× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষিতে উদ্যোগ-উদ্যম ধরে রাখতে হবে

আফতাব চৌধুরী

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:৫৪ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

চাকরি হারিয়ে বা ঝুঁকি এড়াতে মহামারিকালে অনেকেই গ্রামে ফিরেছেন। বিদেশ থেকেও ফিরেছেন অনেক মানুষ। সেসব মানুষ আমাদের অর্থনীতিতে নতুন ভাবে প্রাণসঞ্চারের ক্ষমতা রাখেন। আমাদের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে তারা গতি সঞ্চার করতে পারেন। যদি তা যথাযথ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হয়। শিল্পনির্ভর বর্তমান পৃথিবীতেও কৃষির গুরুত্ব হারায়নি। এ ক্ষেত্রেও রয়েছে কর্মসংস্থান তৈরি ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধির সুযোগ। পাশাপাশি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যেও রয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ। আমরা উন্নয়ন ও অগ্রগতির নানা ক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বে অনেকের কাছেই রোল মডেল। কৃষির সফলতা করোনাকালেও আমাদের বড় সংকটে পড়তে দেয়নি।

নদীনালা, খাল-বিল, জলাশয়ের দেশ বাংলাদেশ নদীমাতৃক বাংলাদেশে মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা প্রচুর। কিন্তু নানা কারণে এখনও আমরা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মাছ উৎপাদন করতে পারছি নাঅনেক ক্ষেত্রে মাছের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। এই কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ আমাদের মাছ চাষিদের মধ্যে যারা বিলে মাছ চাষ করেন, তাদের অনেকেই এখনও সঠিকভাবে বিলে মাছ চাষের পদ্ধতি জানেন না। কীভাবে চাষ করলে বিলে মাছের উৎপাদন বাড়ে, তা-ও তাদের অনেকের অজানা। ফলে বছরের পর বছর অনেক উৎপাদন গোষ্ঠী বিলে মাছ চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণত বিলের পাড়গুলো থাকে নিচু এবং এগুলোর অবস্থান প্রধানত অববাহিকা অঞ্চলেছাড়া বিলে এত বেশি জলজ আগাছার জন্ম হয় যে সেগুলোর মড়ক হলে তার পচনক্রিয়ায় কাদার পরিমাণ বেড়ে যায়। এভাবে বিলে ক্রমাগত কাদার পরিমাণ বাড়তে থাকলেও সেই কাদা তুলে বিল সংস্কারপ্রক্রিয়া নেওয়া হয় না। আর এর পেছনে রয়েছে কাদার ক্ষতি সম্পর্কে আমাদের না জানা এবং হাতে যথেষ্ট অর্থ না থাকা।

জলাশয়ে কাদার পরিমাণ বাড়লে, সেখানে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এতে মাছের বৃদ্ধি কমে যায়। কাদার কারণে পানির গভীরতা কমে যায় এবং জলাশয়ে পানির পরিমাণ কমতে থাকে। শুধু বর্ষায় পানির গভীরতা সামান্য বাড়লেও বছরের অন্য সময়ে তা ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া বন্যার সময় মাঠের কীটনাশক ধুয়ে বিলে এসে পড়ে। পাশের শহরাঞ্চল অথবা কলকারখানা থেকেও বিলে আসে দূষিত পদার্থপ্রতিক্রিয়ায় বিলের মাছের উৎপাদন কমে। এ ছাড়া বর্ষায় পানি প্রবেশের বিভিন্ন পথে বিলে আসা অসংখ্য রাক্ষুসে মাছের নির্বিচারে পোনা ভক্ষণেও জলাশয়গুলোর পোনা মাছের সংখ্যা কমে যায়। অধিকাংশ বিলে মাছের পোনা মজুদের সংখ্যা ঠিক রাখা যায় না। প্রায় সর্বত্র অপেক্ষাকৃত ছোট মাপের চারা মজুদ করা হয়। এ জলাশয়গুলোয় মৎস্যভুক মাছ থাকায় সেই চারা দ্রুত নষ্ট হয়ে মাছের উৎপাদন কমে যায়। জলাশয়ে অবস্থিত মৎস্যভুক মাছ, সাপ ও বিভিন্ন প্রকারের পাখি ছোট আকারে মজুদ করা মাছের পোনা খেয়ে মাছের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। আবার সব বিলে পানির গভীরতাও এক নয়গভীরতা অনুসারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মজুদ করা না হলে, গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাছের পোনা মজুদ না হলে কোনো প্রজাতিরই মাছের বৃদ্ধি ঘটে না, মাছেরও উৎপাদন কমে যায়।

মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে ব্যক্তিগত লাভের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে কিছু নিয়মের মধ্যে থাকা যেমন জরুরি, তেমনি ধারাবাহিক সফলতা ধরে রাখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদেরও বিকল্প নেই। শুধু মাছই নয়, ধারাবাহিকভাবে কৃষি ক্ষেত্রে টেকসই ও লাভজনক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে আমাদের সচেতন হতে হবে। এলাকানির্ভর এবং চাহিদাভিত্তিক কৃষি উৎপাদনে প্রযুক্তিজ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিও জরুরি। প্রকৃতিজাত মাছ কমে যাওয়ায় বিলে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত প্রজাতির মাছের মজুদ বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে। মাছের মজুদ বাড়ানোই সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায়। যত দিন পর্যন্ত না বিলের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে, তত দিন মাছের অভাব থাকবেই। বিলগুলোর অব্স্থান বিভিন্ন অঞ্চলে, তাই প্রতিটি বিলের সমস্যা এক নয়। বিলের সমস্যা নির্ভর করে জলাশয়ের অবস্থান ও গুণাবলির ওপর। সুতরাং বিলের সমস্যাগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীতে ফসলের নিবিড়তা কয়েকগুণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের যে অভূতপূর্ব সফলতা, তার পেছনে রয়েছে গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিরলস প্রচেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বারবার তার বক্তৃতায় কৃষির ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি এক ইঞ্চি ভূমিও ফেলে না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈশ্বিক সংকটে খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। সব জটিলতা এড়িয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হতে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। সেই সত্যটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে সরকার। ফলে সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় কৃষির বহুমুখী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রও বেড়েছে। আমরা তুলনামূলকভাবে খাদ্য উৎপাদনে অনেকটাই সফল। খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি আমরা আজ খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশ। বর্তমান সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদেরকে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আর এই পথ পাড়ি দিতে হলে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে হবে। অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখার। এ উদ্যম ধরে রাখতে প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনা, উদ্যোগ এবং যথাযথ বিনিয়োগ। তাতে ব্যক্তির লাভ, দেশের লাভ, দশের লাভ। সেই সঙ্গে ফসলের অপচয় কমাতে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ক্ষেত্রে যদি অঞ্চলভিত্তিক কৃষি সমবায় গঠন করা যায় এবং কৃষিপণ্য উৎপাদন, ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করার যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান সম্ভব হয়, তা হলেই প্রয়োজন অনুযায়ী স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকই কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাত অনায়াসে করতে পারবে।

 

লেখক জ্যেষ্ট সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা