× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পুলিশের ভুল ও মানবাধিকার

দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:১০ এএম

আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:১৬ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

পুলিশের গায়েবি মামলাশব্দযুগল আমাদের সমাজে অনেক দিন ধরেই বহুল উচ্চারিত হয়তো অনেকেরই মনে আছে মুনসুর আলী আর জিল্লুর রহমানের কথা তারা কিছু সময়ের ব্যবধানে মারা গিয়েও পুলিশের দায়ের করা রাষ্ট্রবিরোধী, যানবাহন ভাঙচুর ষড়যন্ত্রের মামলায় আসামি হয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমে নিয়ে বেশ কিছুদিন ঝড়ও বইছিল এও হয়তো অনেকের স্মরণে আছে, ঠাকুরগাঁওয়ের সেই মিঠু আহমেদ মিলনের কথা, যিনি রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন ডেকে অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশের লাখ টাকা খরচাপাতিদাবির বিষয়ে মনে আছে হয়তো রাজধানীর পল্লবীর বেনারসি কারিগর আরমান, পাটকল শ্রমিক জাহালামের কথা; যাদের বছরের পর বছর কেটে গিয়েছিল কারাগারে, পুলিশ আর দুদকের ভুল মনগড়াভাবে আইনের নামে বেআইনি কার্যকলাপে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ফজলু মিয়া, যার একাধারে ২২টি বছর কেটে গিয়েছিল কারাগারে পুলিশের অপরাধে, হয়তো মনে আছে তার কথাও দৃষ্টান্ত আরও আছে, তালিকা অনেক দীর্ঘ ফজলু মিয়া, জাহালম কিংবা আরমানের আহাজারি না দুদক, না পুলিশের দায়িত্বশীল- কারও মন গলাতে পারেনি উল্লিখিত কোনো ঘটনাই দূর অতীতের নয়

এমন দায়িত্বহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা ইচ্ছাকৃত ভুলের আগ্রাসি থাবায় এবার বৈরিতার কাতারভুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর স্কুলছাত্র সাকিব আলী গত ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি মোড়ে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পথচারী শিশু সাকিবকে আটক করে পুলিশ সাকিবের জেএসসি পরীক্ষার সনদ আর পরিবারের দাবি অনুযায়ী প্রকৃত বয়স ১৭ বছর মাস হলেও পুলিশের খাতায় ১৯ বছর উল্লেখ করে নাশকতার দুই মামলা দিয়ে তার ওপর নিপীড়নের খড়গ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের নিচে কোনো অভিযুক্তকে শিশু আইনেমামলা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সাকিবের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা মানা তো হয়ইনি, উপরন্তু পারিবারিক প্রয়োজনে বের হওয়া সাকিবকে ওই সংঘর্ষে অংশগ্রহণ নাশকতাকারী বানিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো কারাগারে! ২২ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ- শীর্ষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাকিবের মর্মন্তুদ উপাখ্যান

যখন সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে সাধারণ মানুষ পুলিশ কিংবা সরকারের দায়িত্বশীল কারও স্বেচ্ছাচারিতা বা অপরাধের কথা জানতে পারে, তখন সংগতই প্রশ্ন জাগেÑ নাগরিক সমাজের সেবকদের আর কত নির্মমতা-নিষ্ঠুরতার ছোবলে সমাজে ক্ষত বাড়বে? যে সমাজে আইনের শাসন আর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহাজারি চলছে দীর্ঘকাল ধরে, সেই সমাজে এমনটি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্যালোচিত হতে পারে? রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরাই বা এর কি ব্যাখ্যা দেবেন?

দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের কেইগ কোলি নামে এক নাগরিক বিনা দোষে ৩৯ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পান আদালত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কোলিকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ মার্কিন ডলার দেওয়ার নির্দেশ দেন (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ কোটি টাকা) প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের ভুল কিংবা অপরাধের শিকার হয়ে আমাদের সমাজে যাদের কারাগারে কেটেছে জীবনের উল্লেখযোগ্য অধ্যায়, মানবাধিকারের নিক্তির মানদণ্ডে তাদের অবস্থাটা কী? আমাদের স্মরণে আছে, অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আন্না হাজারের নানানরকম কর্মসূচি দায়িত্বশীলদের কীভাবে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল ওই অধ্যায়ও খুব দূরের নয়

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কিছু কথা মনে পড়ছে তার মেয়াদকালে ভূমি ব্যবস্থাপনাশীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘পদ্ধতিগত কারণেই দেশে ঘুষ খাওয়া সবচেয়ে সহজ কাজতিনি ওই অনুষ্ঠানেই লজ্জাহীনতার সংস্কৃতি’, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতিশব্দযুগল উচ্চারণ করেছিলেন তখন কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে একটি দৈনিকে লিখেওছিলাম দ্বিমত ছিল এজন্য, সংস্কৃতি শব্দটি ব্যাপক অর্থে ইতিবাচক এবং একটি জাতিগোষ্ঠীর নানা বিষয়ের মধ্যে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ তাই এসব ক্ষেত্রে অপশব্দটি যুক্ত করে অপসংস্কৃতিবলাই শ্রেয় মনে করি আমাদের আইনের দর্শনে বলা আছে, শত অপরাধী পার পেয়ে যাক, কিন্তু একজনও যেন বিনা দোষে কিংবা অপরাধে কারাভোগ না করেন আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন শ্রুতিমধুর কিংবা শোভন কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু কাগজে-কলমে রয়ে যায়! এর দায়ও কি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলগুলো এড়াতে পারে?

মনে পড়ছে ওপার বাংলার সাড়া জাগানো বাংলা চলচ্চিত্র সবার উপরে’-তে প্রখ্যাত অভিনেতা ছবি বিশ্বাসের কণ্ঠে উচ্চারিত ফিরিয়ে দাও আমার বারোটি বছরসংলাপটি সেখানেও সাকিব, আরমানদের মতো ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয় ছবিটি বিভিন্ন দেশেই কোনো না কোনো সময় দেখা গেছে দায়িত্বহীনতা-অনিয়ম-দুর্নীতি ইত্যাদি দিয়ে দুই রকম অবস্থা তৈরি হতে পারে এক. যেখানে অনেকেই মনে করছেন, এত মানুষ দুষ্কর্ম করছেন, আমি করব না কেন দুই. যেখানে অধিকাংশ মানুষ ভাবছে্ন, কেউ দুষ্কর্ম করেন না, তাহলে আমি করব কেন! আমাদের নানানরকম নেতিবাচকতার গণ্ডি থেকে বের হতে হলে প্রথম অবস্থা থেকে সমাজকে দ্বিতীয় অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে সম্প্রতি অমানবিকতার শিকার স্কুলছাত্র সাকিব কিংবা এর আগের উল্লিখিত ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, সুশাসনের আকুতির মধ্যেও কী দুঃসহ প্রতীক হয়ে আছে ওরা মনে পড়ছে বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের কমলাকান্তের দপ্তর’- বর্ণিত সেই উক্তি সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিচারের বাজারে গেলাম, দেখলাম; সেটা কসাইখানা টুপি মাথায়, গামছা মাথায় ছোট-বড় কসাই সকলে ছুরি হাতে গরু কাটিতেছে মহিষাদি, বড় বড় পশুসকল শিং নাড়িয়া ছুটিয়া পালাইতেছে ছাগ-গরুসহ সকল ছোট পশু ধরা পড়িতেছে

আমরা জানি, মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার মানবাধিকার একমাত্র অধিকার যা প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য কিন্তু আমরা স্তরে স্তরে এর বহু লঙ্ঘন দেখতে পাই এবং সরকারের দায়িত্বশীলরাও অনেক ক্ষেত্রে সচেতনভাবেই তা করেন সব কথার শেষ কথা গণতান্ত্রিক, মানবিক, আইনি কাঠামোবদ্ধ কোনো সমাজে সাকিবদের তালিকা দীর্ঘ হতে পারে না দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতনদের চোখ খুলুক সাকিবদের জীবন যাদের কারসাজিতে অন্ধকারে ডোবে এর প্রতিকার নিশ্চিত হোক ছাড়া কোনো প্রতিবিধান নেই


-সাংবাদিক  লেখক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা