× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রেক্ষাপট

পলিথিনের বিষ

রাতুল মুন্সী

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:১২ পিএম

পলিথিনের বিষ

আশির দশকে বিদেশ থেকে আনানো পলিথিন ২০ বছরে দেশের মাটি, পানি, বাতাস, প্রকৃতির জন্য এতো বেশি হুমকির পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন-বাজারজাত এবং ব্যবহার একবারে নিষিদ্ধ করা হয়। এতো বছর পরও কেন বিষাক্ত পলিথিন ব্যবহার কমছে না? মানুষ যেন পলিথিন ব্যবহারে সতর্ক হয়, তার জন্য আইনও করা হলো। বাংলাদেশ সরকার বিশে^র প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম ২০০২ সালের ১ মার্চ আইন করে পলিথিন ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করেন। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ধারাটি সংযোজন করা হয়। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাত করে, তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে।  


প্লাস্টিক মাটির সংস্পর্শে আসায় এর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গাছে মিশে যাচ্ছে। খাদ্যের জন্য পশু-পাখি উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করায় তা প্রাণিদেহে প্রবেশ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক মানুষের শরীরে আরও অনেক মরণব্যাধির পাশাপাশি ক্যানসারের জন্য দায়ী। এতো ক্ষতি হওয়ার পরও যেহেতু আমরা প্লাস্টিকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছি, তাই এর ব্যবহার একবারে কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। নিজেদের স্বার্থেই যাবতীয় কাজে কীভাবে পলিথিন ব্যবহার কমিয়ে আনা যায়, সেই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অদ্ভুত হলেও সত্য, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সব ধরনের পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগ ও মোড়কের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরে এসব সামগ্রীর ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা ছিল। দেশে ৩টি নৌবন্দর হয়েছে, আরও একটির কাজ চলমান (মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর)। ছোট ছোট যে সকল নৌ-ঘাট ছিল, যেখানে যাত্রীসহ মালামাল আনা-নেওয়া হতো, সেগুলো প্রায় বন্ধ হবার পথে। কারণ ব্যবহৃত পলিথিন নদীতে ফেলার কারণে নদীর তলদেশে পলিথিনের স্তর পড়ে নৌকা আর ঘাটে ভিড়তে পারছে না। শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ও জোয়ার-ভাটানির্ভর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ২৫ ফুট বিষাক্ত পলিথিনে ভরাট হয়ে গেছেÑএমন খবর আগেও বেশ কয়েকবার সংবাদমাধ্যমে পাওয়া গেছে। 


এক হিসাব বলছে, শুধু কর্ণফুলী নদীতে প্রতিমাসে দেড় কোটির বেশি বিষাক্ত পলিথিন পড়ছে। ঢাকার আশপাশে যে নদীগুলো ছিল, বর্তমানে সবই প্রায় পলিথিনের দখলে। ঢাকা শহরে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই পলিথিন। শুধু ঢাকাতে প্রতিদিন দেড় কোটির ওপরে পলিথিন ব্যবহার হয়। ডোবা-নালাসহ আশপাশের জলাশয়ে ব্যবহারের পর পলিথিন ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বিশে^র অনেক দেশ বিষাক্ত পলিথিনের দূষণ থেকে দেশ, মাটি, পানি, বাতাসসহ মানুষ ও পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য নিজ নিজ উদ্যোগে গবেষণা করে পরিবেশের উপযোগী অনেক ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।


বর্তমানে ভারত, চীন ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বায়োডিগ্রেবল পলিথিন প্রস্তুত করা হচ্ছে। আফ্রিকা, উগান্ডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, উত্তর আমেরিকাসহ প্রায় শতাধিক দেশে রাসায়নিক পলিথিনকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে এবং তারা পচনশীল পলিথিন উৎপাদন করছে। ২০১৯ সাল থেকেই গাজীপুরের কামারপাড়াতে অবস্থিত ‘এক্সপো এক্সেসরিস’তে ভুট্টা থেকে পলিথিনের ব্যাগ প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এ ছাড়াও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমেদ খান ২০১৮ সালে আবিষ্কার করেন পাট দিয়ে তৈরি পলিথিন। পাট দিয়ে তৈরি পলিথিন কবে নাগাদ মানুষের হাতে হাতে আসবে বিষাক্ত পলিথিনের বিকল্প হয়ে, তা কেবল ধোঁয়াশার মধ্যেই আছে। এ অবস্থায় সরকারের কঠোর আইন এবং আমাদের স্বদেশপ্রেমের ব্রতই পারে বিষাক্ত পলিথিনমুক্ত পরিবেশ উপহার দিতে। নতুবা বিষাক্ত পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।


লেখক : সভাপতি, ফলদ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, নজরুল বিশ^বিদ্যালয়


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা