× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাহাড়ধসের ঝুঁকি

প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫ ১৬:২৬ পিএম

প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পদক্ষেপ নিন

বর্ষাকালে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঘটনা এদেশে নতুন নয়। অতীতে চট্টগ্রাম, পার্বত্য অঞ্চলসমূহ ও সিলেটে একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় বিপুল প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনার পর নানা পদক্ষেপ এবং উদ্যোগের কথা বলা হলেও স্থানীয় ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য ও পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকির ‘বসতি ব্যবসা’ বন্ধ হয়নি; বন্ধ হয়নি পাহাড় ও টিলা কাটা, থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসও। এবারও অতিভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

১৮ জুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকির বসতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ চট্টগ্রামে মৃত্যুঝুঁকি সত্ত্বেও বন্ধ হয় না ‘বসতি ব্যবসা’। এভাবে যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রাম মহানগরীর ২৬টি পাহাড়ে কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করে আসছে। অথচ প্রশাসনের নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর এসব পাহাড়ের মধ্যে ১৬টি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার এবং বাকি দশটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। এর মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড় রয়েছে সাতটি। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের রয়েছে দুটি, গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর একটি, আমিন জুট মিলের একটি, ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় রয়েছে তিনটি, এপির একটি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন রয়েছে ১১টি পাহাড়। জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এই পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার বসবাস করে আসছে। প্রশাসন ঝুঁকি এড়াতে সময় সময় পাহাড় থেকে এদের সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়। 

একই দিন আরও একটি প্রতিবেদনে রাঙামাটির জেলা প্রশাসনের তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, জেলার ১০ উপজেলা ও পৌরসভাসহ প্রায় ১০০টি পাহাড়ি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় পাহাড়ধসের উচ্চঝুঁকি থাকলেও বন্ধ হয়নি বসতি স্থাপন। জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী, রূপনগর, পুরাতন পুলিশ লাইনস, যুব উন্নয়ন এলাকা, রাঙাপানি এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় প্রায় ৫ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। জেলা ও উপজেলা মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা টাকার বিনিময়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতি করার সুযোগ করে দিচ্ছে। বহু পাহাড়ি এলাকায় কাঁচা ও আধা পাকা ঘর, বহুতল ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে তারা। সেখানে যারা বসতি করছে, তারা সকলেই নিম্ন আয়ের মানুষ। কম ভাড়ায় ঝুঁকি নিয়েই তারা সেখানে বাস করছে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন উচ্ছেদ করলেও ভূমিদস্যু চক্রের মাধ্যমে আবারও সেখানে বসতি গড়ে ওঠে। 

পাহাড়ধসে প্রাণহানি ও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালে। ওই বছর পাহাড়ধসে নারী, শিশুসহ মারা যায় ১২৭ জন। সে বছর রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি অংশ ধসে বেশ কয়েকদিন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ধসে মৃত্যু হয় চার পরিবারের ১২ জনের। ২০১৩ সালে মতিঝর্ণায় দেয়ালধসে মারা যায় দুজন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে মারা যায় তিনজন, একই বছর ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় মা-মেয়ের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২ ও ১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় পাহাড়ধসে প্রাণ হারায় ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর নগরীর আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ কলোনিতে মারা যায় চারজন। ২০১৯ সালে কুসুমবাগ এলাকায় মৃত্যু হয় এক শিশুর। ২০২২ সালের ১৮ জুন মৃত্যু হয় চারজনের। পরিতাপের বিষয়, যখনই এই ধরনের দুর্যোগ নেমে আসে তখনই সেই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় এবং বহু পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয় কিন্তু একসময় সব পরিকল্পনা চাপা পড়ে যায়। এভাবেই সংকটটি শেষ না হয়ে আরও বৃহৎ আকার ধারণ করে। 

পাহাড় কাটা, পাহাড় কেটে অবৈধ বাড়িঘর নির্মাণ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি ১৯৯৫-এর ১৫ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে আর্থিক দণ্ডসহ শাস্তির বিধান রয়েছে। এখানেও আইন আছে, প্রয়োগ নেই। আমরা মনে করি, পাহাড়ে বসতি স্থাপন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ধস ঠেকাতে নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। ধসের আশঙ্কা রয়েছে এমন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ নিরুপায় হয়ে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করে। তাই সরকারিভাবে তাদের আবাসন সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষকে মৃত্যুঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া বন্ধ করতে হবে। পাহাড়ধস রোধ করতে পাহাড়ে গাছপালা লাগিয়ে সবুজ আচ্ছাদনে ছেয়ে দিতে হবে। আমরা জানি, ২০০৭ সালের মর্মান্তিক পাহাড়ধসের ঘটনার পর গঠিত কমিটি পাহাড়ধসের ২৮টি কারণ নির্ধারণসহ ৩৬ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে, যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রয়োজনে আলাদা সেল গঠন করে এসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, জনস্বার্থে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা