× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গার্ডিয়ান পত্রিকার বিশ্লেষণ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান

মার্টিন কেটল

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:৪৯ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহ করবে অবস্থা দেখে অনেক রাজনীতিকই মতামত দিতে শুরু করেছেন, এবার হয়তো যুদ্ধ শেষ হতে চলেছে কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ সহসাই থামছে না এবং পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে বলা যায় সময়টাই বোধহয় এই যুদ্ধের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার পেছনে মূলত তিনটি বাস্তবতা রয়েছে বিষয়গুলো ভেবে দেখা দরকার  

প্রথমত, ইউক্রেনকে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ট্যাংক সরবরাহ করলে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি কতটা বাড়তে পারে তার আন্দাজ রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের এড আর্নল্ডের একটি মতামত থেকে পাওয়া যাবে রুশ আর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে সোভিয়েত এরা টি-৭২এস ট্যাংকই বেশি ব্যবহৃত হয় অপরদিকে ইউক্রেনে তিন ধরনের ব্যাটল ট্যাংক সরবরাহ করা হচ্ছেÑ যুক্তরাষ্ট্রের এম- আব্রাহাম, জার্মানির লেপার্ড- এবং যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার- যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে এগুলো সোভিয়েত ট্যাংক থেকে বেশি শক্তিশালী ট্যাংকগুলো রাশিয়ান ট্যাংকগুলো থেকে শক্তিমত্তায় অনেক এগিয়ে একই কথা ফ্রান্সের লেকরার্ক ট্যাংকের ক্ষেত্রেও বলা যায় কারণ ইউক্রেন এই ট্যাংক পাবে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে কিন্তু এও সত্য, অত্যাধুনিক হওয়ায় এই ট্যাংকগুলোর ওজনও বেশি এর একটি অসুবিধা হলো ইউক্রেনে প্রচুর জলাময় এলাকা রয়েছে এবং যেসব এলাকায় এসব ভারি ট্যাংক নিয়ে অভিযান পরিচালনার কাজটি কঠিন হবে রুশ ট্যাংকগুলো তুলনামূলক হালকা হওয়ায় কিছু এলাকায় আক্রমণে কিছুটা সুবিধা পেলেও অত্যাধুনিক ট্যাংকগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে না কারণ অত্যাধুনিক এই যুদ্ধাস্ত্রগুলোয় ভালো নেভিগেশন সিস্টেম আছে ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারি ট্যাংক দিয়ে আক্রমণ করতে না পারলেও ইউক্রেনিয়ান বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করতে পারবে অনেক রাজনীতিক কিয়েভের অবস্থা দেখে মতামত দিচ্ছেন, শীঘ্রই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসছে

কিন্তু শীঘ্রই সে আশা পূরণ হচ্ছে না এক্ষেত্রে প্রথমেই দুটো বিষয়ের কথা মাথায় আসে আপাতত এত ট্যাংক ইউক্রেন কীভাবে রাখবে এবং পরিচর্যা আদৌ সুষ্ঠুভাবে করতে পারবে কি-না তা নিয়ে ভাবনা রয়েছে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ৩শ ট্যাংকের আবেদন করেছেন সম্প্রতি বার্লিন এবং অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্রের ঘোষণা থেকে তা ১০০-এর নিচে নেমে এসেছে এড আর্নল্ডের মতে, আধুনিক সময় এত অল্প ভারী যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে যুদ্ধজয় সম্ভব নয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাংকগুলো এখনও উত্তর আমেরিকায় রয়েছে এবং তাদেরও সেখানে যুদ্ধ রসদের অভাব রয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনকে সম্ভবত আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে জার্মানির লেপার্ড ট্যাংকগুলো অবশ্য ইউরোপে থাকায় নিকটবর্তী ইউক্রেনিয়ান অঞ্চলে সহজেই স্থানান্তর করা সম্ভব কিন্তু সেজন্য আদর্শ চ্যানেল তৈরি করতে হবে কাজটা কঠিন না হলেও এখনই সম্ভব হবে না

দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি ইউক্রেনকে সহযোগিতার বিষয়ে জার্মানির অবস্থান স্পষ্ট হতে শুরু করার পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে কথা সত্য, ইউক্রেনকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে জার্মানি অন্য ইউরোপীয় দেশ থেকে অনেক এগিয়ে তারা ইউক্রেনকে প্রচুর যুদ্ধাস্ত্র এবং অস্ত্রসজ্জিত যানবাহন দিয়ে সাহায্য করেছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতোই জার্মানিও ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে ইউক্রেনকে সাহায্য কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা আপাতদৃষ্টে অশোভন মনে হতে পারে কিন্তু কথাও মনে রাখতে হবে, ওলাফ শুল্টজ-এর নেতৃত্বাধীন জার্মা্নি পূর্ব-পশ্চিম দুদিকেই তাকাতে বাধ্য বিশ শতকে বিভিন্ন যুদ্ধে জার্মানির অবস্থানগত ইতিহাসের কারণে ইউরোপের সমরনেতৃত্বের ভূমিকা নেয়ার বিষয়ে তাদের অনীহার রয়েছে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশটির মানুষের মতাদর্শিক দ্বিধাবিভক্তি দৃশ্যমান সম্প্রতি জার্মানির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পিটার বরিস পিটুরিয়াসের নিয়োগসহ তিন পার্টির সমন্বিত সরকারের ভেতর ঐক্যের অভাবও জটিলতা সৃষ্টি করেছে সবচেয়ে বড় কথা, জার্মানির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক শীতল হওয়ার ভয় তো আছেই এত সমস্যার পরও ইউক্রেন সীমান্তকে রাশিয়ার দখলমুক্ত রাখা জরুরি ক্ষেত্রে শুল্টজ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার প্রমাণ বলা যায় বলা যেতে পারে জার্মানির কিছু বিষয় সামাল দিতে এই ঘোষণা কাজে আসবে

সম্প্রতি জার্মানির এই ঘোষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ তার তৃতীয় বাস্তবতা হলো, এই যুদ্ধে পশ্চিমের অবস্থান আরও স্পষ্ট হচ্ছে এর মানে এই নয়, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ চেয়েছিল অথবা ইউক্রেনিয়ান সেনাবাহিনী পশ্চিমা রাষ্ট্রের স্বার্থের ফসল প্রফেসর লরেন্স ফ্রিডম্যান যেমনটা বলেছেন, এমন মন্তব্য করলে ইউক্রেনিয়ানদের স্বাধীনতার প্রচেষ্টাকে অবমাননা করা হয় সমস্যা হলো, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো আপাতত প্রতিরক্ষামূলক পরিকল্পনার কথা ভাবছে এমনটাও বলা যাবে না বরং বলা যেতে পারে, বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে ইউক্রেনকে মুক্ত করার জন্য তারা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহ করার ক্ষেত্রে জার্মানির অবস্থান থেকে আমরা বুঝতে পারি, ইউক্রেন এবং তার মিত্রদের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে লক্ষ্য এবং পরিকল্পনার সমন্বয়গত ভিত স্পষ্ট নয় কথা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালেও ছিল (এখনও অটুট আছে) মূলত পশ্চিমা দেশগুলো পরমাণু যুদ্ধে যেন লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে তাদের ভাবতেই হয়েছে এমনকি কিয়েভের আকাশসীমায় বিমান চলাচলের ওপর রুশ নিষেধাজ্ঞা নিয়েও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর বিপরীত অবস্থান আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্যই মূলত পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করছিল  

কথা নিশ্চিত, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ক্রমেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে ঝুঁকে পড়ছে ইউক্রেনের সমর্থক রাষ্ট্রগুলোও এই মুহূর্তে যুদ্ধের পরিণতির বিষয়ে একমত একদিকে ইউক্রেনিয়ান সেনাবাহিনীকে ট্যাংক দিয়ে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি (তা যে সংখ্যারই হোক) থেকে আন্দাজ করা যায়, ইউক্রেন এই যুদ্ধে বিজয়ী হবে অন্যদিকে ট্যাংক কবে সরবরাহ করা হবে, কতগুলো সরবরাহ করা হবে এসব নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তা নিয়েও জল্পনা কল্পনার শেষ নেই বিষয়টি গোপন রাখা হচ্ছে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই বরং বলতে হবে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক সংকট দ্বিধাদ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে গাঢ় হতে শুরু করেছে হয়তো ভবিষ্যতে কোনো একটি সিদ্ধান্ত খাপে খাপে মিলে গেলে যুদ্ধ শেষ হবে বিশেষত রাশিয়ার দখল থেকে ক্রিমিয়া ভূখণ্ড উদ্ধারের প্রচেষ্টার সময় আমরা তা দেখতে পাব আপাতত নজর রাখতে হবে ইউক্রেনের প্রধান সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের দিকে কারণ জেলেনস্কি ইউক্রেনের ভবিতব্য অনেকটা জো বাইডেন প্রশাসনের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন প্রায়

মূল লেখক পরিচয় : সহযোগী সম্পাদকদি গার্ডিয়ান

 

দি গার্ডিয়ান থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত, ভাষান্তর : আমিরুল আবেদিন আকাশ

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা