প্রেক্ষাপট
মাসুদ কামাল হিন্দোল
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:৩৩ এএম
সারা পৃথিবীতেই প্রবীণ নাগরিকরা কম-বেশি
অবহেলিত। আমাদের দেশেও প্রবীণরা আর্থ-সামাজিক
নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত হন অধিকাংশ পরিবারে। এমনকি তাদের পোশাকের রঙ নির্বাচনের স্বাধীনতাও যেন তাদের হাতে নেই। প্রবীণদের পোশাকের রঙ সাদা আর হালকা রঙের মধ্যে ঘুরপাক খায়। দোকানে কাপড় কিনতে গেলে দোকানিও হালকা রঙের কাপড় এগিয়ে দেয় তাদের দিকে। গাঢ় রঙের কাপড় দেখতে চাইলে বলা হয়,
মুরব্বি ওটা আপনাদের জন্য নয়। প্রবীণ নারী-পুরুষদের
রঙ ঠিক করে দিয়েছে সমাজ। চকচকে কোনো পোশাক তারা পরতে পারবেন না। রঙ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা-আবেগ-অনুভূতি
রঙের মাধ্যমে মূর্ত হয়ে ওঠে। রংধনুর প্রতিটি রঙের আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। আছে প্রভাব তাৎপর্যও । জীবনের
বিভিন্ন পর্যায়ে রঙ শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি দেয়। ইউরোপ-আমেরিকার
প্রবীণরা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরেন। এমনকি আফ্রিকা মহাদেশের নাগরিকরাও। সেখানে কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই,
নেই নিষেধাজ্ঞা। প্রবীণ হওয়া মানেই কি জীবন থেকে রঙ-আনন্দ
মুছে যাওয়া?
সব রঙ হারিয়ে যাওয়া?
পোশাকের ব্যাপারে সমাজের অনেক বিধিনিষেধ ছিল। এখন আর বিষয়টি সেভাবে নেই,
তবে কোথায় একটা ‘কিন্তু’ রয়ে গেছে। প্রবীণ পুরুষরা জিন্স পরতে পারবেন না। পাঞ্জাবি পরলেও সাদা বা হালকা রঙে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে সাদা বা হালকা রঙের শাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। বোরখা পরলে সাদা বা কালো রঙের। অনেক পরিবার মনে করে প্রবীণদের অসম্মান করা হয়েছে গাড় রঙের পোশাক উপহার দিয়ে। কিন্তু শীতকালে প্রবীণরা টকটকে লাল নীল বা গাঢ় কালারের জ্যাকেট মাংকি ক্যাপ বা অন্য শীতের পোশাক পরেন। তখন পরিবার বা সমাজ বাধা দেয় না। শীত চলে গেলেই তারা আবার আগের পোশাক ও রঙে ফিরে আসেন। প্রবীণ নাগরিকরা ধর্মীয় কারণে সাদা পোশাক বেছে নিতে চান। পরিবার সমাজও তাদের উৎসাহিত করে সাদা বা হালকা রঙের পোশাক পরতে। সামজিক সমালোচনার ভয়ে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক পরিবার প্রবীণদের কালারফুল পোশাক পরতে দিতে পারে না। আমাদের দেশ এখনও প্রবীণবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি। সমাজকে প্রবীণবান্ধব হতে হবে এবং তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা
প্রাধান্য দেওয়া জরুরি।
সনাতনী ধারা খুব ধীরে ধীরে হলেও বদলাতে শুরু করেছে। প্রবীণদের জীবনেও রঙের পরশ লেগেছে। তাদের পোশাকের রঙ নিয়েও ভাবা হচ্ছে। ব্যক্তি থেকে পরিবার যেমন ভাবছে,
তেমনি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও ভাবছে বা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়িক কারণে গত কয়েক বছরে। ক্রেতাদের একটি বিরাট অংশ প্রবীণ। সবাই এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পোশাকসচেতন। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা বেড়েছে। ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশে পোশাকের রঙ নির্বাচনে নবীন-প্রবীণ
কোনো ভেদাভেদ থাকবে না সমাজের কোনো স্তরে। সমভাবে সব রঙের পোশাক পরতে পারবে এ দুই প্রজন্ম। গণতন্ত্র পোশাক ও পোশাকের রঙ নির্বাচনেও থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে বদলাতে হবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশে ষাট বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষকে প্রবীণ ধরা হয়। দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ার কারণে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বার্ষিক জন্মহারের তুলনায় প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। কাজেই প্রবীণদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। দুই যুগ পরেই বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে
‘প্রবীণের সমাজে’। প্রবীণদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক: সংবাদকর্মী