× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জি-৭ সম্মেলন

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েই গেল

নিরঞ্জন রায়

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:০৪ পিএম

নিরঞ্জন রায়

নিরঞ্জন রায়

আমাদের ছোটবেলায় একটা কথা বেশ বহুল প্রচলিত ছিল এবং আমার যতটুকু মনে পড়ে, তাতে আমাদের পাঠ্যসূচিতে বাগধারা হিসেবে কথাটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কথাটা হচ্ছে- ‘আদার বেপারী হয়ে জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কী ?’ আদা খুবই সাধারণ পণ্য, যা স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন হয় এবং অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাই আদার মতো সাধারণ পণ্য ক্রয়বিক্রয় করে। এই পণ্য শিল্পজাত সামগ্রীর মতো অন্য দেশ থেকে আমদানি করে আনার প্রয়োজন ছিল না। তাই যারা আদার ব্যবসা করত, তাদের জাহাজ কবে আসবে না আসবে, সেই খবর রাখার প্রয়োজন ছিল না। অর্থাৎ এই প্রবাদ-প্রবচনের মূলকথা হচ্ছে ছোট বা সাধারণ মানুষ হয়ে বড় বা অসাধারণ বিষয়ের খবর রাখার প্রয়োজন নেই। আমার এই লেখাটি পড়ে অনেক বিদগ্ধ পাঠক সে রকমই ভাবতে পারেন যে- আদার বেপারী হয়ে জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কী? 

এখন অবশ্য আগের যুগ নেই। বিশ্বায়নের যুগে সমগ্র পৃথিবী এখন এক বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। তাই এখন সবাইকে সবরকম খবরাখবর রাখতে হয়। একজন আদার বেপারীকেও যেমন জাহাজের খবর রাখতে হয়, তেমনি এখন শিল্পপতিকেও বিবেচনায় নিতে হয় গ্রামে কোন পণ্যের উৎপাদনের অবস্থা কেমন। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী মারাত্মক এক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। আমেরিকায় সুদের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশে ডলার সংকট দেখা দেয়। একইভাবে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা বা ভারতের কৃষক আন্দোলনের কারণে উন্নত বিশ্বে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ কারণেই বিশ্বের যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা হয় সেখানেই সবার দৃষ্টি চলে যায়। সে রকমই এবার বিশ্বের দৃষ্টি ছিল সদ্য অনুষ্ঠিত গ্রুপ-৭ সম্মেলনের দিকে। 

গত ১৬ এবং ১৭ জুন কানাডায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রুপ-৭-এর সম্মেলন। গ্রুপ-৭ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শিল্পোন্নত এবং ধনী দেশগুলোর একটি সংস্থা, যার সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি এবং জাপান। এই সংস্থাকে সংক্ষেপে জি-৭ নামে আখ্যায়িত করা হয় এবং এই সংক্ষিপ্ত নেমেই এটি বেশি পরিচিত। একসময় রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির কারণে এটি জি-৮ গ্রুপে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে নিজেদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার কারণে রাশিয়াকে আর এই গ্রুপের সম্মেলনে অংশ নিতে দেওয়া হয় না। ফলে এই সংস্থা জি-৭ হিসেবেই রয়ে গেছে। জি-৭ সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য বৃহৎ অর্থনীতির দেশও অংশ নিয়ে থাকে সংস্থার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে। বর্তমান সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির আমন্ত্রণে ভারত, মেক্সিকো এবং অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ অংশ নিয়েছিল। 

এবার জি-৭ সম্মেলন এমন একসময় অনুষ্ঠিত হচ্ছিল যখন বিশ্বে এক চরম অস্থিরতা এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই উত্তেজনা যেমন আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমনি আছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সমাপ্তি টানার আগে ইসরায়েল-ইরান পাল্টাপাল্টি মিসাইল হামলা শুরু হয়ে গেছে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যকার হামলা এবং পাল্টা হামলা এক ধরনের সম্মুখযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের এই নতুন মাত্রা যেকোনো মুহূর্তে সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এদিকে ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে জোর দিয়ে বলে আসছিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে এক দিনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হবেন। তিনি অবশ্য চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যুদ্ধ অব্যাহত আছে এবং রাশিয়া মাঝেমধ্যেই আক্রমণ তীব্র করছে। 

রাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও সবার উদ্বেগের বিষয় হয়ে আছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে বিশ্বব্যাপী যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তার সন্তোষজনক সুরাহা এখনও হয়নি। ট্রাম্প নির্বিচারে যেসব দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তা আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত আছে। ট্রাম্প প্রশাসন এবং অন্যান্য বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশগুলোর প্রত্যাশা ছিল যে এই ৯০ দিন যুদ্ধ বিরতির মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সন্তোষজনক সমাধান হবে এবং বিশ্ববাণিজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু সে রকম কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্বল্প শুল্কের মাধ্যমে বাণিজ্য করার একটা সমঝোতা হয়েছে। আর যে চীনের বিরুদ্ধে উচ্চ শুল্ক হার ধার্যের হুমকি দিয়ে এই বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা, সেই চীনের সঙ্গেই দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে। এর বাইরে আমেরিকার দীর্ঘদিনের মিত্র এবং বৃহৎ অর্থনীতির দেশের সঙ্গে সে রকম কোনো সমঝোতা হয়নি। ফলে বাণিজ্য যুদ্ধের যে দামামা এবং বিশ্ববাণিজ্যে যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, তা রয়েই গেছে। 

এ রকম একটি সংকটাপন্ন অবস্থায় যখন জি-৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে উপস্থিত ছিলেন, তখন সেই সম্মেলন থেকে ভালো কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হবেÑ এমনটাই সবাই প্রত্যাশা করছিলেন। বিশেষ করে ট্রাম্পের ঘোষিত উচ্চ শুল্ক হারের কারণে সৃষ্ট বাণিজ্য যুদ্ধ নিরসনে এবং মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনা, বিশেষ করে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সে রকম কোনোকিছুই এই সম্মেলনে হয়নি। শুল্ক হার নিয়ে আলোচনা সেভাবে হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের তরফ থেকে এই সমস্যা সমাধানের কোনোরকম উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ‘হবে, হচ্ছে’ ধরনের কথার কৌশল অবলম্বন করে বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বন্ধে সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে গ্রুপ-৭-এর সদস্য রাষ্ট্রদের মধ্যে কোনোরকম ঐকমত্য দেখা যায়নি। ফ্রান্সসহ অন্য কয়েকটি দেশ চেষ্টা করেছে এই যুদ্ধ বন্ধে একটা কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে অনড় থাকায় কোনোরকম অগ্রগতি হয়নি। এমনকি ফ্রান্সের ভূমিকা যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে হলেও সে রকম সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব ছিল বলে মনে হয়নি। একদিকে ইসরায়েলকে সমর্থন করেছে, অন্যদিকে ইরানকে সংযত হয়ে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এ রকম দ্বৈত অবস্থান যে যুদ্ধ বন্ধে সে রকম কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অপরপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো সরাসরি ইসরায়েলকে সমর্থন করে বলেই ফেললেন যে, ইসরায়েলের নিজেদের রক্ষা করার সকল অধিকার আছে। 

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্থা হচ্ছে এই জি-৭, যেখানে আছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এসব দেশই বিশ্বকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়। বিশ্বে আজ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অবস্থা এমন জটিল আকার ধারণ করছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বিশ্ব খুব কমই এ রকম সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। অথচ এই চরম সংকট উত্তরণে জি-৭ কোনোরকম ভূমিকা নিতে পারল না, যা অত্যন্ত হতাশার এবং পরিতাপের। আগামীতে বিশ্ব-অর্থনীতি কোনদিকে মোড় নেয়, তা সংশ্লিষ্ট সবার উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। যদি ইসরায়েল-ইরান হামলা-পাল্টা হামলা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিয়ে দীর্ঘ হয় এবং সেই সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ অব্যাহত থাকে, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা এবং মহামন্দার কবলে পড়ে যেতে পারে। 

এবারের জি-৭ সম্মেলন কোনোরকম ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও, আয়োজক দেশ হিসেবে কানাডা কিছুটা হলেও সুবিধা নিতে পেরেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সময় ভারতের সঙ্গে কানাডার যে তিক্ত সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর করে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে মার্ক কার্নি এই সম্মেলনকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। মূল সম্মেলনের পাশে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক আলোচনায় মিলিত হন, যেখানে উভয় নেতাই দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক কূটনৈতিক কার্যক্রম চালু রাখার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। মার্ক কার্নি একজন হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট অর্থনীতিবিদ এবং ছিলেন বিশ্বের দুটো বৃহৎ অর্থনীতির দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান। তিনি ভালো করেই জানেন যে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক হার থেকে কানাডার অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে তাকে উদীয়মান অর্থনীতি বা এমারজিং মার্কেটের দিকে নজর দিতে হবে। আর এমারজিং মার্কেটের বড় একটি অংশ হচ্ছে ভারত, যা মূলত একশ কোটি ভোক্তার বাজার। মার্ক কার্নি এই বাজার ধরার প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু করতে পেরেছেন এই জি-৭ সম্মেলনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে।

এই সম্মেলন থেকে কানাডার আরও একটি প্রাপ্তি আছে, তা হচ্ছে ট্রাম্পের কাছ থেকে সম্মানজনক একটি পরিসমাপ্তি। গত জি-৭ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অসৎ এবং দুর্বল (দিজঅনেস্ট অ্যান্ড উইক) নেতা বলে উল্লেখ করেছিলেন। এবারের সম্মেলনে ট্রাম্প কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে সে রকম অসম্মান করেননি, বরং যথেষ্ট সম্মান দিয়েই সম্মেলন শেষ করেছেন, যা কানাডার জন্য এই মুহূর্তে একটি বড় প্রাপ্তিই বলা যেতে পারে। 

যদিও বিশ্বনেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমনে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধে ভালো একটি সিদ্ধান্ত আশা করছিলেন, কিন্তু এই সম্মেলন থেকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি। উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল-ইরানের মধ্যকার যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে সম্মেলনে খ্যান্ত দিয়ে ফিরে গেছেন। অন্যরা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সম্মেলনে উপস্থিত থেকে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে গেলেও হতাশ হয়েই ফিরেছেন। ফলে এবারের জি-৭ সম্মেলনের ফলাফল এক কথায় হতাশাজনক।

  • সার্টিফাইড অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা 
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা