হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত ও উচ্চপর্যায়ের মদদপুষ্ট। এমনকি দেশের বাইরে ব্রিটেনে একজন প্রাক্তন রুশ ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে হত্যা চেষ্টার সঙ্গেও পুতিনের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে দারিয়া হত্যার ঘটনাকে উপজীব্য করে রাষ্ট্রপরিচালিত গুম-খুন-হামলার ওপর আদর্শিক আবরণ পরানোর তুরুপ রাশিয়ার হাতে উঠে এলো। 

তৃতীয়ত, এই হত্যাউত্তর পরিস্থিতিতে রাশিয়া, চীন ও ভারতের আন্তর্জাতিক নৈকট্য নতুন মাত্রা পেতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত রাশিয়া ও চীন বিরোধিতা ইতোমধ্যেই নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করেছে এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে কিংবা কথিত উন্নয়নশীল ও মধ্য অর্থনীতির দেশগুলোকে নানাভাবে তার মাশুল গুনতে হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এই স্নায়ুযুদ্ধের ভুক্তভোগী দেশগুলো নতুন করে বিন্যস্ত হচ্ছে এবং নতুন মেরুকরণ ঘটাচ্ছে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট নিয়ে নানা মত থাকলেও এতে কোনো সংশয় নেই যে, এ যুদ্ধের সঙ্গে ইউএস জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের সূত্রে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে আসার জন্য বিভিন্ন দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, নিজের ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ প্রশ্নটিকে পশ্চিমা বিশ্বের তো বটেই, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছেও একইরকম অর্থবহ করে তুলতে। সেটি যে এখনও ততটুকু অর্থবহ হয়ে ওঠেনি, তার অন্যতম কারণ, রাশিয়া থেকে শুরু করে চীন ও ভারত তো বটেই, বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রও যুক্তরাষ্ট্র বলয়ের পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত হয়ে ওঠেনি। রাশিয়া চাইবে এই দূরত্বকে কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে এবং এ ক্ষেত্রে তার প্রধান লক্ষ্যই হবে চীনের সঙ্গে নৈকট্য আরও গভীর করা।

দুই.

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কী? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা কখনই খুঁজে পাব না, যতক্ষণ না আমরা প্রশ্নটিকে এইভাবে বিবেচনা করব, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সৃষ্ট নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সমাধান কোন পথে ঘটবে। 

যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টই মনে করে এবং সময়-সুযোগ পেলে আমাদের মনে করিয়েও দেয়, রাশিয়া ও চীন সবসময় মার্কিনি নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই দেশগুলো তাদের প্রভাব বাড়াতে বদ্ধপরিকর; বদ্ধপরিকর সেখানকার সমাজকে নিপীড়নের স্বার্থে মুক্ত ও অবাধ অর্থনীতিকে সংকুচিত করতে, নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে এবং তথ্য-উপাত্তকে নিয়ন্ত্রণ করতে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা জানেন, বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। কেননা গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে দেখতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কমপক্ষে ১৫টি পররাষ্ট্রে যুদ্ধ চালিয়েছে, যেসব দেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, পানামা, সার্বিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে সম্প্রতি বিতর্কিত ‘তাইওয়ান’ ইস্যুকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটিকে বাদ দিলে চীন কোনো রাষ্ট্র বা এলাকায় আক্রমণ চালায়নি। আর সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়া সম্পৃক্ত থাকলেও তা মূলত সোভিয়েত শাসনামলের কূটনৈতিক ধারাবাহিকতা। একইভাবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে পৃথিবীর ৮৫টি দেশে; যেখানে চীনের রয়েছে তিনটি দেশে এবং রাশিয়ার রয়েছে একটি দেশে, যা সোভিয়েত শাসনামলের ধারাবাহিকতার ফসল।

ইতোমধ্যে আলেকসান্দর দুগিনকে পুতিনের ‘আধ্যাত্মিক গুরু’ হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপিত করে পশ্চিমা গণমাধ্যম নিজেদের অবস্থানের একটি ‘আদর্শিক-দার্শনিক’ ভাষ্য প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। পশ্চিমা এই আখ্যানমতে, আলেকসান্দর দুগিনের ‘রুশ সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার দর্শন’কে বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ইউক্রেনে রাশিয়া এই আক্রমণ পরিচালনা করছে। যদিও অপর যে ভাষ্য মিলছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এই যুদ্ধের মূল শেকড় নিহিত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব-বিরোধের মাটিতে।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব এই সংকটের বীজ পুঁতেছিল আসলে অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের কাছে ন্যাটোর ভবিষ্যৎসংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে; যাতে বলা হয়েছিল, ন্যাটোর কার্যক্রম পূর্ব ইউরোপে বিস্তৃত হবে না। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙা হয় প্রথমে ১৯৯৯ সালে তিনটি মধ্য ইউরোপীয় দেশকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০০৪ সালে কৃষ্ণ সাগর ও বাল্টিক রাজ্যসহ আরও সাতটি দেশকে ন্যাটোতে নেওয়া হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ২০০৮ সালে ইউক্রেন ও জর্জিয়ার ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সম্ভাব্যতা তৈরি হয়। আর এই চলতি বছরে এসে ন্যাটোর মাদ্রিদ বৈঠকে অংশ নিয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিকের চারটি দেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ন্যাটোর পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তাদের। বলার অপেক্ষা রাখে না, চীনের উত্থানকে বিবেচনায় নিয়ে দেশটিকে চাপে রাখতেই ন্যাটো এ পদক্ষেপ নিয়েছে। 

পশ্চিমা গণমাধ্যমে কখনই বলা হয় না, ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করার বেলায় যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে কী ভূমিকা রেখেছে। বলা হয় না, ইউক্রেনে ন্যাটোর ভূমিকা বৃদ্ধি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই উপেক্ষা ও অস্বীকার করে আসছে। উল্টো যুক্তরাষ্ট্র কি ট্রাম্প কি বাইডেন উভয় প্রশাসনের সময়েই অস্ত্রের সম্ভার পাঠিয়েছে। আর মিনস্ক দুই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে গ্যারান্টার ফ্রান্স আর জার্মানির ব্যর্থতার বিষয়টিও পশ্চিমা গণমাধ্যমে পারতপক্ষে আলোচনায় আসে না। বাইডেন তো সম্প্রতি এমনও বলেছিলেন, পুতিন আর ক্ষমতায় থাকতে পারেন না; যদিও এটিকে এখন ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে ‘গ্যাফে কলিং’ বা ‘অসমীচীন আহ্বান’ হিসেবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন যে বলেছেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের লক্ষ্য হলো রাশিয়াকে দুর্বল করা, সে বক্তব্যের সঙ্গে এর দূরত্ব কি খুব একটা বেশি?

তিন.

আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ও লেখক ডেভিড পি গোল্ডম্যান এবং এশিয়া টাইমস অনলাইনের পরিচালক উবা পারপার্ট অবশ্য মনে করেন না, আলেকসান্দর দুগিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক’ কিংবা ‘মস্তিষ্ক’। তারা মনে করেন, ইংরেজি গণমাধ্যম দারিয়া খুনের পর যে অবস্থান নিয়েছে, তা ‘অনুমানভিত্তিক সাংবাদিকতার সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত’। আর তারা এ-ও মনে করেন না যে, আলেকসান্দর পুতিনের বড় মিত্র। বরং তিনি পশ্চিমা বিশ্বের প্রশ্নে পুতিনের অবস্থানের একজন কঠোর সমালোচক। তাদের দৃষ্টিতে আলেকসান্দর ‘পুতিনের চোখে বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠা একজন তাত্ত্বিক’। 

পুতিন ও আলেকসান্দরের মধ্যকার দূরত্বকে দৃশ্যমান করে তুলতে গোল্ডম্যান ও পারপার্ট বেশ কয়েকটি ঘটনার কথাও তুলে ধরেছেন। যেমন, ২০১৪ সালে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলেকসান্দর দুগিনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পুতিন যদি আলেকসান্দরকে ‘আধ্যাত্মিক গুরু’ই মনে করতেন, তা হলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হতো না। কারণ এই অপসারণের ক্ষেত্রে পুতিনের সম্মতি নিতে হয়। ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার সামরিক অভিযান’কে সমর্থন করলেও আলেকসান্দর কঠোর সমালোচনাও করেছেন পুতিনের উপদেষ্টাদের, যা পুতিনের জন্য অস্বস্তিকর। 

দারিয়া হত্যার মাত্র এক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে আলেকসান্দর বলেন, পুতিনের বর্তমান মন্ত্রিসভা আর মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই ভেঙে পড়বে এবং রাশিয়ার জন্য এক বিপর্যয়কর রূপান্তর অপেক্ষা করছে। তিনি এতে জানান, রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান সবকিছুতেই পরিবর্তন নিয়ে আসছে। প্রশ্নটা তাই এখন আর কেবল সরকার পরিবর্তন করতে চাওয়া বা না-চাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। পরিবর্তন হয়ে উঠেছে অবশ্যম্ভাবী। এখন কেউ যদি এই রূপান্তরকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন, তারপরও এটি ছয় মাসের বেশি ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। তার মতে, রাশিয়াতে এখন নতুন এক সময় আসার সময় ঘনিয়ে এসেছে।

তা হলে কি ধরে নিতে হবে, দারিয়ার নিয়তির সঙ্গে আলেকসান্দরের এই পোস্টের কোনো সংযোগ রয়েছে? মূল্য লক্ষ্য ছিল আলেকসান্দর, কিন্তু মরতে হয়েছে দারিয়াকে? কিন্তু এমন ইঙ্গিতকে মানতে রাজি নন গোল্ডম্যান ও পারপার্ট। তাদের মতে, পুতিন চাইলে তো দুগিনকে নিখুঁতভাবেই সরিয়ে দিতে পারতেন, ভজঘট পাকিয়ে তার মেয়েকে হত্যা করতে যেতেন না। তাদের চোখে এমন একটি কাঁচা হামলার সঙ্গে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অবশ্য তাদের এই অভিমতটি খেয়াল করার মতো, এই হত্যার ঘটনা যদি কোনো অপরাধী গোষ্ঠীই সংঘটিত করে থাকে, তার মানে দাঁড়ায় এই যে, পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে এমন হত্যার নির্দেশনা আসতে পারে।

তা হলে কি ধরে নিতে হবে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাইরের কোনো শক্তি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পক হতে পারে! অবশ্য গোল্ডম্যান ও পারপার্টের সন্দেহের তীর বিদেশে অবস্থানরত রুশ অলিগার্কদের দিকে। এরা কোথায় রয়েছেন, তাদের সম্পদের অবস্থান কোথায়, এসব প্রশ্নের উত্তর আলেকসান্দর দুগিন হত্যাপ্রচেষ্টার রহস্য উদ্ঘাটনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা। 

অবশ্য এই হত্যারহস্যের উদ্ঘাটন শেষ পর্যন্ত হবে কি না, বলা মুশকিল। কিন্তু এই ঘটনা রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তির রাজনীতিকে, এই যুদ্ধকে নতুনভাবে চিন্তা করার পরিসর সৃষ্টি করেছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেমন নতুন করে বিবেচনা করা হচ্ছে, তেমনি ইউরোপের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের বিষয়টিও পুনরায় আলোচিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের গন্তব্য তা হলে কোন দিকে? তা হলে যুদ্ধের গতিমুখ বদলের ইঙ্গিতও কি দেখা দিচ্ছে না সব মিলিয়ে?

লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা