× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিক্ষার হালচাল

মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়াই দেশের মৌল ভিত্তি

ড. মো. আশরাফুর রহমান ভুইঁয়া

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ১৮:২৯ পিএম

মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়াই দেশের মৌল ভিত্তি

সাধারণত ১৩-১৮ বছর বয়সি শিক্ষার্থী, যারা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে তাদেরকে মাধ্যমিক শাখার শিক্ষার্থী বলা হয়। মূলত প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার মধ্যবর্তী স্তরটি হলো মাধ্যমিক শিক্ষা শাখা। এই শাখার শিক্ষার মৌল উদ্দেশ্য হলো নৈতিক ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ, সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্য বোধের বিকাশ সর্বোপরি শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ।

এই বিষয়ে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. জিন পিয়াজেট মত প্রকাশ করেন যে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিমূর্ত চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে’। প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. বেঞ্জামিন ব্লুম মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয়, কার্যকরী এবং আবেগিক বিকাশে সহায়তা করে। এই স্তরের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে, দক্ষতা অর্জন করে এবং তাদের মধ্যে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।’ অর্থাৎ একটা সামষ্টিক জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হলো মাধ্যমিক শিক্ষা। 

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় মাধ্যমিক শিক্ষার ধারণাটি বিকশিত হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে এসে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ দেশে আধুনিক শিক্ষা প্রচলনে মাধ্যমিক শিক্ষাকে পাদপ্রদীপের সম্মুখে নিয়ে আসেন। ইংরেজি শাসনের অবসান ঘটলে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা পাকাপোক্ত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এখন ৯টি বোর্ডের মাধ্যমে এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। 

বর্তমানে দেশে (প্রায়) ২০ হাজার ৯৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে (এর মধ্যে সরকারি মাত্র ৬৮৪টি)। ব্যানবেইসের তথ্য মোতাবেক এসব বিদ্যালয়ে প্রায় এক কোটি এক লাখ ৯০ হাজার পড়ুয়া অধ্যয়ন করছে। যা মোট জনসংখ্যার প্রায় বারো পার্সেন্ট। এ ছাড়া অনানুষ্ঠানিক অনেক প্রতিষ্ঠানে এই পর্যায়ের শিক্ষার্থী সংখ্যাও নগণ্য নয়। বস্তুত মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে দেশের প্রায় ত্রিশ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। মাধ্যমিক শাখায় অধ্যয়নকারী এই শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৃথিবীতে এক অনন্য নজির। 

মাধ্যমিক পর্যায়ের এই শিক্ষার্থীর পরিমাণ কেবল স্কুলের ভর্তির প্রেক্ষাপটে বিবেচিত। কওমি মাদ্রাসার হিসেবে আনলে এই সংখ্যাটা আরও বৃদ্ধি পাবে। একটা পরিবারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আবর্তিত হয় স্কুলগামী এই শিক্ষার্থীদের নিয়ে। সমীক্ষায় দেখা যায়, সংসারের বাজেটের প্রায় পঁয়ত্রিশ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয় পড়াশোনার খরচ জোগান দেওয়ার জন্য। কিন্তু শিক্ষার এই বিনিয়োগ সমতল নয়। উল্লেখ্য, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়ে এসব বিদ্যালয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কী পড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশের এই তরুণ প্রজন্মকে।

২০২৫ সালে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত বইগুলো শ্রেণিভেদে পর্যবেক্ষণ করা যাক: 

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আবশ্যক পাঠ্যবই রয়েছে মোট ৯টি। নবম-দশম শ্রেণির জন্য এই সংখ্যা এগারোটি। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি অবধি শিক্ষাকার্যক্রমকে নিম্নমাধ্যমিক শাখা বলা হয়। এই পর্যন্ত সবার জন্য একই বই। যেমনÑ বাংলা (চারুপাঠ, সপ্তবর্ণা, সাহিত্য কণিকা প্লাস আনন্দ পাঠ), বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি, ইংলিশ (ইএলটি), ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিশন, গণিত, ইসলাম ধর্ম শিক্ষা / হিন্দু ধর্ম শিক্ষা / বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা / খ্রিস্টান ধর্ম শিক্ষা, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। এই বিষয়গুলোর শিখন ফল যাচাইয়ের জন্য বছরে দুইটি পরীক্ষা হয়। এ ছাড়া চারু ও কারুকলা, কৃষি, গার্হস্থ, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, আরবি, সংস্কৃত, পালি, সংগীত ইত্যাকার বিষয়গুলোর যেকোনো একটি বিষয়কে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে নেওয়া যাবে। এই বিষয়টির পরীক্ষা গতানুগতিক ধারায় হবে না। বলা যুক্তিসংগত যে, বিদ্যালয় নির্বিশেষে বিষয়ের এই বিশালতা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এসব বিষয়ের পরীক্ষার নম্বর বিভাজনের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়  : বাংলা : একশ পঞ্চাশ (একশ প্লাস পঞ্চাশ), ইংরেজি : একশ পঞ্চাশ (একশ প্লাস পঞ্চাশ), আইসিটি : পঞ্চাশ, বাকি প্রতি বিষয়ে একশ করে। 

নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষাকার্যক্রম মাধ্যমিক শাখা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পর্যায়ে এসে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় ভাগ হয়ে যায়। বিষয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা (বাংলা প্রথম প্লাস দ্বিতীয়, ইংরেজি প্রথম প্লাস দ্বিতীয়, গণিত, ধর্ম শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কমন বিষয়ের সঙ্গে) পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান/ উচ্চতর গণিত/ কৃষি শিক্ষা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ইত্যাদি অধ্যয়ন করে। ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীরা কমন বিষয়ের সঙ্গে হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, সাধারণ বিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা /গার্হস্থ্য বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে। মানবিক শাখার শিক্ষার্থীগণ কমন সাতটি বিষয়ের সঙ্গে পৌরনীতি ও নাগরিকতা, ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা অর্থনীতি / কৃষি শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করে। এ ছাড়া এই পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়টি নিয়েও পড়াশোনা করতে পারে। নম্বর বিভাজনের ক্ষেত্রে নবম-দশম শ্রেণিতে বাংলা এবং ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র একশ নম্বর করে।

মাধ্যমিক শিক্ষার বিষয় বিভাজনের এই বিশালতা ধারণ করার সক্ষমতা কি আমাদের বিদ্যালয়গুলোর আছে? অজপাড়াগাঁয়ে, পাহাড়ের পাদদেশে, দুর্গম চরাঞ্চলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এই সকল জনপদের শিক্ষার্থীদের জন্যও সংবর্তমান এনসিটিবির পাঠ্যবইগুলো। রাজধানী বা বিভাগীয় শহর বা মফস্বল অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সুযোগ-সুবিধা লাভ করে গ্রাম অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানসমূহ সেই সুবিধা লাভ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। 

বলতে দ্বিধা নেই মাধ্যমিক শাখার উল্লিখিত বিষয় পাঠদানের জন্য জরুরি কাজ হলো প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিষয়-ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা এবং কোনোভাবেই যেন শিক্ষক শূন্যতা দেখা না দেয় সেই দিকে লক্ষ রাখা। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা বাংলাদেশের মৌল ভিত্তি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে এই শাখার শিক্ষাব্যবস্থাকে অষ্টপ্রহর নজরে রাখা সংশ্লিষ্ট সবার পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।

  • গবেষক ও শিক্ষাচিন্তক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা