× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মেট্রোরেল-যানজট ও দৃশ্যমান বাস্তবতা

ড. আদিল মুহাম্মদ খান

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:৫০ এএম

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:৫১ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

ঢাকার মতো জনবহুল একটি শহরে দ্রুতগামী মেট্রোরেলের যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে অনেকেরই আকাঙ্ক্ষা ছিল যোগাযোগের এমন আধুনিক ব্যবস্থা না থাকার আক্ষেপও ছিল মেট্রোরেল প্রয়োজনের নিরিখেই চালু হয়েছে ২০০৫ সালের এসটিটিপি কর্মসূচি যা পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত পরিবর্ধিত হয়েছিল, সেখানেও মেট্রোরেলকে প্রয়োজনীয় হিসেবে রাখা হয় এরপর থেকেই সরকার মেট্রোরেল স্থাপন নিয়ে কাজ শুরু করে অন্যান্য দেশের শহরাঞ্চলের দিকে তাকালে মেট্রোরেলের ইতিবাচক প্রভাব কতটা, তা বোঝা সহজ হবে সবকিছু বিবেচনায় মেট্রোরেল চালু হওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ২০০৫ সালের পর ২০২৩ সালে এসে দেখা যায় অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে জনজীবনে যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় ব্যয় করার ফলে যে দুর্ভোগ, তা কমানোর ক্ষেত্রে মেট্রোরেলের ইতিবাচক ভূমিকা ক্রমেই দৃশ্যমান হবে বিশেষত মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষরাই এই দীর্ঘ যানজটের সবচেয়ে বড় শিকার যাত্রাপথের বিভিন্ন মূল অংশ, যেখানে যানজট বা অন্যান্য সমস্যা ভোগান্তির সৃষ্টি করে, সে পথে এখন জনভোগান্তি মেট্রোরেলের কারণে অনেকাংশে কমবে

মেট্রোরেলের প্রধান সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ কিন্তু মেট্রোরেলের যে ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে সেটি মানুষের সামর্থ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়নি শুধু তা-ই নয়, অন্য যেসব দেশগুলোতে মেট্রোরেলব্যবস্থা চালু আছে, সেসব দেশে মেট্রোরেলের ভাড়ার সঙ্গে তুলনা করলেও দেখব ভাড়া বেশি নির্ধারণ হয়েছে এ কথা মনে রাখতে হবে, অনেকেই দৈনন্দিন প্রয়োজনে মেট্রোরেলে চড়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কিন্তু তারা অনেকাংশে মেট্রোরেলবিমুখ হয়ে উঠতে পারেন ভাড়ার কারণে মেট্রোরেলের জন্য যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা যদি ৩০ শতাংশও কমানো হয় তবে অনেকেই মেট্রোরেলে নিয়মিত চড়তে পারবেন সরকারের উচিত, মেট্রোরেলের বর্তমান পথটির পুরো অংশ চালু হলে জনগণের কথা ভেবে মেট্রোরেলের ভাড়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা

আমরা বিভিন্ন সমীক্ষায় বলছি, মেট্রোরেলের ভাড়া আরও কম হতে পারে কিন্তু মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, অনেকে বলছেন এর মাধ্যমে অতিরিক্ত নির্মাণব্যয় কিছুদূর হলেও সামাল দেওয়া যাবেতবে এই যে ভাড়া বাড়িয়ে খরচ তোলার কথা বলা হচ্ছে, তা কিন্তু ভাড়া না বাড়িয়ে অন্যভাবে তোলার উপায় আছে অন্য অনেক দেশে যখন কোনো প্রকল্প শুরু হয় তখন আমরা দেখি ওই এলাকার আশপাশের ভূমির দাম বেড়ে যায় সচরাচর ভূমির মালিকরাই দাম বাড়িয়ে দেন তখন সরকার তাদের কাছে বেটারমেন্ট ফি নেয় তবে আমাদের দেশের বিধিবদ্ধ আইনে বেটারমেন্ট ফি আদায়ের বিষয়ে তেমন পদক্ষেপ দেখা যায় না বেটারমেন্ট ফি আদায় করা গেলে অন্তত বেশি ভাড়ার মাধ্যমে খরচ রিকভারির পথে হাঁটতে হতো না। এই খরচ সামাল দেওয়ার আরেকটি পদ্ধতি হলো, মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্টেশনে কমার্শিয়াল স্পেস বিক্রি করা এভাবে খরচ অনেকটাই কমিয়ে এনে আমাদের যাত্রী অর্থাৎ যারা মেট্রোরেলে ওঠার জন্য মুখিয়ে আছেন তাদের জন্য ভাড়াটা সহনীয় পর্যায়ে আনা যায় কিন্তু ভাড়া বাড়িয়ে নির্মাণব্যয় কমানোর সুযোগ কম এক্ষেত্রে সরকারের উচিত বিকল্প পথ অনুসন্ধান করা আমাদের সড়কপথে গণপরিবহনের মান নিয়ে সংকট রয়েছে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা থেকে নিষ্কৃতির জন্য মেট্রোরেল বিকল্প হয়ে উঠতে পারলেও ভাড়ার জন্য অনেকেই হয়তো এই যানে চলাচল করতে পারবে না যাদের জন্য এত বড় অবকাঠামো প্রকল্প, তারাই যদি যাতায়াত করতে না পারে তবে বিষয়টি দুঃখজনক বলতেই হবে

আপাতত দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হয়েছে এই বিষয়টি নিয়েও অনেকের অভিযোগ আছে। এই রুটে অনেক মানুষ যাতায়াত করে এমন বাস্তবতা নেই এখন যারা পথটি ব্যবহার করছেন, তাদের মাঝে নিয়মিত যাত্রীর চেয়ে উৎসাহী দর্শকই বেশি অতীতেও মেগা প্রকল্প ঘিরে মানুষের আগ্রহ দেখা গেছে। সেই আগ্রহ থেকেই অনেকে মেট্রোতে উঠছেন অথচ প্রকল্পটি যদি শুরুতেই ফার্মগেট পর্যন্ত চালু করা যেত তাহলে বড়সংখ্যক মানুষ এ পথে যাত্রীসেবা নিতে পারত অবশ্য সরকারের পরিকল্পনা আছে মতিঝিল পর্যন্ত সেবা চালুর যদি সরকার এই পরিকল্পনা ঠিক রাখতে পারে তাহলে মেট্রোরেলের সুফল সবাই পাবে তবে বর্তমানে যেটুকু অংশ চালু আছে, তাতে খুব বেশি মানুষের উপকৃত হওয়ার সুযোগ কম সরকারও কিন্তু এ কথা জানে

প্রশ্ন উঠতে পারে, যতটুকু অংশ চালু হয়েছে তাতে কি যানজট নিরসন হবে উত্তরে বলতে হয়, যানজট একটি বিস্তৃত বিষয় যে অংশটুকু চালু আছে তা ঢাকার আয়তনের নিরিখে সামান্য আপাতত এতটুকু অংশ চলু হওয়ার পর মানুষ যাত্রীসেবা নেওয়ার কারণে যানজট কতটুকু কমবে, তা অনুমান করা একেবারেই কঠিন আবার মেট্রোরেল চালু হলে যানজট একেবারেই চলে যাবে, এমনটাও নয় বলা যায়, আমরা যানজট নিরসনের একটা বিকল্প মাধ্যম পাচ্ছি এই মুহূর্তে বহুমুখী যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া আমাদের যানজট নিরসনের সুযোগ খুব কম বাইরের দেশে যেমন স্টেশনের আশপাশে বিরাট জায়গা নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়, মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে তেমনটা করা হয়নি তাই আশঙ্কা অমূলক নয় যে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো ঘিরে যানজট বাড়তে পারে ঢাকার যানজট নিরসনে সরকারকে আরও কাজ করতে হবে শুধু মেট্রোরেল নির্মাণ কিংবা দু-একটা অবকাঠামো নির্মাণ করে এই সমস্যা মেটানো যাবে না মেট্রোর সম্পূর্ণ অংশ চালুর আগে যানজট নিরসনে বাস সার্ভিস উন্নত করা জরুরি। যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণ এবং সড়কব্যবস্থার সমন্বয়সাধন করা জরুরিআশার কথা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যানজট নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে তবে এগুলো সময়সাপেক্ষ আরও তিন বা চার বছর আগে আমরা যদি মেট্রোরেল স্টেশনগুলোর আশপাশে করিডোর নির্মাণ করতে পারতাম বা অন্যান্য সড়ক সমন্বয়ের ব্যবস্থা নিতাম তাহলে অনেক সমস্যা নিয়েই ভাবতে হতো না মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ সুফল দ্রুত দৃশ্যমান হতো এখন এই সুফল দৃশ্যমান হতেও দেরি হবে আপাতত মেট্রোরেল দিয়ে সরকার যানজট নিরসন করতে পারবে নাতবে সড়কে ব্যয় সাশ্রয়ের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে আমাদের যানজট নিরসনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে

 


লেখক : শিক্ষাবিদ ও নির্বাহী পরিচালকইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা