× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্মাণ কাজ

সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫ ১৬:৪১ পিএম

সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে

যশোর শহরের অভিজাত এলাকা ‘সার্কিট হাউস পাড়ায়’ নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের ষষ্ঠ তলার বারান্দা ভেঙে দুই ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ১ জুলাই ‘ইকবাল মঞ্জিল’ নামের ভবনটিতে নির্মাণ কাজ তদারকির সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ‘বিল্ডিং ফর ফিউচার’ নামে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ভবনটির নির্মাণের দায়িত্বে ছিল। ভবনটি বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠার আগেই এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেমন বেদনাদায়ক তেমনি নির্মাণ কাজে সুরক্ষার অভাবকেও স্পষ্ট করে। 

২ জুলাই প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ প্রাণ গেল ৩ জনের’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের ষষ্ঠ তলায় দাঁড়িয়ে কাজ করছিলেন প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। এ সময় হঠাৎ বারান্দাটি ভেঙে তারা নিচে পড়ে যান। পরে গুরুতর অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। 

অভিযোগ রয়েছে, দেশে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনগুলোর একটি বড় অংশই যথাযথ নিয়ম মেনে তৈরি হয় না। সে কারণে ভবনগুলোতে রয়ে যায় কাঠামোগত দুর্বলতা। এ শুধু রাজধানীরই চিত্র নয়, সারা দেশের। র্ব্তমানে রাজধানীর বাইরে দেশের জেলা শহরগুলোর পাশাপাশি উপজেলা, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও উঁচু ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু এসব ভবন নির্মাণের জন্য যথাযথ বিধিবিধান অনুসরণ না করায় অনেক ভবন অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ভবন নির্মাণের আগে রাজউক, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নেওয়ার যে বিধান অনেক সময় তাও মানা হয় না। অনেক ভবন নির্মাণ কাজেই অনুমতির তোয়াক্কা না করার উদাহরণ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনুমতি নিয়েও ইচ্ছামতো নকশা পরিবর্তন করার অভিযোগ। ফলে এসব ভবন নির্মাণ কাজ শেষে আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর কোথাও কোনো ভবনে অগ্নিকাণ্ড, ভবন হেলে পড়া, ধসেপড়া বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন বিল্ডিং কোড বা ভবন নির্মাণ বিধিমালা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অথচ ভবন নির্মাণ বিধিমালা যথাযথভাবে প্রয়োগের উদাহরণ খুবই কম। অথচ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নকশা ও নির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ধারিত বিধি অনুসরণ করতে হয়। দেশে বিল্ডিং কোড বা নির্মাণবিধি প্রথম প্রণীত হয় ১৯৯৩ সালে। কিন্তু আইনি জটিলতা ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আগের বিধি সংশোধনের পর ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংশোধিত ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০’ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এ নির্মাণবিধি শুধু ঢাকা নয়, বরং সারা দেশেই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

একটি ভবন নির্মাণের সময় ন্যূনতম যে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা যে কোডের মধ্যে থাকে তাকে বিল্ডিং কোড বা ভবন নির্মাণ বিধিমালা বলে। যেকোনো ভবন নির্মাতা বা মালিক কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই জাতীয় নির্মাণ বিধিমালা মেনে দরকারি ছাড়পত্র গ্রহণ করে তবেই ভবন নির্মাণের অনুমতি পায়। নির্মাণ বিধিমালা থাকার মূল লক্ষ্য হলো, ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেরই এমন নিজস্ব ভবন নির্মাণ বিধিমালা রয়েছে। আমাদের দেশেও রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তিপর্যায়ে নির্মিত এই ভবনটি বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে কি? বিল্ডিং কোড অনুসরণ মানে নিশ্চিত নিরাপদ ভবন। 

কিন্তু বাস্তবতা হলো, যশোরের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলÑ নির্মাণশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে এখনও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। এই ক্ষেত্রে আইনগত কাঠামো থাকলেও, শ্রম আইনের ত্রুটি এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাই কিছু বিষয়ে জরুরি সংস্কারের প্রয়োজন। নির্মাণস্থলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকরভাবে প্রয়োগের জন্য ‘ইমারত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গঠনের বিষয়টিও সময়ের দাবি। 

ঝুঁকিমুক্ত যেকোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দরকার নিরাপত্তা। মনে রাখতে হবে নিরাপত্তাই প্রথম। আর এই নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকারের দৃষ্টিপাত জরুরি।

আমরা মনে করি, নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা এসব ভবনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ, অপরিকল্পিত ও অবৈধ এসব ভবন শুধু বসবাসের অযোগ্যই নয়, জনজীবনও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এ ধরনের ভবনে ভূমিকম্প, অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকে। যশোরের উল্লিখিত বহুতল ভবনটি মালিকের সদিচ্ছা নাকি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ সুবিধা লাভের কারণে এ হেন পরিস্থিতিÑ তার তদন্ত প্রয়োজন। তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ হবে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা