× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জ্বালানি

অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা দরকার

এম শামসুল আলম

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ১৮:৩৬ পিএম

অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা দরকার

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিনের। আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও অস্থিরতা এখন চরমে। যা সমাধানে সরকার অনেকটা ব্যর্থ বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে মূল সমস্যা সমাধান না করে বরং সেখানে আগুনে ঘি ঢেলে এডিবি-বিশ্বব্যাংকের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে সরকার। এ বক্তব্য দিয়ে ৪ জুন অয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরইবি-পিবিএসের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ অবসানের লক্ষ্যে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) তার সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি পেশ করে। 

২০১০ সাল থেকেই দাতাগোষ্ঠী এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুতায়ন খাতকে বেসরকারিকরণের যে ছবক দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। তার রেখে যাওয়া দায়ই হয়তো কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে বর্তমান জ্বালানি উপদেষ্টাকে। এ পরিস্থিতির যখন সূত্রপাত হয়, তখন ক্যাবের তরফ থেকে একটা তদন্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের ফার্স্ট পার্ট গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সরকারের কাছে জমা দেওয়া হলেও সেকেন্ড পার্ট দুর্নীতির অভিযোগ-সংক্রান্ত তদন্ত ক্যাব স্থগিত রাখে। কারণ বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে ক্যাব প্রত্যাশিত সহযোগিতা পায়নি। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ক্যাবের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো:

১. বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাকরিবিধি ভিন্ন হওয়ায় সমিতিগুলো কার্যত আরইবির অংশ নয়, বরং অধীন প্রতিষ্ঠান। ফলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হন বিধায় বিরোধ ও সংঘাত সৃষ্টি হয়। এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের নিমিত্তে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন, ২০১৩-এর ধারা ২(১০), ২৫ ও ২৬-এর আলোকে এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নং ৮২-৮৩/২০২১-এ প্রদত্ত রায়ের ভিত্তিতে আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য এক ও অভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট চাকরিবিধি প্রণয়নের সুপারিশসহ সব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে জাতীয়করণের প্রস্তাব করা হলো।

২. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিটি অভিযোগ কেন্দ্রে ন্যূনতম একজন ভোক্তা প্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে। ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভোক্তা প্রতিনিধির দায়িত্ব ও ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট হতে হবে এবং তা বিধি বা প্রবিধানে উল্লেখ থাকতে হবে। 

৩. জাতীয়করণের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন, ২০১৩-এর ধারা ৩১ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নং ২২৭৬/২০২১-এ প্রদত্ত রায় বলবৎ থাকা অবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোয় কোনো সিবিএ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি হবে না বলে কমিটি মনে করে।

৪. বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধি পাবে এমনসব (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) পদক্ষেপ বিবেচনার পূর্বে বিইআরসির মাধ্যমে গণশুনানির ভিত্তিতে (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩-এর ধারা ৩৪) ভোক্তা পক্ষের মতামত গ্রহণ ব্যতীত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না।

৫. বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩-এর ধারা ৪০ মতে আরইবির বিরুদ্ধে আনীত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভিযোগগুলো তথা আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। ক্যাব এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

৬. বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গত বছরের ২৩ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাঠামোগত সংস্কার পর্যালোচনার জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি চলতি বছরের ১ জুন আরইবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জ্বালানি উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। কমিটির পক্ষ থেকে সভায় পেশকৃত পল্লী বিদ্যুৎ রিস্ট্রাকচারিং প্রস্তাবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোকে মূলত বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে কোম্পানিতে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়।

৭. কমিটির উপস্থাপিত প্রতিবেদনের ওপর মতামত প্রদানের শুরুতে ক্যাব প্রতিনিধি ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা কমিটিকে তিনটি প্রশ্ন করে তার বক্তব্য পেশ করেন : (১) পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে কোম্পানি করার সুপারিশের ভিত্তি কী? (২) অংশীজন প্রতিনিধি যাদের মতামত কমিটি গ্রহণ করেছে, তারা কারা? তাদের মধ্যে কেন ক্যাবের কোনো প্রতিনিধি নেই? এবং (৩) রিস্ট্রাকচারিং প্রস্তাবে কমিটির সুপারিশের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের অভিন্ন সুপারিশও পেশ করা হয়েছে, ওইসব বিশেষজ্ঞ কারা? ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা কেন তাদের মধ্যে নেই? কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তথ্য-প্রমাণাদি অনুশীলন এবং অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশগুলো তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সচিব সভায় নিশ্চিত করেন, ‘ক্যাবের তদন্ত রিপোর্টটি কমিটিকে দেওয়া হয়েছে।’ অথচ কমিটি তা দেখেনি!

৮. কমিটির রিপোর্টে দেখা যায়, অংশীজন বলতে আরইবি ও পিবিএস; ক্যাব নয়। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় অংশীজনদের ফিডব্যাক গ্রহণ ও চলতি বছরের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় ফিডব্যাক পর্যালোচনা ও সুপারিশ চূড়ান্তকরণে কোথাও কোনো পর্যায়ে ক্যাব কিংবা ক্যাবের কোনো বক্তব্য বিবেচনায় আসেনি। এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, এ সভায় ক্যাব মতামত দিতে পারে। জবাবে ক্যাব প্রতিনিধি জানান, সভা আহ্বানের বিজ্ঞপ্তিতে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও ক্যাবকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। অর্থাৎ ক্যাবকে উপেক্ষা করা পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ২৯ মে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি উপদেষ্টার নির্দেশে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টাকে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সভায় উপস্থাপিত বক্তব্য ও মতামত ছিল সরকারের বিবেচনার জন্য। তা কমিটির বিবেচনার সুযোগ নেই। কমিটি তার প্রতিবেদন চলতি বছরের ৫ মার্চ চূড়ান্ত করে এবং সরকারের কাছে দাখিল করে।

৯. গ্রামীণ ভোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সংকট ও ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাতের শিকার। তা কাঠামোগত সংস্কার পর্যালোচনা কমিটির বিবেচনায় না আসার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ক্যাব প্রতিনিধি বলেন, ‘ভোক্তারা এখন উত্তপ্ত কড়াইয়ে আছে, কমিটির সুপারিশ গৃহীত হলে তাদেরকে জ্বলন্ত চুলায় ফেলা হবে। ক্যাব মনে করে, ভোক্তারা উপেক্ষিত। ফলে কমিটির সুপারিশ একপেশে। তাই তা ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ এবং স্বার্থসংঘাতযুক্ত।’

১০. বলা হয়, কিছু কিছু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি লাভে আছে। বেশিরভাগই লসে থাকে। লাভ থেকে লসে সাবসিডি যায়। আরইবি সব সময় লাভে থাকে। আসলে সব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমবেশি সরকারি সাবসিডিতে চলে। সরকার বছরে ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতে সাবসিডি দেয় এবং সিংহভাগ সাবসিডি পল্লী বিদ্যুতে যায়। লাভ-লসের হিসাবে এই সাবসিডি বিবেচনায় আসে না। তাহলে কোম্পানি করে পল্লী বিদ্যুতের লাভজনক বাণিজ্য হবে কীভাবে, মানুষই-বা সুবিধা পাবে কীভাবেÑ কমিটি সেসব ব্যাপারে তাদের প্রতিবেদনে কিছু্ই বলেনি। এ ব্যাপারে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকেরই-বা ব্যাখ্যা কী, তাও জানা যায়নি। কমিটি বলছে, কোম্পানি হলে ব্যয় কমবে। কীভাবে কমবে, এর কোনো বিচার-বিশ্লেষণ কমিটির প্রতিবেদনে নেই। সভায় এক প্রশ্নের জবাবে কমিটি বলেছে, এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য বা ডেটা নেই। আসলে কোম্পানি জনবল কমিয়ে ব্যয় কমায়। পল্লী বিদ্যুৎ কোম্পানি হলে ১৫ হাজার মিটার রিডারের চাকরি কীভাবে নিয়মিত হবে, সে সম্পর্কেও কমিটি কোনো কথা বলেনি। ক্যাবের প্রতিনিধি সভায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের বিদ্বান ও বিদগ্ধ জনদের চিন্তা ও চেতনায় দেশের মানুষের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি যদি এভাবে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে সমাজে সুবিচার নিশ্চিত হবে কীভাবে!

১১. কেবল এনার্জি নয়, আমাদের সব খাতে রেগুলেটরি সংস্থা ভোক্তা অধিকার নয়, লুণ্ঠনে সুরক্ষা দেয়! কমিটির সুপারিশ মতে আরইবিকে এ ক্ষমতা দিয়ে ভোক্তাদের জন্য জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করা কঠিন হবে। বিইআরসির বিরুদ্ধে ভোক্তা অভিযোগ খতিয়ে দেখলে পল্লী বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে কমিটির সুপারিশের সীমাবদ্ধতা পরিষ্কার হতো। প্রাইসিংয়ের ব্যাপারে কমিটির বক্তব্য আমাদের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। এনার্জি খাতের চলমান সংস্কারের বাইরে আরইবি। চলমান সংস্কার ভোক্তাদের জ্বালানি সুবিচার থেকে বঞ্চিত করেছে। জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিইআরসি অকার্যকর এবং তাদের ভূমিকা ক্ষতিকর। তাই আরইবিকে চলমান সংস্কারের আওতায় আনার আগে তা মূল্যায়ন হওয়া জরুরি।

১২. বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির অংশ হিসেবে আরইবিতে নিয়োগ ও কেনাকাটায় টেন্ডারসহ মাঠ পর্যায়ে নানা ভয়াবহ অনিয়ম হয়েছে। ক্যাবের প্রাথমিক ফাইন্ডিংসে সেসব ধরা পড়ে। অতীতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এনার্জি খাতের দুর্নীতিকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। তারা এমনও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার কাছে চিঠি পাঠিয়ে তাকেই ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এটি ভয়ংকর তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি নিয়ে ওই মন্ত্রণালয় যা করেছে এবং এখনও যা করছে, তা ভয়াবহ প্রহসন। পল্লী বিদ্যুৎ এ পরিস্থিতির শিকার। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অভিযোগ দুদকে আসেনি। ক্যাব থেকে আসা বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির অভিযোগ তারা আমলে নিয়েছে।

১৩. পল্লী বিদ্যুতায়ন খাত সংস্কারে এডিবি-বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে বিগত সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী যেখানে ফেল করেছেন, তা সফল করার স্বপ্ন বর্তমান সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা দেখেন, এমন আশঙ্কা থাকায় ক্যাবের পক্ষ থেকে তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের এই এজেন্ডা কখনোই সফল করা যাবে না।

১৪. বিশ্বব্যাংক-এডিবির পরামর্শে সরকার যে পথে হাঁটতে চাইছে, তা সফল হলে পল্লী বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক খাতে পরিণত হবে। তাতে এ খাত এনার্জি খাতের অন্যান্য সরকারি কোম্পানির অনুরূপ পরিণতির শিকার হবে। ওইসব কোম্পানি আকাশচুম্বী মুনাফা করছে। অথচ সেখানে আর্থিক ঘাটতি বাড়ছে। ঘাটতি মেটানোর কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতেও ব্যয় বাড়ছে। কোম্পানি হলে ব্যয় আরও বাড়বে। তাতে আর্থিক ঘাটতিও আরও বাড়বে। আর্থিক ঘাটতি মোকাবিলায় জ্বালানি আমদানি কমানো হয় এবং বিদ্যুতের দাম ও বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতা আমদানি হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ক্ষমতার (২৭ হাজার ৮২৪ মেগাওয়াট) ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অথচ বিদ্যুৎ আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৬৭১ দশমিক ৫২ কোটি ইউনিট। অর্থাৎ মোট বিদ্যুতের (৯ হাজার ৪৮৩ দশমিক শূন্য ৯ কোটি ইউনিট) ১৮ শতাংশ। ক্যাবের আশঙ্কা, অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আগামীতে বিদ্যুৎ আমদানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

১৫. সরবরাহকৃত মোট বিদ্যুতের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবহার হয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধি এখন গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ বাংলাদেশকে দ্রুত বিদ্যুৎ আমদানি বাজারে পরিণত করার ক্ষেত্রে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধি গুরুত্ব পাচ্ছে। এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি বাজারে পরিণত করতে চায়। ভারতের ক্রসবর্ডার এনার্জি ট্রেডিং পলিসি তারই প্রমাণ। তাই ক্যাব পল্লী বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিকীকরণের উদ্দেশ্যে কোম্পানি করার মতো গণস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।

১৬. এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আশির দশক থেকে সংস্কার চলছে। উদ্দেশ্য প্রাইভেটাইজেশন। এ উদ্দেশ্যে রিস্ট্রাকচারিংয়ের নামে এনার্জি খাতকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে কোম্পানি বানিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। ওই মন্ত্রণালয়ের অওতায় এখন কমবেশি ৭৫টি কোম্পানি। প্রতিটি কোম্পানি এখন লাভজনক এবং পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত অর্থের মালিক। সেসব অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট রেখে কোম্পানিগুলো সুদের ব্যবসা করে। কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান ও সদস্য, কর্মচারী-কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং বিনিয়োগকারীরা অন্যায় ও অসম আর্থিক সুবিধা ও অতিরিক্ত কর্তৃত্ব ভোগ করেন। অথচ ব্যাংক থেকে সুদে টাকা ধার নিয়ে কোম্পানি চালানো হয়। আর্থিক ঘাটতি বাড়ে। তা সমন্বয়ে সরকারি ভর্তুকি ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ে। আলোচ্য পল্লী বিদ্যুৎ রিস্ট্রাকচারিং প্রস্তাব ওই সংস্কারেরই ধারাবাহিকতা এবং পল্লী বিদ্যুৎকে চলমান সংস্কারের আওতায় আনারই প্রয়াস। তাই ক্যাব গত ৪ জুন সংবাদ সম্মেলনে উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখান করে।

১৭. পল্লী বিদ্যুতের আলোচ্য সমস্যা : অসমতা ও বৈষম্য। তা নিরসনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিক পণ্য বানাতে হবে এমন ধারণা অবাস্তব। এডিবি-বিশ্বব্যাংক এমন ভাবনা ভাবলেও সরকারের তেমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই। যে সমস্যার একমাত্র সমাধান আরইবি-পিবিএসকে এক ও অভিন্ন চাকরিবিধির আওতায় আনা, সে সমাধানের জন্য ক্যাবের পক্ষ থেকে ওই সুপারিশ করা হয়েছে। তা উপেক্ষা করে এত জটিলতা সৃষ্টি কেন!

১৮. বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক ৫ জুন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোয় উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে গৃহীত ব্যবস্থাদি অবহিত করে আরইবি ও পিবিএসগুলোকে প্রদত্ত পত্রে তিন দফা সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম :

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ন্যায় অভিন্ন চাকরিবিধি প্রণয়নসহ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণী সংস্থার ন্যায় কোম্পানি গঠনের বিষয়ে উত্থাপিত দাবি পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বিবেচনাসহ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রতিবেদন দাখিল করবে এবং এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার স্বল্পতম সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

ওই পত্রে নিশ্চিত করা হয়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে কাজে যোগদান করবেন মর্মে অঙ্গীকার প্রদান করা হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক-এডিবির সুপারিশ উপেক্ষা করে সরকারের পক্ষে আলোচ্য সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে কি না সময়ই তা বলবে। এজন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

  • জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব এবং ডিন, প্রকৌশল অনুষদ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা