× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিবেশ

বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস : সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ

বিধান চন্দ্র দাস

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫ ১৫:৩২ পিএম

বিধান চন্দ্র দাস

বিধান চন্দ্র দাস

কেমব্রিজ অ্যাডভান্সড লার্নার্স ডিকশনারি অনুযায়ী ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ বলতে ‘প্রাকৃতিকভাবে এবং ক্ষতিকারক নয় এমনভাবে পচে যেতে সক্ষম’ বিষয়কে বোঝানো হয়েছে। সেই বিবেচনায় ‘বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস’ হচ্ছে সেই ধরনের প্লাস্টিকস, যা ক্ষতি করা ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে পচে যায় কিংবা বিনষ্ট হয়। ‘রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি’ থেকে প্রকাশিত (২০২০) এক শ্বেতপত্রে লেখা হয়েছে : ‘একটি প্লাস্টিকÑ জীব ও জৈব অণুর (যেমন এনজাইম) দ্বারা দ্রুত ক্ষয়ের মাধ্যমে ছোট অণুতে পরিণত হয়ে প্রাকৃতিক জীব দ্বারা বিপাকিত হলে তাকে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক বলা হয়। কোনো প্রকার দূষণ ও ক্ষতিকর অভিঘাত সৃষ্টি করা ছাড়াই বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ভেঙে প্রাকৃতিক উপাদানে রূপান্তরিত হয়।’ বর্তমানে প্লাস্টিক সমস্যা গোটা পৃথিবীতে এমন ভয়াবহ বহুমুখী সংকট তৈরি করেছে যে বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে সচেতন মহল সবাই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, প্রচলিত প্লাস্টিকস বাদ দিয়ে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস ব্যবহার করলে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। আবার অনেকে বলছেন যে, পরিবেশবান্ধব বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসেরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

গত শতকের বিশের দশকে ফরাসি বিজ্ঞানী মরিস লেমোয়ান ব্যাকটেরিয়ার একটি প্রজাতি থেকে প্রথম বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস (পলি-৩-হাইড্রক্সিবিউটিরেট : পিএইচবি) তৈরি করেন। কিন্তু সেই সময় এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। পঞ্চাশের দশকে যুক্তরাষ্ট্র (১৯৫৭) এবং যুক্তরাজ্যের (১৯৫৮) বিজ্ঞানীরাও ব্যাকটেরিয়া থেকে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস (পলিহাইড্রক্সিবিউটিরেট : পিএইচবি) তৈরি করেছিলেন। এর পরেও বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস তৈরি সংক্রান্ত গবেষণা খুব একটা অগ্রসর হয়নি। সত্তর দশকে বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস তৈরির গবেষণা/প্রচেষ্টা নতুন করে শুরু হয়। কারণ সেই সময় পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে প্লাস্টিকস তৈরিতে শুধু জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হতো। কিন্তু আশির দশকে জীবাশ্ম তেলের দাম হ্রাস পেলে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস তৈরির গবেষণা/প্রচেষ্টা অনেকটা থেমে যায়। 

বিগত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশকে প্রচলিত প্লাস্টিকসের পরিবেশগত নেতিবাচক দিকগুলো বিস্তারিতভাবে উন্মোচন ও প্রচার হওয়ার ফলে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস উৎপাদন সংক্রান্ত গবেষণা ও প্রচেষ্টা নতুন মাত্রা লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই প্রকার বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস যথা : পিএইচএ (পলিহাইড্রক্সিঅ্যালকানোয়েট : নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে এবং ট্রান্সজেনিক অর্থাৎ সংযোজিত জিনযুক্ত উদ্ভিদ থেকে) এবং পলিল্যাক্টাইড (পিএলএ : নবায়নযোগ্য উৎস যেমনÑ ভুট্টা, আলু, আখ, কাসাভা ইত্যাদি থেকে) উৎপাদন প্রক্রিয়া সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত হয়। পরবর্তীতে পাট ও তুলাভিত্তিক বায়োপলিমার যৌগ (সেলুলোজ) থেকেও বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস তৈরি করা হয়। এ ছাড়া পেট্রোকেমিক্যালস থেকেও বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস উৎপাদন করা হয়ে থাকে। যেমন : পলিভাইনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ : প্রথম তৈরি ১৯২৪, বাণিজ্যিক উৎপাদন ১৯৫০), পলিক্যাপ্রোল্যাকটোন (পিসিএল : প্রথম তৈরি ১৯৩০ এবং ১৯৯০ দশকে জনপ্রিয়), পলিবিউটিলিন সাক্সিনেট (পিবিএস : প্রথম তৈরি ১৯৩১, বাণিজ্যিক উৎপাদন ১৯৯১) ইত্যাদি। যেহেতু বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস পেট্রোকেমিক্যালস থেকেও তৈরি করা হয়, সেই কারণে কেবল জীব (প্রাণী/উদ্ভিদ/অনুজীব) উৎস থেকে প্রস্তুতকৃত প্লাস্টিককে ‘বায়োপ্লাস্টিক’ বলা হয়। অর্থাৎ সব বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস বায়োপ্লাস্টিকস নয়। সাধারণত উপরোক্ত এই ছয় প্রকার বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস বাজারে পাওয়া যায়। তবে অক্সোডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস নামে আরও একপ্রকার প্লাস্টিকস বাজারে পাওয়া যায় (বর্তমানে অনেক দেশে এটি নিষিদ্ধ) যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন, সূর্যের আলো ও তাপের প্রভাবে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় অর্থাৎ মাইক্রোপ্লাস্টিকস তৈরি হয়। প্রচলিত প্লাস্টিক তৈরির উপাদান (পিই=পলিইথিলিন, পিপি=পলিপ্রোপাইলিন, পিএস=পলিস্টাইরিন)-এর সঙ্গে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক (ফেরিক স্টিয়ারেট, ম্যাঙ্গানিজ স্টিয়ারেট ইত্যাদি) মিশিয়ে অক্সোডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস তৈরি করা হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির ওয়েবসাইটে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসকে প্রচলিত প্লাস্টিকসের সুস্থায়ী বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসের সুবিধাগুলোকে কয়েকটি উপ-শিরোনামে ভাগ করা যায়। এগুলো হচ্ছে : ১. পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস : বিশেষ ব্যবস্থা (কম্পোস্টিং অবকাঠামো) গ্রহণ করলে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস থেকে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক অভিঘাত কম হয়। এর ফলে ল্যান্ডফিল, সমুদ্র কিংবা প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি দূষণ ঘটার সুযোগ হ্রাস পায়। ২. কার্বন পদভার (ফুটপ্রিন্ট) হ্রাস : অনেক বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস নবায়নযোগ্য উৎস (ভুট্টা, আখ, আল, পাট, তুলা ইত্যাদি) থেকে তৈরি করা হয়। এর ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমে যায় এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস পায়। ৩. বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হ্রাস : বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস ল্যান্ডফিলে না নিয়ে বিশেষ কম্পোস্টিং প্লান্টে নেওয়ার ফলে সেগুলো থেকে বন্যপ্রাণীর (খাওয়া বা আটকানো) ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়। ৪. উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি : কিছু কিছু বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস (যেমন : পিএলএ) কম্পোস্টিংয়ের জন্য বিশেষায়িত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন হওয়ায় সেগুলো তৈরি করা হয়। ৫. সুস্থায়ী কৃষির জন্য সহায়ক : কৃষিতে ব্যবহৃত বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক মালচিং মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে পচে যায়। এর ফলে প্রচলিত প্লাস্টিক মালচিং অপসারণজনিত ঝামেলা দূর হয় এবং কৃষি ক্ষেত্রে প্লাস্টিক দূষণ হ্রাস পায়। ৬. প্লাস্টিকঘটিত জলজ দূষণ হ্রাস : বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস দ্রত ভেঙে যাওয়ার ফলে (বিশেষ ব্যবস্থাপনায়) এগুলো নদী-সাগর-মহাসাগরে জমা হতে পারে না এবং এগুলো থেকে দূষণ (মাইক্রোপ্লাস্টিকসহ) তৈরির সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর জন্য বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিককে প্রচলিত প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জার্মান অনলাইন প্লাটফরম ‘স্টাটিস্টা’ অনুসারে বর্তমানে প্রচলিত প্লাস্টিকসের এক শতাংশ তৈরি হচ্ছে বায়োপ্লাস্টিক ও বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস। এর প্রায় অর্ধেক পরিমাণ তৈরি হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোতে। পৃথিবীতে ২০২৩ সালে বায়োপ্লাস্টিক ও বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসÑ এই দুই প্রকার প্লাস্টিকসের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল বিশ লাখ মেট্রিক টনস। ‘স্টাটিস্টা’ বলছে, আগামী ২০২৯ সালে এই ক্ষমতা হবে প্রায় ৫৭ লাখ মেট্রিক টনস। তবে ওইসিডি (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বলছে (২০২২) ‘যে দ্রুত গতিতে (২০১৩ থেকে ২০১৭) বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসের বিকাশ ঘটছিল, তা কিছুটা থমকে গেছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিকভাবে এটি শতভাগ পচে নাÑ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে।’

বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। প্রথমত, সব বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস সত্যিই কি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গিয়ে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এমন সব নির্দোষ উপাদানে রূপান্তরিত হয়? এর উত্তর হচ্ছে, হয় না। বিশেষ করে পিএলএ এবং পিসিএলসহ আরও কিছু বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসÑ বিশেষায়িত কম্পোস্টিং (ইন্ডাস্ট্রিয়াল) ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গিয়ে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এমন সব নির্দোষ উপাদানে রূপান্তরিত হয় না। এসব থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিকস/ন্যানোপ্লাস্টিকস সৃষ্টি হয়ে দূষণ ঘটাতে পারে। দ্বিতীয়ত, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস তৈরিতে এমন কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় কি নাÑ যা প্রচলিত প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত কোনো কোনো রাসায়নিকের মতো বিষাক্ত? যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়ক নিউজ ওয়েব পোর্টাল, ‘মঙ্গাবে’ গত ২২ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে যে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস দ্বারাও প্রচলিত প্লাস্টিকসের মতো বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস শক্ত, কমনীয়, পানিরোধী, রঙিন ইত্যাদি করার জন্য যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়Ñ সেসব থেকে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তৃতীয়ত, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস এবং প্রচলিত প্লাস্টিকস ব্যবহারের পর তা একত্রে মিশে গেলে ল্যান্ডফিল কিংবা বিশেষায়িত কম্পোস্টিংয়ে (ইন্ডাস্ট্রিয়াল) কোনো সমস্যা হবে কি না? এর উত্তর হচ্ছেÑ সমস্যা হবে। ল্যান্ডফিলে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস ঠিকমতো না পচার কারণে (পূর্ব নির্ধারিত তাপ, আর্দ্রতা, অনুজীবের অভাবে) সেখানে মিথেন গ্যাসের জন্ম হবে। বিশেষায়িত কম্পোস্টিং ইউনিটে কম্পোস্টিংয়ের মান ভালো হবে না এবং ইউনিট পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেবে। চতুর্থত, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস এবং প্রচলিত প্লাস্টিকস মিশে গেলে তাদের রিসাইকেল করতেও সমস্যা হবে। পঞ্চমত, প্রচলিত প্লাস্টিকের তুলনায় বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসের দাম দ্বিগুণ কিংবা তার থেকেও বেশি। এই প্রশ্নগুলো নিঃসন্দেহে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি আলোচিতÑ সরকারি উদ্যোগে পাটের সেলুলোজ দিয়ে তৈরি সোনালি ব্যাগ। বেসরকারি উদ্যোগেÑ পাট ছাড়াও তুলা সেলুলোজ, ভুট্টা কিংবা অন্য উদ্ভিদ স্টার্চ থেকেও ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এর কোনো কোনোটি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) থেকে প্রাকৃতিকভাবে পচনশীলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এসব ব্যাগও পরিবেশবান্ধব নয় বলে কেউ কেউ মতামত দিয়েছেন। বিশেষ করে এগুলো শতভাগ পচে না এবং এগুলোতেও ক্ষতিকর রাসায়নিক আছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ কথা সত্য যে, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকস/বায়োপ্লাস্টিকসের কিছু সীমাবদ্ধতা (পূর্বোল্লিখিত) রয়েছে। কিন্তু ওইসিডি তাদের ২০২২ সালের প্রকাশনায় বলছে, ‘বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকসের কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এর সুবিধার দিকও আছে (যেমন : কম্পোস্ট তৈরি, জীবাশ্ম জ্বালানি ইস্যু)।’ কাজেই বিদেশে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এগুলোর উৎপাদন থেকে শুরু করে তার পচন পর্যন্ত সন্তোষজনক পরিবেশবান্ধব উপায়ে সম্পন্ন হচ্ছে, বিষক্রিয়া ঘটছে না এবং প্রচলিত প্লাস্টিকস থেকে এগুলো পৃথক করা সম্ভব হচ্ছেÑ এগুলো পর্যালোচনা করা ও সেই মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউতে (২০২৫) সারা বাংলাদেশে মাথাপিছু ৩.৫ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় বলে দেখানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব (২০২০) অনুযায়ী বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে মানুষ মাথাপিছু ৯ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করেন। মাথাপিছু এই পরিমাণ প্লাস্টিকস ব্যবহার অন্য অনেক দেশের তুলনায় (যুক্তরাষ্ট্র ৬৯ কেজি এবং হংকং ১৬৭ কেজি) খুব কম মনে হলেও সেই সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অব্যবস্থাপিত বর্জ্য সূচক (মিসম্যানেজড ওয়েস্ট ইনডেক্স) অনেক বেশি। যেমন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং হংকংয়ের অব্যবস্থাপিত বর্জ্য সূচক যথাক্রমে ৮৩.২%, ৫.১% এবং ৮.৪%। এ ধরনের বাস্তবতায়, বাংলাদেশে বায়োডিগ্রেডেবল বায়োপ্লাস্টিকসের উৎপাদন, ব্যবহার এবং তা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

  • অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা