× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ছাত্ররাজনীতির হালচাল

মহিউদ্দিন খান মোহন

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:২৮ এএম

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:৩২ এএম

অলংকরণ : জয়ন্ত জন

অলংকরণ : জয়ন্ত জন

বছর দশেক আগের কথা আমি তখনও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় একদিন আমার এক বন্ধুর ছেলে আমাকে বলল, ‘কাকা আমি ছাত্রদল করি উপজেলা কমিটিতে আমাকে একটা ভালো পদ দেন আমি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কী কর? সে জানাল, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ে জিজ্ঞেস করলাম, বিয়ে করেছ? ছেলেটি লজ্জা পেয়ে বলল, কী যে বলেন কাকা! পড়াশোনাই শেষ হলো না... আমি বললাম, তাহলে তো তুমি কোনো পদ পাবে না ছেলেটি একটু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসুনেত্রে আমার দিকে তাকাল বললাম, ছাত্রদলের নেতা হতে হলে প্রথমত তোমাকে অছাত্র হতে হবে দ্বিতীয়ত বিবাহিত হতে হবে, ছেলেমেয়ে থাকলে প্লাস পয়েন্ট তার পরও উপযাচক হয়ে উপজেলা বিএনপি নেতাদের কাছে ছেলেটির জন্য তদবির করেছিলাম কিন্তু ভাগ্যদেবী ওর প্রতি সুপ্রসন্ন হননি সে কোনো পদ পায়নি ওই কমিটির বেশিরভাগ সদস্য ছিল অছাত্র এবং নানা পেশায় নিযুক্ত কেউ কেউ স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে কলেজের চৌকাঠও মাড়ায়নি



ঘটনাটি মনে পড়ল ১৯ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ- একটি খবর পড়ে খবরে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে একজন স্যানিটারি মিস্ত্রিকে, আর সাধারণ সম্পাদকের পদ অলংকৃত করেছেন একজন চা দোকানি এবং এদের কারওই ছাত্রত্ব নেই ভাগ্যবান ওই সভাপতির নাম পারভেজ আলম আর সাধারণ সম্পাদকের নাম মাহবুব আলম আর পদ দুটি তারা পেয়েছেন লাখ টাকা করে সেলামি দিয়ে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর কাছে তা স্বীকারও করেছেন ঘটনার তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতারা তবে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বলেছেন, কিছুদিন আগে ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছে, তার পরই কমিটি দেওয়া হয়েছে যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে পারেনি তারাই অপপ্রচার করছে অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বলেছেন, তারা অভিযোগ পেয়েছেন, ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

ঘটনাটি অভিনব কিংবা বিরল নয় আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধরনের ঘটনার খবর মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে উঠে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা স্তরে কমিটি এবং পদবাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া যায় তবে সেসব অভিযোগের কোনো তদন্ত হয় কি না খবর পাওয়া যায় না ফলে দলগুলায় কমিটি পদবাণিজ্যের রমরমা বাজার গড়ে উঠেছে আর এর অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়ায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন অরাজনৈতিক ব্যক্তি, সমাজবিরোধী, অপরাধী, রংবাজ-মাস্তান, কালো টাকার মালিক আর সন্ত্রাসীদের দখলে প্রশ্ন উঠতে পারেÑ তাহলে কি আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভালো মানুষ একেবারেই নেই? আছে, অবশ্যই আছে তবে তারা এখন সংখ্যালঘিষ্ঠ আশঙ্কার কথা হলো, ভালো মানুষ, যাদের ন্যূনতম আত্মমর্যাদাবোধ আছে, তারা এখন আর রাজনীতির পথে পা বাড়াতে চান না অনেকে অবশ্য বলেন, ভালো মানুষ আসেন না বলেই খারাপ মানুষ রাজনীতি দখলে নিয়ে নিচ্ছে কথাটা অস্বীকার করা যাবে না কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো, ভদ্রলোকদের জন্য রাজনীতির উঠানে পিঁড়ি পাতার কোনো জায়গা এখন আর নেই অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না কিন্তু কেন এমন হলো? সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, এর প্রধান কারণ নানা স্তরে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে রাজনীতির স্টিয়ারিং চলে যাওয়া আমি কোনো বিশেষ দলের কথা বলছি না প্রায় সব দলেই আজ একই পরিস্থিতি সৎ, নিষ্ঠাবান, সমাজে গ্রহণযোগ্য, নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের কদর নেই সেখানে কদর টাকাওয়ালাদের

আমাদের ছাত্ররাজনীতির এই হতশ্রী দশা সচেতন ব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুলেছে যে ছাত্ররাজনীতি ছিল জাতির আশার প্রদীপ, আজ তা তেলের অভাবে নিভুনিভু আমাদের যারা এখন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, তাদের বেশিরভাগই এসেছেন ছাত্ররাজনীতির পথ ধরে পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম গর্জে উঠেছিল এই ছাত্রসমাজ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজ ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা ছিল অগ্রণী এমনকি নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের চালিকাশক্তিও ছিল ছাত্র সংগঠনগুলো আগে ছাত্র সংগঠনকে বলা হতো নেতা তৈরির কারখানা এসব সংগঠন থেকে বহু দেশবরেণ্য নেতা বেরিয়ে এসেছেন

দেশে যে হারে অরাজনৈতিক রাজনীতিবিদের সমারোহ বেড়ে চলেছে, তাতে সচেতন ব্যক্তিরা শঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ে এভাবে চলতে থাকলে সহসাই দেশে যোগ্য নেতৃত্বের মন্বন্তর দেখা দেবেÑ এমন কথাও বলেন অনেকে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না সেই আশঙ্কা কিন্তু কেন তৈরি হচ্ছে না যোগ্য নেতা বা নেতৃত্ব? ১২ জানুয়ারির প্রতিদিনের বাংলাদেশেই রয়েছে তার উত্তর যশোর থেকে পাঠানো খবরে বলা হয়েছে, দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজে (এমএম কলেজ) ৪২ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নেই শুধু এমএম কলেজের চিত্র নয়, দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই এক অবস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক রাজনীতি হয়, ছাত্ররাজনীতির নামে মারামারি হয়, গোলাগুলি হয়, এমনকি টেন্ডারবাজিও হয় হয় না শুধু ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেশের সবচেয়ে বড় উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছিল আদালতের নির্দেশে ডাকসু নির্বাচন হলেও দেশের আর কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ অনুভব করেননি এমনকি কোনো ছাত্র সংগঠনও সে দাবি তুলছে না ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে মিছিল-মিটিং-লাঠালাঠি করলেও নিজেদের ন্যায্য অধিকার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে টুঁশব্দটি করছে না আরও বিস্ময়কর হলো, বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোও ব্যাপারে রহস্যময় নীরবতা পালন করে চলেছে এর কারণ ছাত্র সংগঠনগুলোর অছাত্র নেতৃত্বের অনীহা

ভবিষ্যতে আদর্শবান নেতা পেতে হলে ছাত্ররাজনীতিকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে সেই সঙ্গে নিয়মিত আয়োজন করতে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের অন্যথায় আমাদের রাজনীতি হয়তো থাকবে, তবে কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্বের অভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে


লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা