× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জনপ্রশাসন স্বাভাবিক গতিতে চালানো যাচ্ছে না কেন

মোফাজ্জল করিম

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:০২ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

২৩ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ- প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজানো হচ্ছে নির্বাচনী প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রশাসন নিয়ে নানারকম কথাবার্তা প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলেই কমবেশি হয়েছে রাজনীতিমুক্ত জনপ্রশাসনের প্রতিশ্রুতি রাজনীতিকরা সব সময়ই দেন কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে ভুলে যান আমি মনে করি, প্রতিশ্রুতি ভুল জনপ্রশাসন, শিক্ষা, অর্থনীতির নির্দিষ্ট কোনো খাতই রাজনীতিমুক্ত করার প্রত্যয় সঠিক নয় রাজনীতিকরা এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও তাদের কাছে রাজনীতিমুক্ত কোনো কিছুর প্রত্যাশা একটু বেশিই হয়ে যায় রাজনীতিকরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন জনগণের সুবিধার্থে তারা কাজ করবেন এবং জনপ্রশাসনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করবেন তাই জনপ্রশাসনকে তারা কোনোভাবেই রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে পারেন না তাহলে কথা উঠতে পারে, রাজনীতিকরা এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কেন? উত্তর, রাজনীতিকরা যতই স্বচ্ছ থাকুন না কেন, তারা দলীয় রাজনীতি দলীয় স্বার্থের বাইরে নন ক্ষেত্রে যে সমস্যা তৈরি হয় তা হলো, দলীয় স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে অনেক সময় বিঘ্নিত হয় রাষ্ট্রের স্বার্থ এখানে রাজনীতিমুক্ত জনপ্রশাসন প্রত্যাশা করা হলেও তা দেখা সম্ভব নয় এবং কোনো দিন হবেও না তবে এর মানে এই নয় যে, অবস্থা এমনই থাকবে সরকার যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে জনপ্রতিনিধি জনপ্রশাসনের সম্পর্ক নির্ধারণ করে, তাহলে সমস্যার কিছুটা সমাধান সম্ভব ক্ষেত্রে সরকারকে নির্ধারণ করে দিতে হবে জনপ্রশাসনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে রাজনীতিকদের সম্পৃক্ততা কতটুকু থাকবে জনপ্রশাসনে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের নামে কর্তৃত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যেন না ঘটে, সরকারকে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে কর্তৃত্বের জায়গা নিয়ন্ত্রণহীন হলে জনপ্রশাসন সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়বে

জনপ্রশাসনের প্রতিটি স্তরে দলীয়করণের অভিযোগ সম্প্রতি ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক দীর্ঘদিন জনপ্রশাসনে কাজ করেছি পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি আমাদের সময় জনপ্রশাসনেদলীয়করণশব্দটি ছিল একদমই অপরিচিত এমনকি ব্রিটিশ আমলেও জনপ্রশাসনে দলীয়করণের বিষয় ছিল না ব্রিটিশদের ছিল সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তারা স্থানীয়দের ওপর কর্তৃত্ব ফলিয়েছে এবং শোষণ করেছে পাকিস্তান আমলেও এই এজেন্ডার হেরফের হয়নি পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের সিদ্ধান্ত অনুসারে জনপ্রশাসন পরিচালিত হতো অথচ জনসংখ্যা বিভিন্ন দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের কোনো আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশা-চাহিদা তারা আমলে নিত না ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর অবস্থার পরিবর্তন ঘটে ১৯৭২-এর ফেব্রুয়ারিতে শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি আমাদের হাতে আসে

দেশ স্বাধীনের পর সংগত কারণেই প্রত্যেকের প্রত্যাশা ছিল জনপ্রশাসন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে পরিচালিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে পরিচালিত সরকারের শাসনব্যবস্থা কেমন ছিল, তা দেখার অভিজ্ঞতা আছে শুধু তাই নয়, পরে জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল কেমন ছিল, তা- ভালোমতোই জানি এই দীর্ঘ সময়ে কোনো বিশেষ দলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি রাজনৈতিক দলের কোনো জনপ্রতিনিধির মতামত জনপ্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা কোনো দলের স্বার্থে জনপ্রশাসন ব্যবহারের অপপ্রবণতা নব্বইয়ের পরে শুরু হয় আর অপপ্রবণতা চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৯৬-এর পর কিছু সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হাত মেলানোর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সে সময় ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা গঠন করেন জনতার মঞ্চ তারা রাজপথে নেমে আসেন ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিকদের পতনের উদ্দেশ্যে সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি এখনও চালু থাকে এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সরকারি কর্মকর্তারা হাত মেলান, তাহলে জনপ্রশাসন রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য থাকবে কী করে?

আবহমানকাল ধরে আমরা শুনে আসছি এবং মেনে চলার চেষ্টা করেছিÑ রাজনীতি করবেন রাজনীতিকরা এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো অবস্থায়ই তাদের কর্মকাণ্ডে শরিক হবেন না ১৯৯৬ সালে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে বড় বড় পদে বসানো হয় মূলত তারাজনতার মঞ্চনামক প্রচেষ্টা সফলে সাহায্য করেন বলেই তাদের এমন পদ দেওয়া হয় অনেককে চাকরি থেকে পদত্যাগ করিয়ে মন্ত্রীর আসনেও বসানো হয় এমন ঘটনায় জনপ্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন থেকেই জনপ্রশাসনের প্রতিটি স্তরে এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে যে, কোনো নির্দিষ্ট দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকলে ব্যক্তিস্বার্থের পথ আরও সুগম হবে অথচ ওই সময়ই সরকারের উচিত ছিল জনপ্রশাসনকে তার স্বাভাবিক গতিতে পরিচালনা করা কিন্তু তা হয়নি এর পরের সরকারগুলোর সবাই জনপ্রশাসনে আত্তীকরণের ধারণা টিকিয়ে রাখে ভবিষ্যতেও কোনো সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করবে কি না, বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের চাকরির বিধিমালা ভঙ্গ করবেন না, অথবা রাজনীতিতে ব্যক্তিগতভাবে সম্পৃক্ত হবেন নাÑ বিষয়টি নিশ্চিতকরণে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, এমন কিছু এখনও দৃশ্যমান নয় আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোও চাচ্ছে জনপ্রশাসন দলীয়করণ হোক এজন্যই বহু মেধাবী কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, নানাভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন অন্যদিকে তুলনামূলক কম মেধাবী অথবা অযোগ্যরা দায়িত্ব পাচ্ছেন, দ্রুত তাদের পদোন্নতি হচ্ছে এতে একদিকে জনপ্রশাসনের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে ন্যায়বিচার সুযোগ-সুবিধা থেকে দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে সরকারের জনকল্যাণমূলক রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় জনপ্রশাসনের মাধ্যমে সংগত কারণেই রাজনীতি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে কিন্তু এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নে মানুষের কথা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই রাষ্ট্রের যেকোনো কাজের প্রথম থেকেই জনগণকে সম্পৃক্ত রাখা উচিত এটুকু বুঝতে হবে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক প্রশাসনÑ দুটি আলাদা সত্তা তবে দুটির লক্ষ্য এক, জনকল্যাণ দুই সত্তার কাজে রাষ্ট্র অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালনকারী

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে জনপ্রশাসনকে রাজনীতিমুক্ত রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন বিরোধী দলের কাছেও একজন স্বচ্ছ ব্যক্তি হিসেবে তার সুনাম ছিল তিনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন মুক্তচিন্তার ধারক হিসেবে তিনি জনপ্রশাসনকে রাজনীতিমুক্ত করার সদিচ্ছা রাখতেন তবে তিনিও কাজে শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি কারণ সরকারে এমনকি পুরো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তার মতো চিন্তাভাবনার রাজনীতিক মুষ্টিমেয় তবু তিনি হয়তো তার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারতেন, যদি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়তেন তিনি পরিবর্তনের সূচনা করবেনÑ এমন উদ্যোগ নিতে পারেননি, তার পাশেও কাউকে পাননি তার পাশে যদি রাজনীতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থাকতেন, তাহলে হয়তো অঙ্গীকার পূরণের দিকে কিছুটা হলেও এগিয়ে যেতে পারতেন তার মৃত্যুর পর সদিচ্ছার মৃত্যু হয়েছে এবং এখন সদিচ্ছা আর কারও মধ্যে অবশিষ্ট দেখা যাচ্ছে না

রাজনৈতিক দল সরকার পুরোপুরি আলাদা সত্তা, পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই কথা সবাই একবাক্যে মেনে নেন আমাদের দেশে আন্দোলন, ক্ষমতা ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারের পথ খুঁজতে ব্যস্ত রাজনীতিকরা কথা যেন ভুলে যান তাই দুই সত্তার স্বাতন্ত্র্য তারা বুঝে উঠতে পারেন না তাদের দল কখনও ক্ষমতায় গেলে ভেবে বসেন, দলই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে কিন্তু দল তো সরকার নয় দলীয় স্বার্থ প্রাধান্য দিতে গেলে জনগণের কল্যাণের বিষয়টি স্বভাবতই এড়িয়ে যাওয়া হয় দলীয় রাজনীতির স্বার্থই যখন মুখ্য থাকে, তখন সরকারের পক্ষে জনমানুষের সরকার হয়ে ওঠা আর হয় না তখন তাকে দলের নেতৃবৃন্দের সরকার বলা যেতে পারে এসব সমস্যা বিবেচনা করে জনপ্রশাসনকে জনবান্ধব করার পথ বের করতে হবে এজন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে সরকার, দলমতনির্বিশেষে প্রত্যেকের অনুসরণের জন্য একটি শব্দই থাকবেÑ আইন আইনের চোখে সবাই সমান-  বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভেদাভেদ করা যাবে না অধিকারের মাঠ সমতল না রাখলে অপছায়া বিস্তৃত হবেই প্রধানমন্ত্রীরও একটি ভোট থাকে, আবার রাষ্ট্রের নিম্নবিত্ত একজন মানুষেরও একটি ভোট দেওয়ার অধিকার থাকে ভোটের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে যেমন সমান, আইনের ক্ষেত্রেও তেমনই হওয়া উচিত সম্প্রতি লন্ডনের ট্রাফিক পুলিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে জরিমানা করেছে, গাড়িতে চলা অবস্থায় সিটবেল্ট না বাঁধায় সে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা গেছে বলেই একজন কনস্টেবল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পেরেছেন আইনের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয়Ñ নীতি অনুসরণ করলেই জনপ্রশাসন হবে জনবান্ধব এবং তার ফল ভোগ করবে জনগণ


লেখক : সাবেক সচিবকবি  কলামিস্ট

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা