× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিক্ষায় অসম প্রতিযোগিতা

ড. কবিরুল বাশার

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৩:৩৮ এএম

আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৩:৪৩ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিদিন সকাল ৭টা ৩০-এর আগে দেখা যায় লাইব্রেরির প্রবেশপথে বিশাল লাইন। প্রাতর্ভ্রমণে বের হওয়া মানুষ এমনটি দেখে প্রশংসা করেনলাইব্রেরির ভেতরে ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীই বিসিএস অথবা চাকরির গাইড পড়ছেন এটি শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরই চিত্র নয়, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চালচিত্র পিছিয়ে নেই মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাওএর পেছনের কারণ, একাডেমিক পড়াশোনা চাকরি পেতে সাহায্য করছে না। তাহলে কি একাডেমিক লেখাপড়ার পদ্ধতি ভুল? না চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি ভুল? সাধারণত আমাদের সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থীরা পড়েন মেডিকেল বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েমেডিকেল বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য সরকারের খরচও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি তাছাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে, শিক্ষায় ক্রমেই বাড়ছে অসম প্রতিযোগীতা যার বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হতে বাধ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার জন্য রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, বিনিময়ে শিক্ষার্থী জ্ঞানার্জনমুখী শিক্ষার দিকে না গিয়ে ছুটছেন চাকরিমুখী পড়াশোনায়সরকারি চাকরির প্রতি তরুণ প্রজন্মের এই ঝোঁকের কারণ সরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিকভাবে চতুর্থ বা তৃতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিকেও এখন অনেক বড় ভাবা হয় আর প্রথম শ্রেণি বা বিসিএস ক্যাডার হলে তো সোনায় সোহাগা থেকে বোঝা যায়, আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন প্রয়োজন সেই সঙ্গে বেসরকারি চাকরিও আকর্ষণীয়, নিরাপদ এবং আধুনিক শ্রম আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত সরকারি চাকরির ওপর চাপ কমাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিরাপত্তার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি একই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক সময়োপযোগী করতে প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত সনদনির্ভরতা কমিয়ে এনে তা জ্ঞান বা কর্মনির্ভর করা প্রয়োজন শিক্ষা শেষে কর্মে প্রবেশের পন্থাও সময়োপযোগী করতে হবে দেশে উচ্চশিক্ষার এত প্রতিষ্ঠান, এত শিক্ষার্থী ভর্তি না করিয়ে শিক্ষার গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দক্রম দিয়ে ভর্তি হওয়ার পরও, একটা পর্যায়ে এসে ওই বিষয়ে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেনতখন জ্ঞান অর্জনের চেয়ে সনদ অর্জন করাই মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। জ্ঞানার্জনের চেয়ে তারা বিসিএস পরীক্ষার জন্য নিজেদের তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেনতাদেরই বা দোষ ক? তারা জানেন চাকরির পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বিশেষ কাজে আসে নাকাজে লাগে মুখস্থবিদ্যা, সাধারণ জ্ঞান।

সব বাদ দিয়ে বিসিএস বা সরকারি চাকরির পেছনে যারা ছুটছেন তাদের কত শতাংশ সেই সোনার হরিণটি ধরতে পারেনহাজারে এক জনের কম। অথচ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত এ যাত্রায় ছুটে চলেছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। যতটুকু মেধা, শ্রম ও সময় তারা চাকরি খোঁজার পেছনে দেন, তার অর্ধেক যদি নিজের বিষয়ে দেন তাহলেও মিলতে পারে পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, সঙ্গে মোটা অঙ্কের স্কলারশিপবিশ্বায়নের এ যুগে নিজেকে বিশ্ববাজারের জন্য যোগ্য করে তুললে পৃথিবীর সমৃদ্ধিশালী ও উন্নত দেশে তার অবস্থান তৈরি হবে।

তরুণদের মূল লক্ষ্য যদি বিসিএস বা সরকারি চাকরি হয়, তাহলে কোনো একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করে সময়, মেধা, অর্থ নষ্ট করার প্রয়োজন কী? বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়গুলো থাক‌তে পা‌রে শুধুই তা‌দের জ‌ন্য, যারা জ্ঞান অর্জন করতে চান এবং কর্মজীব‌নে এ পেশায় যেতে চান। আর যারা সরকারি চাকরিতে যেতে চান, তাদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবেশের বিষয়টি এইচএসসি পাস করার পরই হোক চাকরিতে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জনের পর সেখান থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ দেওয়া হবে। ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য এইচএসসি পাস করার পরই পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যেখানে উত্তীর্ণরা পরে কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করবেনএজন্য একটি সিভিল সার্ভিস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখান থেকে দেওয়া হবে চার বছর মেয়াদি ডিগ্রিযেখানে পড়ানো হবে সরকারি চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মমুখী বিষয়গুলো। সাধারণ ও বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখা শেষে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে নিজ নিজ ক্যাডারেফলে প্রত্যেক কর্মকর্তাই যোগ্য হয়ে চাকরি শুরু করবেন চাকরিতে যোগদানের পর নিজের ক্যাডারে আরও পাণ্ডিত্য অর্জনের জন্য তাদের দেশের বাইরে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে প্রত্যেকেই নিজের কাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে চাকরি শুরু করবেন সরকারকেও বিসিএস পরীক্ষার পর কোটি কোটি টাকা খরচ করে ক্যাডারদের নতুন প্রশিক্ষণ দিতে হবে না।

প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হলে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় হয়তো খুব বেশি ছাত্র ভর্তি হবেন না। এতে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার খরচ কমবে। আর যারা পছন্দ অনুযায়ী সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন তারা নিজেদের বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করে ওই ধরনের পেশায় যোগদান করবেনএতে প্রতি বছর সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে এবং শিক্ষার্থীরা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহী হবেন

 

লেখক : কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা