প্রজন্মের ভাবনা
শেখ রিফাদ মাহমুদ
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:০১ এএম
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:০১ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
ভোটের আগমুহূর্তে জনপ্রিতিনিধিরা প্রচার-প্রচারণায় নামেন। তখন জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য তারা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। অনেক সময় প্রার্থীরা এমনও প্রতিশ্রুতি দেন, যা দশবার নির্বাচিত হয়েও রক্ষা করা সম্ভব নয়। নির্বাচনে যদি তারা নির্বাচিত হন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য কোনো উদ্যোগ নেন না। বরং অনেক সময় ক্ষমতা অপপ্রয়োগ করে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের শিরোনাম হন কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে জনপ্রতিনিধিদের ওপর আস্থার পারদ থাকে নিম্নমুখী। এমনটা কেন হয়?
গ্রামাঞ্চলের জনপ্রিতিনিধিদের
অনেকেই নির্বাচিত হওয়ার পরই সালিশবাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। গ্রাম্য সালিশচক্রে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা প্রভাব বিস্তার করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ কয়েকজন মিলে সালিশ কার্যক্রমের আয়োজন করেন। এসব সালিশ কার্যক্রমের
ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায়ের বিষয়টি প্রায়শই থাকে উপেক্ষিত। গ্রাম্য রাজনীতির
ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে—এমন দৃষ্টান্ত আছে। অনেককে তো
গ্রাম ছাড়তে বাধ্যও করা হয়েছে। আবার অনেক সময়
জনপ্রতিনিধি কর্তৃক ভিজিডিসহ বিভিন্ন ভাতার কার্ডবাণিজ্যের কথা শোনা যায়। এক হাজার
থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় প্রতিটি কার্ডের বিপরীত। এটিও
জনপ্রতিনিধিদের আস্থা হারানোর কারণ। কেননা অতি দরিদ্রদের যে কার্ড, সেটির জন্যেও তারা জড়িয়ে পড়েন আর্থিক লেনদেনে এমনটি ভাবতেও বিস্ময় লাগে। এসব বাদেও সরকারিভাবে বিভিন্ন বরাদ্দের আওতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত সার ও বীজ সঠিকভাবে বিতরণের দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের ওপরই বর্তায়। কিন্তু এখানেও তারা নিজেদের পকেট স্ফীত করার দিকেই মনোযোগ দেন বেশি। কৃষক পোহান
বিড়ম্বনা।
ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হওয়ার পর থেকেই সদস্যদের কেউ কেউ তোয়াক্কা না করে চেয়ারম্যান ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, প্রকল্পের তালিকা বণ্টনসহ নানা ধরনের প্রকল্পের কাজ একাই করেন। পরিষদের
উন্নয়নকাজে বরাদ্দ টাকাও অসাধুরা সঠিকভাবে বণ্টন করেন না। এক্ষেত্রে ইউপি সদস্যরা বঞ্চিত হন। জনপ্রতিনিধিরা হবেন সমাজের সবচেয়ে
সম্মানিত ব্যক্তি—এটিই তো খুব স্বাভাবিক প্রত্যাশা। বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনের
জন্য সরকারি ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ফি আদায় এবং ভুয়া ওয়ারিশ সনদ প্রদানের অভিযোগও নতুন
নয়। অনেক সময় এসব ঘটনার পেছনে অসাধু জনপ্রতিনিধিদের
নিকটাত্মীয়দের যোগসাজশ থাকে বটে, কিন্তু
আখেরে এসব অন্যায়ের দায় জনপ্রতিনিধির ওপরই বর্তায়।
অসাধু জনপ্রতিনিধিদের
আস্থা হারানোর জন্য তাদের অসততাই বেশি দায়ী। তারা যদি নির্বাচনকালীন সময়ের মতো
আচরণ বজায় রাখতে পারেন, তাহলে হয়তো জনগণের আস্থা কিছুটা হলেও অটুট
থাকবে। সেই সঙ্গে জনগণকে দেওয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের
বিপদে-আপদে সবার আগে ছুটে গিয়ে প্রকৃতপক্ষেই জনগণের
বন্ধু হবে। অবৈধ অর্থ উপার্জনের লোভ-লালসা বর্জন করে সৎ থাকাটা খুবই জরুরি। কেননা জনগণ
সর্বদাই সৎ ও মিষ্টভাষী জনপ্রতিনিধিকে পছন্দ করেন। জনগণের বিভিন্ন সমস্যা, দুর্দশার কথা মন দিয়ে শুনে সেগুলো সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে
তাহলেই জনপ্রতিনিধিদের ওপর জনগণের আস্থা অটুট থাকবে। এগুলো খুবই স্বাভাবিক কিছু
নৈতিক মূল্যবোধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নগরকেন্দ্রিক বিধায়
গ্রামাঞ্চলে অসাধু জনপ্রতিনিধিরা নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। এমন প্রবণতা থেকে বের
হয়ে আসতে না পারলে গ্রামীণ অঞ্চলে নেতৃত্ব যেমন গঠন হবে না, তেমনি মানুষের ভোগান্তিও কমবে না।
লেখক : উপদেষ্টা, গ্লোবাল স্টুডেন্ট ফোরাম